কোরাবানি ঈদের ঠিক আগে আগে নিউ
ইয়র্কের পাবলিক সভায় লতিফ সিদ্দিকীর হজ,
তাবলিগ ইত্যাদি সম্পর্কে ধর্মবিদ্বেষী,
হেয় করা মন্তব্যের সামাজিক রাজনৈতিক
প্রতিক্রিয়ার প্রথম পর্যায় বলা চলে শেষ
হয়েছে। ঈদের পর দ্বিতীয় পর্যায় এখন
শুরুর অপেক্ষায়। তবে সামাজিক মাধ্যমসহ সব
ধরনের মিডিয়া আর রাজনৈতিক পাড়ায় এর
প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
সিদ্দিকী এখনো পলাতক বা গরহাজির। বড়
ধরনের রাজনৈতিক
ক্ষতি এড়াতে তাকে মন্ত্রিসভা ও দলের
প্রেসিডিয়াম পদ
থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দলের
প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে না বলে ইঙ্গিত
দেয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলো একান্তই
রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আইনি দিক নয়।
হাসিনার প্রতিশ্রুত অ্যাকশন কী হয় তা দেখার
অপেক্ষায় সারা দেশ ক্ষোভ অপমান
মনে চেপে ধৈর্য দেখাচ্ছে। এরকম যখন
পরিস্থিতি, ঈদের বন্ধে ঢাকার এক ড্রয়িং রুম
আড্ডায় উঠে আসা মন্তব্যটি ছিল বেশ
প্রতীকী।
সামগ্রিকভাবে বললে আসরের
সমাগমে যারা ছিলেন, তারা মডার্ন সেকুলার
আকাক্সক্ষী হলেও কেউ
ধর্মবিদ্বেষী নন। বাড়ির কর্তার
করা পর্যবেক্ষণমূলক মন্তব্যটি ছিল এ রকম
‘বাংলাদেশের জনগণ এখন রাজনৈতিক ও
সামাজিকভাবে বিভক্ত। কিন্তু এর ভেতরেও
বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার এক সাধারণ ঐকমত্য
দেখা গেল। প্রথমবার ঘটেছিল ’৭১
সালে আর দ্বিতীয়বার লতিফ সিদ্দিকীর
মন্তব্যের বিরুদ্ধে। এখন শেখ
হাসিনা কি জনগণের ঐকমত্যের
সাথে থাকবেন না ছলচাতুরি করবেন?’
কথা সত্য, সিদ্দিকী ইস্যুতে এক সাধারণ
ঐকমত্য দেখা গেছে, রাজনৈতিক
কিংবা ব্যক্তি মানসের অবস্থানের দিক
থেকে ইসলাম বা সেকুলারিজম
যে যে পথেরই হোক সবাই
মনে করেছেন মন্ত্রী সিদ্দিকী অপরাধ
করেছেন, তার মন্তব্য
চরমভাবে অগ্রহণযোগ্য।
অবস্থাটা বোঝা যায়, পাবলিক
মন্তব্যে বাঁকা কথা বা খোঁটা দেয়ায় ওস্তাদ
প্রধানমন্ত্রী নিজেসহ তার দলকেও
স্বীকার
করতে হচ্ছে সিদ্দিকী অপরাধী। এমন
অবস্থায় কেউ সিদ্দিকীর দায়িত্ব নেবেন
না। বলছেন, ‘উনি নিজেই বেকায়দায়
পড়েছেন,সরকার নয়। তার খেসারত
ওনাকেই দিতে হবে।’
সিদ্দিকীর মন্তব্যের সময়টা ছিল সারা দুনিয়ার
ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষ যখন হজের
ময়দানে সমবেত; একালে স্যাটেলাইট ও
টিভির সহজলভ্যতার
কারণে ঘরে বসে থাকা মানুষও ওই
সমবেতদের সাথে একাত্ম ও সম্পর্কিত
অনুভব করে। কোরবানি ঈদের আবহের
সময় যখন গোটা সমাজ
মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সরকারের
কয়েকজন মন্ত্রী ও দেশের রাষ্ট্রপতিও
যেখানে হজে গেছেন অর্থাৎ এই
সামাজিক মানসিক প্রস্তুতির সাথে প্রত্যক্ষ সায়
দিচ্ছেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও
বেশি সম্পর্কিত অনুভবের মধ্যে ছিলেন
সেই পরিস্থিতিতে সরকারেরই আর এক
মন্ত্রী সিদ্দিকী করেন এমন মন্তব্য।
এটা সামাজিক মানসের চরম উল্টাগান শুধু নয়
বরং সাধারণ মানুষকে অপমান ও চরম বেয়াদবি। এ
ছাড়া দেশের আইনে যা-ই থাক বা না থাক,
জেনেভার জাতিসঙ্ঘ
অফিসে সর্বসম্মতিক্রমে সর্বশেষ
গৃহীত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার
হিসেবে স্বীকৃত বিষয় অন্যের ধর্ম
নিয়ে ব্যঙ্গ করা,
অবমাননা করা ঘটনা হিসেবেও এটা অপরাধ।
যোগাযোগের দিক থেকে প্রত্যন্ত
উত্তরাঞ্চলের এক গ্রামে ঈদের জামাতের
খোতবায় মওলানা এই কথা খুবই সরল ও
নরমভাবে বর্ণনা করছিলেন। তিনি ইঙ্গিত
করছিলেন, আমাদের সমাজের গোড়ার ভিত
হিসেবে যেসব ধারণা আছে, এমন মান্যতা,
বিশ্বাস ও ধর্ম হিসেবে যা আছে তার
মারাত্মক ব্যত্যয় ঘটেছে এই মন্তব্যে।
তিনি সরকারের স্ববিরোধ
ধরিয়ে দিতে বলছিলেন, সরকারের
কয়েকজন মন্ত্রী ও দেশের রাষ্ট্রপতিও
যখন রাষ্ট্রীয় খরচে হজেই আছেন ঠিক
তখন অন্য এক মন্ত্রী আমাদের দেশ
সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মীয় ধারণার বিশ্বাস
নিয়ে অযাচিত কথা বলছেন, ইসলামের
গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হজের
প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাচাল প্রশ্ন
তুলছেন।
ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম মানা না মানা ভিন্ন বিষয়।
ব্যক্তিবিশেষের অবস্থান যা-ই হোক,
কোনো জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র যেমনই
হোক সে রাষ্ট্রে তার নিজ ধর্মের প্রভাব
বাইরে যার প্রকাশ মানুষের নাম, মানসিক গঠন,
পরিবার ও সমাজের গাঠনিক তন্তুএই
জনগোষ্ঠীর তৈরি রাষ্ট্রেও এর প্রভাব
থাকে। আর সংস্কৃতিতে এর প্রভাব সব কিছুর
ভিত্তিমূল হিসেবে অন্তর্নিহিত থাকে।
বিশেষত আমাদের রাজনৈতিক
জনগোষ্ঠী হিসেবে গোড়াপত্তনের
সময় থেকেই ইসলাম ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রেখেছিল বলে ভিত্তিমূলক
জায়গা নেয়াটা এখনো যথেষ্ট তাজা ও
শক্তিশালী। ফলে সিদ্দিকীর ইসলামের
গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হজের
প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাচাল প্রশ্ন
তোলা এ ঘটনার ব্যাপক প্রতিক্রিয়াকে সমাজ-
মানসের ভিত্তিমূলকে নাড়ানোর
অপচেষ্টা করতে গিয়ে চড়-থাপ্পর খাওয়ার
মতোই ব্যাপার ঘটেছে। ব্যাপক সামাজিক
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াটা আবার
উল্টো করে বললে, প্রমাণ
করে যে ধর্মীয় বিশ্বাস
এখনো আমাদের সমাজের ভিত্তিমূলে কত
শক্তভাবে কাজ করে।
সিদ্দিকীর বক্তব্যের সারকথা হলো,
মানুষের সব
চাহিদা আকাক্সক্ষা তৎপরতা ক্রিয়াকলাপের অর্থ
বা তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যাবে একমাত্র এর
বৈষয়িক স্বার্থের মধ্যে। সিদ্দিকীর বক্তব্য
যেসব ভ্রান্ত আগাম অনুমানের ওপর
দাঁড়িয়ে আছে তা হলো, যেন মানুষ শুধু
জীব-জীবন বহন করা মানুষ। যেন মানুষ
মানেই বিষয়-আশয়ের একটা ডিব্বা মাত্র।
যেন মানুষের স্পিরিচুয়াল
চাহিদা আকাক্সক্ষা বলে কিছু নেই।
স্পিরিচুয়ালিটি মানে দূরের ধর্মকর্ম
অথবা স্পর্শ করা যায় না এমন কিছু নয়।
সন্তানের প্রতি মায়া, একটা টান কেন অনুভব
করি? আবার শুধু নিজের সন্তান বা আপন পরিজন
বলে নয়, অপর মানুষের
সাথে প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেমন
সত্য ঠিক তেমনি সত্য হলো এর
সাথে সাথে অপরের সাথে মিলিত হওয়ার
কোথায় যেন একটা টান আকুল অনুভবও
আমরা করি। কেন করি? এগুলোকে মানুষের
বৈষয়িক স্বার্থের
লক্ষ্যে তৎপরতা বলে কোনো ব্যাখ্যা মিলবে না।
ইসলামে হজ তেমনই এক একত্মবোধ,
সমবেত মানুষের মিলিত হওয়ার এক ইঙ্গিত
দেখায়। মানুষ একা নয়, একক মানুষ
বলে দুনিয়াতে কিছু নেই। মানুষ সব সময়
সমবেত ও সামাজিক, এমনকি বিশ্ব-সামাজিক
বা গ্লোবাল। হজ মানুষের সেই পরম
দিকটা স্মরণ করিয়ে দেয়।
কিন্তু বাংলাদেশের এই বিভক্ত সময়ে কেন
এমন ঐকমত্য দেখা দিলো এর
ব্যাখ্যা কী তা ওই গৃহকর্তার
অবজারভেশনমূলক মন্তব্যে নেই।
সম্ভবত এর ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে গত
বছরজুড়ে রাজনৈতিক ঘটনাবলির মধ্যে।
আমাদের সমাজে শাহবাগ ফেনোমেনার
বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে হেফাজত
ফেনোমেনা দেখা গিয়েছিল। শাহবাগ
ফেনোমেনা বাড়াবাড়ি করে একটা সামাজিক
রাজনৈতিক বিচার দাবিকে অহেতুকভাবে ধর্মের
বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্বেষী (খুন
হওয়া রাজীবের ঘটনায়) হয়ে গিয়েছিল,
সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল রাষ্ট্র
সরকারের অসৎ প্ররোচনায়।
শাহবাগে লাখের সমাবেশ মুহূর্তেই
কয়েক শ’তে নেমে গিয়েছিল।
হেফাজত ফেনোমেনা ছিল এরই
বিরুদ্ধে সবল সাবধানবার্তা, পাল্টা প্রতিক্রিয়া।
এরই নিট ফলাফল হলো এবারের লতিফ
সিদ্দিকীর বক্তব্য ইস্যুতে প্রত্যেকের
সীমা মেনে চলা। ফলে এখান থেকেই
ঐকমত্য। দুর্লভ ঐকমত্য। তবু প্রশ্ন
থেকেই যায়, হাসিনার কি এই ঐকমত্য সহ্য
হবে? লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুর কার্যকর
সমাপ্তি ঘটেনি এখনো। তিনি কি এই
ঐকমত্যকে যথাযথ
আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর করণীয়
করবেন? তার ক্ষমতায় থাকার স্বার্থ
কি ঐকমত্যের সাথে মিলিয়ে সাজিয়ে হাজির
করতে পারবেন? গভীর সন্দেহ রাখার
যথেষ্ট কারণ আমাদের আছে।
ইয়র্কের পাবলিক সভায় লতিফ সিদ্দিকীর হজ,
তাবলিগ ইত্যাদি সম্পর্কে ধর্মবিদ্বেষী,
হেয় করা মন্তব্যের সামাজিক রাজনৈতিক
প্রতিক্রিয়ার প্রথম পর্যায় বলা চলে শেষ
হয়েছে। ঈদের পর দ্বিতীয় পর্যায় এখন
শুরুর অপেক্ষায়। তবে সামাজিক মাধ্যমসহ সব
ধরনের মিডিয়া আর রাজনৈতিক পাড়ায় এর
প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
সিদ্দিকী এখনো পলাতক বা গরহাজির। বড়
ধরনের রাজনৈতিক
ক্ষতি এড়াতে তাকে মন্ত্রিসভা ও দলের
প্রেসিডিয়াম পদ
থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দলের
প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে না বলে ইঙ্গিত
দেয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলো একান্তই
রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আইনি দিক নয়।
হাসিনার প্রতিশ্রুত অ্যাকশন কী হয় তা দেখার
অপেক্ষায় সারা দেশ ক্ষোভ অপমান
মনে চেপে ধৈর্য দেখাচ্ছে। এরকম যখন
পরিস্থিতি, ঈদের বন্ধে ঢাকার এক ড্রয়িং রুম
আড্ডায় উঠে আসা মন্তব্যটি ছিল বেশ
প্রতীকী।
সামগ্রিকভাবে বললে আসরের
সমাগমে যারা ছিলেন, তারা মডার্ন সেকুলার
আকাক্সক্ষী হলেও কেউ
ধর্মবিদ্বেষী নন। বাড়ির কর্তার
করা পর্যবেক্ষণমূলক মন্তব্যটি ছিল এ রকম
‘বাংলাদেশের জনগণ এখন রাজনৈতিক ও
সামাজিকভাবে বিভক্ত। কিন্তু এর ভেতরেও
বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার এক সাধারণ ঐকমত্য
দেখা গেল। প্রথমবার ঘটেছিল ’৭১
সালে আর দ্বিতীয়বার লতিফ সিদ্দিকীর
মন্তব্যের বিরুদ্ধে। এখন শেখ
হাসিনা কি জনগণের ঐকমত্যের
সাথে থাকবেন না ছলচাতুরি করবেন?’
কথা সত্য, সিদ্দিকী ইস্যুতে এক সাধারণ
ঐকমত্য দেখা গেছে, রাজনৈতিক
কিংবা ব্যক্তি মানসের অবস্থানের দিক
থেকে ইসলাম বা সেকুলারিজম
যে যে পথেরই হোক সবাই
মনে করেছেন মন্ত্রী সিদ্দিকী অপরাধ
করেছেন, তার মন্তব্য
চরমভাবে অগ্রহণযোগ্য।
অবস্থাটা বোঝা যায়, পাবলিক
মন্তব্যে বাঁকা কথা বা খোঁটা দেয়ায় ওস্তাদ
প্রধানমন্ত্রী নিজেসহ তার দলকেও
স্বীকার
করতে হচ্ছে সিদ্দিকী অপরাধী। এমন
অবস্থায় কেউ সিদ্দিকীর দায়িত্ব নেবেন
না। বলছেন, ‘উনি নিজেই বেকায়দায়
পড়েছেন,সরকার নয়। তার খেসারত
ওনাকেই দিতে হবে।’
সিদ্দিকীর মন্তব্যের সময়টা ছিল সারা দুনিয়ার
ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষ যখন হজের
ময়দানে সমবেত; একালে স্যাটেলাইট ও
টিভির সহজলভ্যতার
কারণে ঘরে বসে থাকা মানুষও ওই
সমবেতদের সাথে একাত্ম ও সম্পর্কিত
অনুভব করে। কোরবানি ঈদের আবহের
সময় যখন গোটা সমাজ
মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সরকারের
কয়েকজন মন্ত্রী ও দেশের রাষ্ট্রপতিও
যেখানে হজে গেছেন অর্থাৎ এই
সামাজিক মানসিক প্রস্তুতির সাথে প্রত্যক্ষ সায়
দিচ্ছেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও
বেশি সম্পর্কিত অনুভবের মধ্যে ছিলেন
সেই পরিস্থিতিতে সরকারেরই আর এক
মন্ত্রী সিদ্দিকী করেন এমন মন্তব্য।
এটা সামাজিক মানসের চরম উল্টাগান শুধু নয়
বরং সাধারণ মানুষকে অপমান ও চরম বেয়াদবি। এ
ছাড়া দেশের আইনে যা-ই থাক বা না থাক,
জেনেভার জাতিসঙ্ঘ
অফিসে সর্বসম্মতিক্রমে সর্বশেষ
গৃহীত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার
হিসেবে স্বীকৃত বিষয় অন্যের ধর্ম
নিয়ে ব্যঙ্গ করা,
অবমাননা করা ঘটনা হিসেবেও এটা অপরাধ।
যোগাযোগের দিক থেকে প্রত্যন্ত
উত্তরাঞ্চলের এক গ্রামে ঈদের জামাতের
খোতবায় মওলানা এই কথা খুবই সরল ও
নরমভাবে বর্ণনা করছিলেন। তিনি ইঙ্গিত
করছিলেন, আমাদের সমাজের গোড়ার ভিত
হিসেবে যেসব ধারণা আছে, এমন মান্যতা,
বিশ্বাস ও ধর্ম হিসেবে যা আছে তার
মারাত্মক ব্যত্যয় ঘটেছে এই মন্তব্যে।
তিনি সরকারের স্ববিরোধ
ধরিয়ে দিতে বলছিলেন, সরকারের
কয়েকজন মন্ত্রী ও দেশের রাষ্ট্রপতিও
যখন রাষ্ট্রীয় খরচে হজেই আছেন ঠিক
তখন অন্য এক মন্ত্রী আমাদের দেশ
সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মীয় ধারণার বিশ্বাস
নিয়ে অযাচিত কথা বলছেন, ইসলামের
গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হজের
প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাচাল প্রশ্ন
তুলছেন।
ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম মানা না মানা ভিন্ন বিষয়।
ব্যক্তিবিশেষের অবস্থান যা-ই হোক,
কোনো জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র যেমনই
হোক সে রাষ্ট্রে তার নিজ ধর্মের প্রভাব
বাইরে যার প্রকাশ মানুষের নাম, মানসিক গঠন,
পরিবার ও সমাজের গাঠনিক তন্তুএই
জনগোষ্ঠীর তৈরি রাষ্ট্রেও এর প্রভাব
থাকে। আর সংস্কৃতিতে এর প্রভাব সব কিছুর
ভিত্তিমূল হিসেবে অন্তর্নিহিত থাকে।
বিশেষত আমাদের রাজনৈতিক
জনগোষ্ঠী হিসেবে গোড়াপত্তনের
সময় থেকেই ইসলাম ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রেখেছিল বলে ভিত্তিমূলক
জায়গা নেয়াটা এখনো যথেষ্ট তাজা ও
শক্তিশালী। ফলে সিদ্দিকীর ইসলামের
গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হজের
প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাচাল প্রশ্ন
তোলা এ ঘটনার ব্যাপক প্রতিক্রিয়াকে সমাজ-
মানসের ভিত্তিমূলকে নাড়ানোর
অপচেষ্টা করতে গিয়ে চড়-থাপ্পর খাওয়ার
মতোই ব্যাপার ঘটেছে। ব্যাপক সামাজিক
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াটা আবার
উল্টো করে বললে, প্রমাণ
করে যে ধর্মীয় বিশ্বাস
এখনো আমাদের সমাজের ভিত্তিমূলে কত
শক্তভাবে কাজ করে।
সিদ্দিকীর বক্তব্যের সারকথা হলো,
মানুষের সব
চাহিদা আকাক্সক্ষা তৎপরতা ক্রিয়াকলাপের অর্থ
বা তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যাবে একমাত্র এর
বৈষয়িক স্বার্থের মধ্যে। সিদ্দিকীর বক্তব্য
যেসব ভ্রান্ত আগাম অনুমানের ওপর
দাঁড়িয়ে আছে তা হলো, যেন মানুষ শুধু
জীব-জীবন বহন করা মানুষ। যেন মানুষ
মানেই বিষয়-আশয়ের একটা ডিব্বা মাত্র।
যেন মানুষের স্পিরিচুয়াল
চাহিদা আকাক্সক্ষা বলে কিছু নেই।
স্পিরিচুয়ালিটি মানে দূরের ধর্মকর্ম
অথবা স্পর্শ করা যায় না এমন কিছু নয়।
সন্তানের প্রতি মায়া, একটা টান কেন অনুভব
করি? আবার শুধু নিজের সন্তান বা আপন পরিজন
বলে নয়, অপর মানুষের
সাথে প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেমন
সত্য ঠিক তেমনি সত্য হলো এর
সাথে সাথে অপরের সাথে মিলিত হওয়ার
কোথায় যেন একটা টান আকুল অনুভবও
আমরা করি। কেন করি? এগুলোকে মানুষের
বৈষয়িক স্বার্থের
লক্ষ্যে তৎপরতা বলে কোনো ব্যাখ্যা মিলবে না।
ইসলামে হজ তেমনই এক একত্মবোধ,
সমবেত মানুষের মিলিত হওয়ার এক ইঙ্গিত
দেখায়। মানুষ একা নয়, একক মানুষ
বলে দুনিয়াতে কিছু নেই। মানুষ সব সময়
সমবেত ও সামাজিক, এমনকি বিশ্ব-সামাজিক
বা গ্লোবাল। হজ মানুষের সেই পরম
দিকটা স্মরণ করিয়ে দেয়।
কিন্তু বাংলাদেশের এই বিভক্ত সময়ে কেন
এমন ঐকমত্য দেখা দিলো এর
ব্যাখ্যা কী তা ওই গৃহকর্তার
অবজারভেশনমূলক মন্তব্যে নেই।
সম্ভবত এর ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে গত
বছরজুড়ে রাজনৈতিক ঘটনাবলির মধ্যে।
আমাদের সমাজে শাহবাগ ফেনোমেনার
বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে হেফাজত
ফেনোমেনা দেখা গিয়েছিল। শাহবাগ
ফেনোমেনা বাড়াবাড়ি করে একটা সামাজিক
রাজনৈতিক বিচার দাবিকে অহেতুকভাবে ধর্মের
বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্বেষী (খুন
হওয়া রাজীবের ঘটনায়) হয়ে গিয়েছিল,
সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল রাষ্ট্র
সরকারের অসৎ প্ররোচনায়।
শাহবাগে লাখের সমাবেশ মুহূর্তেই
কয়েক শ’তে নেমে গিয়েছিল।
হেফাজত ফেনোমেনা ছিল এরই
বিরুদ্ধে সবল সাবধানবার্তা, পাল্টা প্রতিক্রিয়া।
এরই নিট ফলাফল হলো এবারের লতিফ
সিদ্দিকীর বক্তব্য ইস্যুতে প্রত্যেকের
সীমা মেনে চলা। ফলে এখান থেকেই
ঐকমত্য। দুর্লভ ঐকমত্য। তবু প্রশ্ন
থেকেই যায়, হাসিনার কি এই ঐকমত্য সহ্য
হবে? লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুর কার্যকর
সমাপ্তি ঘটেনি এখনো। তিনি কি এই
ঐকমত্যকে যথাযথ
আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর করণীয়
করবেন? তার ক্ষমতায় থাকার স্বার্থ
কি ঐকমত্যের সাথে মিলিয়ে সাজিয়ে হাজির
করতে পারবেন? গভীর সন্দেহ রাখার
যথেষ্ট কারণ আমাদের আছে।
No comments:
Post a Comment