Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Sunday, November 9, 2014

১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস

ঢাকা: আগামীকাল ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে সকাল ৭টায় রাজধানীর শহীদ নূর হোসেন স্কোয়ারে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য
দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক
বিবৃতিতে আগামীকাল ১০ নভেম্বর ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালনের জন্য সংগঠনের সব শাখাসহ সর্বস্তরের
জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের
বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ নূর হোসেন আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। শহীদ নূর হোসেনের রক্তদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার
বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয় এবং অব্যাহত লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।
“গনতন্ত্র মুক্তি পাক স্বৈরাচার নিপাত যাক” —–১০ই নভেম্বর, শহীদ নূর
হোসেন দিবস। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবচেয়ে স্মরণীয় নাম-
শহীদ নূর হোসেন।
নাসরিন হকঃ ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন নূর হোসেন। এইদিনে সারা দেশ থেকে দলে দলে মানুষ
এসে জড়ো হয়েছিলো ঢাকায়। মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো সেদিন ঢাকা নগরী। গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মোকাররম
এলাকায় জনতার ভিড়। সমস্ত জনতাকে ছাপিয়ে একটি মুখই উদয় হচ্ছিলো বারবার। আর সেটি হলো নূর হোসেনের মুখ। তার খালি গা, জিন্সের
প্যান্ট পরনে। খোলা বুকে স্লোগান লেখা—স্বৈরাচার নিপাত যাক, পিঠে লেখা– গণতন্ত্র মুক্তি পাক। সে সমস্ত এলাকায় ছুটছিলো, এক
প্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে। যেন তাকে সেদিনটি প্রতিবাদের মহানায়ক করে তুলেছিল। ডিউটিরত পুলিশদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হচ্ছিলো তার
প্রতিবাদী কর্মকান্ডে।
এরপরই যখন সেই পথ দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গাড়িতে যাচ্ছিলেন, সেই
প্রতিবাদী যুবকটিকে দেখে নেত্রী গাড়ি থামিয়ে তিনি তাকে ডাকলেন। বললেন,– জলদি জামা গায়ে দাও, পুলিশ তো তোমাকে গুলি করবে। উদোম
বুকে পিঠে স্লোগান লেখা সেই যুবক তার প্রিয় নেত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। নতুন উদ্যামে প্রচন্ড সাহসী হলেন নূর হোসেন।
আরও প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন। নেত্রীর আশির্বাদে নিজেকে গর্বিত অনুভব করলেন। তারপর স্লোগান দিতে দিতে হারিয়ে গেলো উত্তাল জনতার
ভিড়ে। এর কিছুক্ষণ পরেই গুলির শব্দ। বায়তুল মোকাররম গেটের কাছে পুলিশের গুলিতে ঢলে পড়লো সেই প্রতিবাদী যুবক নূর হোসেন।
জনতা কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে সেই মুহূর্তে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই উত্তাল জনতা পুনরায় সংগঠিত হলো। আবারো গুলির শব্দ।
গুলিতে আরো শহীদ হন যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবুল ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটোও। নূর হোসেনের লাশ
ছিনিয়ে নিয়েছিলো পুলিশ। বায়তুল মোকাররমের গেটের কাছে নূর হোসেন পড়ে গেলেন। তারই এক সহযোদ্ধা যখন তাকে দৌঁড়ে গিয়ে তাকে ধরে,
সেই জায়গায় আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন। তিনি যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবুল। নূর হোসেনের গুলি লেগেছিল পেটের ডানপাশে। আর
বাবুলের গুলি লাগে কোমরের নিচে। বাবুল সাথে সাথে শহীদ হন। নূর হোসেন তখনো বেঁচে ছিলেন। তার সহযোদ্ধারা যখন তাকে রিক্সায়
করে হাসতাপাল নিয়ে যাচ্ছে তখন বাঁধা দেয় স্বৈরাচারের লেলিয়ে দেয়া বাহিনী। নূর হোসেনকে রিক্সা থেকে টেনে-হিচড়ে মাটিতে ফেলে দেয়
পুলিশ। পড়ে গিয়ে গোঙ্গাতে থাকে নূর হোসেন। পুলিশ তাকে দুই পা ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এরপর নূর হোসেনকে আর পাওয়া যায় নি। নূর
হোসেনকে গোপনে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে মাটি চাপা দিয়েছে স্বৈরাচার এরশাদ। জীবন্ত নূর হোসেনকে স্বৈরাচার এরশাদ যতোটা ভয়
পেয়েছিলো, তার চেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলো মৃত নূর হোসেনকে। নূর হোসেনের আত্মত্যাগে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর
হয়। অপ্রতিরোধ্য রূপ লাভ করে সেই গণঅভ্যুত্থানের। সেই গণঅভ্যুত্থানের গণজোয়ারে ৯০’এর শেষ দিকে ভেসে যায় স্বৈরাচারের ক্ষমতা।
পতন ঘটে এক স্বৈরশাসকের। আর শহীদ নূর হোসেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠেন। এরপর থেকে প্রতি বছর যথাযোগ্য
মর্যাদায় ১০ নভেম্বর ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের
আন্দোলন-সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় বীর শহীদ নূর হোসেনকে, যে যুবকের বুকে পিঠে লেখা ছিল তরবারির মত শানিত তরতাজা অমর
বানী –“গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক”।

No comments: