Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Friday, May 23, 2014

এমপি হয়ে ফার্স্ট শট

বিনোদন: ঘাটাল
থেকে জুহুর দূরত্ব
২৫০০
কিলোমিটারের
একটু বেশি।
এবং বুধবার
সকালে প্রচার,
মাইক, ধুলো, ২
লক্ষ ৭০ হাজারের
মার্জিনকে পিছনে ফেলে আরব সাগরের
তীরে আবার শু্যটিংয়ের
পৃথিবীতে অনায়াসে ঢুকে গেলেন তিনি। কিন্তু
তার পৃথিবী যে কতটা বদলে গিয়েছে,
তা বোধহয় মুম্বইতে ল্যান্ড করার কিছু
ক্ষণের মধ্যে বুঝতে পারলেন।
তখন দুপুর একটা। জুহুর জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট
হোটেলের ৩০৮ নম্বর রুমের
সামনে এসে দরজা নক করলেন মহারাষ্ট্র
পুলিশের সাদা পোশাকের অফিসার।
দরজা খুলতেই সেই অফিসার বললেন,
“আমাকে এমপি সাবের সিকিওরিটির
দায়িত্বে পাঠানো হয়েছে হেডকোয়াটার্স
থেকে। একটু প্লিজ সাহেবকে বলবেন
আমি দরজার বাইরে আছি।”
অফিসারের
কথা শুনে প্রথমে চমকে গিয়েছিলেন, তারপর
নিজেকে সামলালেও, দরজা ধরে হেসে ফেলেন
‘বিন্দাস’ দেব।
কোনো রকমে হাসি থামিয়ে বললেন,
“বাইরে কেন, ভিতরে আসুন।
অ্যাকচুয়ালি আমিই এমপি।”
কথা শুনে অফিসারের তখনও ঘোর কাটেনি।
আমতা আমতা করে বললেন,
“অ্যাকচুয়ালি ম্যয় সমঝ নেহি প্যয়া আপ
এমপি হো। আই অ্যাম সরি।”
এই ঘটনাটাই বোধহয় বদলে যাওয়া দেবের
পৃথিবীর সবচেয়ে স্ট্রাইকিং ছবি।
ঘাটালের সব বাচ্চার কাছে আমার নম্বর
আছে
“ওর আর দোষ কী বলুন! জিন্স, শার্ট,
ক্রিউ কাট
হেয়ারস্টাইলওয়ালা এমপি তো সাধারণত
উনি দেখেন না। উনি ভেবেছিলেন
সাদা জামাকাপড় পরা কোনো বয়স্ক মানুষ
হবে,” কোল্ড কফি খেতে খেতে নাচের
রিহার্সালের ফাঁকে বলছিলেন দেব।
প্রসঙ্গত, মাসদেড়েক ধরে জনসভা,
পথসভা করে বুধবার সকাল থেকে অনেক
দূরের নাইগাঁওয়ের স্টুডিয়োতে ‘বিন্দাস’ ছবির
গানের শু্যটিং দিয়েই আবার তার
পুরনো লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের
পৃথিবীতে ফিরলেন দেব।
তার আগের দিন অবশ্য দুপুর
তিনটে থেকে ভারসোভার
আরামনগরে মুনওয়াক
স্টুডিয়োতে টানা রিহার্সাল করলেন প্রায়
৩০ জন বিদেশি ডান্সারের সঙ্গে।
স্টেপগুলো নিজের আয়ত্তে এনে প্রায় দেড়
ঘণ্টা পরে বললেন, “একটু হেঁটে আসি চলুন
রাস্তায়। কলকাতায় তো হাঁটতে পারি না।”
ভারসোভার
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলছিলেন গত
দু’মাসে ঘটে যাওয়া আমূল পরিবর্তিত তার
জীবনের কথা। “কী যে হচ্ছে আমার সঙ্গে।
গত বছর ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের পর ভাবলাম
একটা দারুণ জিনিস করলাম জীবনে। এই
আমার জীবনের হাইলাইট। এ বার একটু
রেস্ট নেব। তার তিন মাসের মধ্যে ঘাটালের
এমপি হওয়ার প্রস্তাব এল দিদির কাছ
থেকে। তারপর পাগলের মতো প্রচার
করলাম। আজকে এমপি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
জানেন, বিশ্বাস করতে শুরু
করেছি আমি ‘ডেস্টিনিস চাইল্ড’,”
রাস্তা পার হতে হতে বলছিলেন ‘শঙ্কর’।
এর আগেও দেবের সঙ্গে দেশে বিদেশে বহু
শুটিং কভারে গিয়েছি। কিন্তু এ বার যেমন
একটা জিনিস বিশেষ ভাবে চোখে পড়ল তার
এই পরিবর্তিত জীবনে, দেবের স্যামসুং নোট
৩ ফোনের কোনো রেস্ট নেই।
প্রতি মিনিটে ফোন বেজেই
চলেছে এমপি বাবুর। এত ফোন
তো আগে আসত না? “কী করব, ঘাটালের
প্রত্যেকটা বাচ্চার কাছে এখন আমার ফোন
নম্বর আছে। সবাই দিনে অন্তত একবার
আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। ওরাই ফোন
করছে। আমার ভালো লাগে ওদের
সঙ্গে কথা বলতে,” এক নিঃশ্বাসে বলেন
দেব।
পার্লামেন্ট যাওয়ার থেকে বেশি এক্সাইটেড
লাগছে জিতে নিজের কেন্দ্রে যাওয়ায়
আসলে এটাই বদলে যাওয়া দেবের জীবন।
ভেঙ্কটেশ ফিল্মস্ প্রযোজিত ‘বিন্দাস’
মুক্তি পাবে ২৮ জুলাই। সেটার
প্ল্যানিং করছেন পুরোদমে। তার আগে ৯
জুন স্পেনে যাবেন আরও একটা গানের
শু্যটিংয়ে। কিন্তু এর পাশে পাশেই প্ল্যান
করছেন শনিবার ঘাটালে গিয়ে কী কী করবেন,
তা নিয়ে।
মেকআপ করতে করতে বলছিলেন সে কথা,
“জেতার পর শনিবার ঘাটালে যাব প্রথম।
বলে বোঝাতে পারব না,
আমি কতটা এক্সাইটেড।
দিল্লিতে পার্লামেন্টে যাওয়ার থেকেও
এটা আমার কাছে বেশি আনন্দের।” এর
মধ্যে হঠাৎ করে বলে ওঠেন তার মায়ের
কথাও। “মা সে দিন বলছিলেন, ‘তোর
তো এত নামডাক। আমাদের সবাইকে তুই এত
ভালো রেখেছিস, এবার একটু রেস্ট নে।
তোকে তো আর আমরা বাড়িতেই পাই না’,”
গলা নামিয়ে বলেন দেব। বুঝতে পারি কোথাও
হয়তো এটা দেবের নিজেরও মনের কথা। এর
মধ্যেই ডাক আসে পরিচালক রাজীব
বিশ্বাসের কাছ থেকে। ক্যামেরাম্যান সৌমিক
হালদার রেডি, এ বার যে এমপি হওয়ার পর
ফার্স্ট শট দিতে হবে তাকে।
কিছুই ভুলিনি তো তা হলে
‘বিন্দাস’য়ের এই নাচের দৃশ্যে তার
নায়িকা সায়ন্তিকা। প্রথম দু’-একবার
রিহার্সাল করেই শট ওকে হলো।
স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সায়ন্তিকার
সঙ্গে ইয়ার্কি মারলেন। মেকআপ ম্যান
সোমনাথ কুণ্ডুর বাড়ির কথা জিজ্ঞেস
করলেন। সবই যেন সেই আগের মতোই। শট
ওকে হওয়ার পর হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস
করলেন, “কী, ঠিক ছিল তো? কিছুই
ভুলিনি তা হলে?” তার পরই প্রোডাকশনের
লোকজনকে বলেন, “মুম্বাইতে এসেছি, একটু
বড়া পাও না খেলে হয়! আজকে সকালে ব্রেক
ফাস্টে বড়া পাও আনাও।”
আসলে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে এখনও
আগের স্ট্রিক্ট
ডায়েটে ফিরতে পারেননি দেব। “এবার
কলকাতা গিয়েই আবার জিম শুরু করব। সেই
‘যোদ্ধা’র সময় শেষ বার জিমে গিয়েছি।
সেটা বেচেই খাচ্ছি। এই ক’মাসে শুধু খেয়েই
গিয়েছি আমি। মোটা না হলেও
বুঝতে পারছি এ বার জিমে যাওয়াটা দরকার।
প্রায় দু’মাস যাইনি,” বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতেই
বলেন দেব।
এর মধ্যেই বড়া পাও শেষ করে আরও
তিনটে শট পরপর দিয়ে এলেন তিনি।
ভ্যানিটি ভ্যানে ফিরে এসে দেখলেন
৩০টা মিসড্ কল। “আর বলবেন না, কত
মানুষ যে ফোন করছেন! বুঝতে পারি পুরোটাই
মানুষের ভালোবাসা। কিন্তু মাঝে মধ্যে বাধ্য
হয়ে কিছু নম্বর ব্লক করেছি।
না হলে মরে যাব, কাজ করতে পারব না,”
বলছিলেন দেব।
কথায় কথায় তার কাছেই জানা গেল সাউথ
সিটিতেই সাড়ে তিন হাজার স্কোয়ার ফিট-এর
নতুন ফ্ল্যাটে ইতিমধ্যেই শিফ্ট
করে গিয়েছেন তিনি। “প্রচার, ভোট-পর্বের
মাঝে কিন্তু বাড়িটাও রেডি করে ফেললাম।
পুরো ইন্টিরিয়র আমার নিজের করা। টাইম
ম্যানেজমেন্টের নোবেল প্রাইজ পাব এবার
আমি,” বলেন ‘দীপক অধিকারী, মেম্বার অব
পার্লামেন্ট’।
ফিল্ম-এর মিডিয়া অনেক ভালো ভাই
তা হলে টাওয়ার ফোরের উনত্রিশ তলার
পুরনো ফ্ল্যাটটার কী হবে! “ওটা এবার
আমি আমার অফিস বানাচ্ছি। যা কাজের চাপ,
অফিস না বানালে আর চলবে না আমার।
ফিল্মের কাজ আছে, রাজনীতির কাজ আছে।
এ বার একটা অফিস লাগবে,”
হাসতে হাসতে বলেন দেব। এর মধ্যেই তার
সঙ্গে দেখা করতে এলেন এই গানটার
কোরিওগ্রাফার আদিল। “স্যর, কনগ্র্যাটস
অন বিকামিং এমপি। ক্যান আই টেক আ
পিকচার উইথ ইউ?” “ওহ্ ইয়েস,
অফকোর্স,” বলে তার
সঙ্গে ছবি তুলে ফিরে এলেন তার ভ্যানে।
মেকআপ ম্যান সোমনাথ কুণ্ডু তখন টাচ আপ
করছেন পরের দৃশ্যের জন্য। আয়নার
সামনে বসে এসির
রিমোটটা চেয়ে টেম্পারেচারটা ১৮তে করে নিজেই
বলতে শুরু করেন ফিল্মের জগৎ
এবং রাজনৈতিক জগতের মিডিয়ার কথা।
“আমার কিন্তু জানেন, ফিল্মের মিডিয়ার
ওপর শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেল এই কয়েক
মাসে। পলিটিক্যাল মিডিয়াটা বড্ড
পোলারাইজড।
ওরা যা ইচ্ছে লিখে দিতে পারে। ওদের
উদ্দেশ্যটাই আপনাকে ছোট করা। ফিল্মের
মিডিয়া আপনার বেস্ট ছবিটা ছাপতে চায়।
পলিটিক্যাল মিডিয়া আপনার সব চেয়ে খারাপ
ছবিটা। কাছ থেকে দেখে বুঝলাম, ফিল্মের
মিডিয়া অনেক ভালো ভাই। অনেক ভদ্র।
তারা আপনাকে স্পেস-ও দেয়। অনেক কিছু
জানলেও সেটা লেখে না। পলিটিক্যাল
মিডিয়া ও সবের ধার ধারে না,” বেশ জোর
গলায় বলেন দেব।
হঠাৎ কেন এ রকম রিয়েলাইজেশন
হলো তার? জ্যাকেটটা পাশে সরিয়ে বলেন,
“এই যে সাউথ সিটিতে ভোটের দিন
বলা হলো আমি নাকি লাইন
টপকে আগে ভোট দিতে গিয়েছি। বিশ্বাস
করুন, সেটা সত্যি নয়। সে দিন ওখানে ভোট
দিয়ে আমার ঘাটাল চলে যাওয়ার কথা।
পুরো মিডিয়া হাজির, ক্যামেরাম্যান
থেকে রিপোর্টার সবাই বলল, দেব,
তুমি তাড়াতাড়ি ভোটটা দিয়ে দাও। আমাদের
ফিড পাঠাতে হবে। আমি ওদের কথা ভেবেই
এগোলাম। পরের মুহূর্তে আমি লাইন
ভেঙেছি বলে ব্রেকিং নিউজ করে দেয়া হলো।
এ রকম উদাহরণ ভূরি ভূরি দেখলাম গত
দু’মাসে। এই মিডিয়ার ব্যাপারটা প্লিজ
লিখবেন কিন্তু,” দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন
দেব।
আমি যেন স্টক মার্কেটের শেয়ার
এর মধ্যেই ভ্যানিটি ভ্যানে চা দিতে বললেন
‘বিন্দাস’ দেব। চা খেতে খেতেই পরিচালক
রাজীব পরের ডান্স
স্টেপটা বুঝিয়ে দিয়ে যান। সায়ন্তিকাও
এসে দেখা করে যান তার সঙ্গে। ভ্যান
থেকে তারা বেরিয়ে গেলে জিজ্ঞেস করি,
যে দিন ভোটের রেজাল্ট বেরলো, সে দিন
তার মনের অবস্থা কী রকম ছিল?
“মনে হচ্ছিল, আমি যেন কোনো এক
কোম্পানির স্টক মার্কেটের শেয়ার। কখনও
কেউ বলছে এগিয়ে আছি। কখনও কেউ
বলছে কাউন্টিংই শুরু হয়নি। একদল
এসে বলে যাচ্ছে পিছিয়ে আছি।
ওটা একটা অদ্ভুত স্টেট। আমার
কাছে পুরো ব্যাপারটাই তো নতুন।
এটা তো আর বক্স অফিসের ফিগার নয়।
ওটা তো আমার জানা ক্ষেত্র। কিন্তু এটার
তো আমি কিছুই জানি না। দুপুর দেড়টা নাগাদ
একজন এসে বলল, এক লাখ
ভোটে এগিয়ে আছি। তারপর একটু নিশ্চিন্ত
হলাম। কিন্তু এ সব ইতিহাস। এ বার কাজ
করতে হবে আমাদের। মানুষের
পাশে থাকতে হবে,” বলতে বলতে গলায়
এক্সাইটমেন্টটা ধরা দেয়।
কলকাতার মতো গরম না-হলেও
বুঝতে পারি রাজনৈতিক আলোচনা করতেই
বেশি আগ্রহী তিনি। জিজ্ঞেস করি, জেতার
পর দিদি কী বললেন? আর কী কী কাজ
করবেন বলে ঠিক করেছেন ঘাটালের জন্য?
“দিদি আমাকে বললেন, ‘তুমি খুব
ভালো কথা বলছ আজকাল।
পলিটিক্সে তুমি খুব ভালো করবে।’ আমার
কাছে এটা বিরাট কমপ্লিমেন্ট। আর কাজ
তো প্রচুর আছে। রাস্তা বানাতে হবে। চাই
ঘাটালে একটা স্টেডিয়াম হোক। চাই
মেদিনীপুরে সিনেমা হলের অবস্থা আরও
ভালো হয়ে উঠুক। সিনেমাই আমাকে সব
দিয়েছে, তাই ইন্ডাস্ট্রির
কী ভাবে ভালো করা যায়
সেটা আমাকে দেখতেই হবে,” দৃঢ়তার
সঙ্গে বলেন দেব।
এর মধ্যেই জিজ্ঞেস করলাম সিনেমা হলো,
পলিটিক্স হলো কিন্তু বিয়ে কবে হচ্ছে?
“দাঁড়ান দাঁড়ান, আরও কিছু
ভালো সিনেমা করি। মানুষের সেবা করি।
তারপর সব ঠিকঠাক চললে বৌয়ের
সেবা করব। এখন হাই
প্রায়োরিটি সিনেমা আর পলিটিক্স। আর
আমার সময় কোথায় বলুন, এর পরেই
যাচ্ছি স্পেন। ফিরে এসে রাজের ‘যোদ্ধা’র
শু্যটিং। তার পরেই মিঠুনদার সঙ্গে ছবিটা।
তার সঙ্গে পার্লামেন্ট। ঘাটাল, কর্মিসভা।
এখন বিয়ে করলে বৌকে সময় দেব
কী করে,” মুচকি হেসে বলেন দেব।
জ্যাকেটটা পরে, আয়নায় নিজের
মুখটা দেখে বেরিয়ে যান দিনের লাস্ট
শটটা দিতে। দূরে তখন দেখলাম,
সাদা জামা আর নেভি ব্লু প্যান্ট
পরে দাঁড়িয়ে শু্যটিং দেখছেন মহারাষ্ট্র
পুলিশের সেই অফিসার।
দৃশ্যটা দেখতে দেখতে কানে বাজে ম্যারিয়ট
হোটেলে এই অফিসারের কথাটা,
“অ্যাকচুয়ালি ম্যয়
নেহি সমঝা নেহি প্যয়া আপ এমপি হো। আই
অ্যাম সরি।”
এক দিকে বিদেশি ড্যান্সার, বডি হাগিং টি-
শার্ট, জেল লাগানো চুল, টাইট জিন্স।
এই ‘বিন্দাস’ লোকটাই আবার মেম্বার অব
পার্লামেন্ট নাকি।
সত্যি অফিসারটির দোষ নেই।– এবিপি।


Posted via Blogaway

No comments: