Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Wednesday, May 28, 2014

থানা হাজতে যেমন কাটছে নূরের বান্ধবী নীলার

এসি রুমে থাকা, এসি গাড়ীতে চড়া ও ঢাকার অভিজাত
পাড়া দাবড়ে বেড়ানো নীলা এখন ঘুমান থানার
মহিলা হাজতের মেঝেতে। নিজের
সৌন্দর্যকে পুঁজি করে অল্প দিনে অগাধ টাকার মালিক
বনে যাওয়া নীলা কথিত নূর হোসেনের
স্ত্রী হয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন মাদক ব্যবসায়। নূরের
মাদক রাজত্বে ঢুকে নীলা নিজেই যে মাদক
ব্যবসায়ী বনে গিয়েছিলেন তা ফাঁস হয় সিদ্ধিরগঞ্জ
জুয়েল হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর। বুধবার
দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় গিয়ে দেখা যায়,
মহিলা হাজতের মেঝেতে শুয়ে আছেন নীলা।
হাজতে দামি বেডসিট, বালিশ নেই। নীলা কখনো বসে,
কখনো শুয়ে আবার কখনো দাঁড়িয়ে কাটাচ্ছেন। পরিচিত-
অপরিচিত কাউকে দেখলেই ফ্যালফ্যাল
করে তাকিয়ে থাকেন। ২৬ মে ভোর রাতে তার নিজ
বাড়ী থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল হত্যায়
জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে আদালতে হাজির করলে আদালত নীলার ৩ দিনের
রিমান্ড মঞ্জুর করে পুলিশ হেফাজতে পাঠান।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)
আলাউদ্দিন জানান, নীলাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ
করলেই কেঁদে ফেলছে। তার মুখে শুধু
একটি কথা আমি কিছু জানি না। পুলিশের রান্না করা খাবার
খাচ্ছে সে। যে হলুদ জামা পড়া অবস্থায়
নীলাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো বুধবার দুপুর পর্যন্ত
সেই পোশাকেই ছিল নীলা। বুধবার সকালে দুটি পরটা ও
ভাজি খেতে দেয়া হয় তাকে।
জুয়েল হত্যা মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও
সে অঝোর ধারায় কাঁদছে আর বলছে আমি এসব কিছু
জানি না। গ্রেফতারের পর থেকে নীলার সাথে এ পর্যন্ত
কেউ সাক্ষাত করতে পারেনি বা আসেনি। মূলত
রিমান্ডে থাকা কারো সাথে কোন স্বজন বা কেউ
দেখা করার নিয়ম নেই। সূত্রটি জানায়, নীলার
সাথে সাক্ষাত করতে ইচ্ছুক কেউ বুধবার বিকেল পর্যন্ত
থানা হাজতে আসেনি।
নীলার এলাকার বাসিন্দারা জানান, সাত খুন মামলার
প্রধান আসামী নূর হোসেনের মাধ্যমেই ঢাকার অভিজাত
পাড়া ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ প্রভাবশালীদের
সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে নীলা। নূর হোসেনও তার
স্বার্থ হাসিলের জন্য নীলাকে ব্যবহার করতে ছাড়েনি।
স্থানীয়রা জানান, নিজের সৌন্দর্যকে পুঁজি করেই মূলত
কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা অল্প সময়ের
মধ্যে নূর হোসেনকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করেন।
প্রাক্তন স্বামীর বাসস্ট্যান্ডের ইজারা ও বিভিন্ন
উন্নয়ন কাজের বাহানায় নূর হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক
গড়ে তুলেছিলেন নীলা। এলাকায় চাউর রয়েছে,
সুন্দরী নীলাকে নিজের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে নূর
হোসেন ব্যবহার করতেও দ্বিধা করতো না। কেন্দ্রীয়
শীর্ষ অনেক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তাদের পার্টিতে নীলা নিয়মিত ‘অতিথি’ থাকতেন।
তার সাজসজ্জা, বেশভূষা ও কাউন্সিলর পরিচয়ের
কারণে তার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ
করতো না কেউই। তবে হত্যা মামলায় গ্রেফতার
হয়ে রিমান্ডে যাওয়ার পর নীলার
সম্পর্কে ধারণা পাল্টেছে অনেকের।
যে হত্যায়
নীলা রিমান্ডে আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া সে মামলার ৩
আসামীর জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩০
অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জান্নাতুল ফেরদৌস
নীলা ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত
মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপরেই তার
সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জের এরশাদ শিকদার-খ্যাত কাউন্সিলর
নূর হোসেনের সাথে সখ্যতা ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। মূলত
তখন থেকেই নীলা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
নোয়াখালীর উত্তর মাসুদপুর গ্রামের ফিরোজ খানের
ছেলে জুয়েল ছিল নীলার প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদার।
জুয়েলের মাধ্যমে নীলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফেনসিডিল
এবং টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন
স্থানে সরবরাহ করতো।
এভাবে ব্যবসা করতে গিয়ে জুয়েলের কাছে নীলার ৪০ লাখ
টাকা পাওনা হয়। এ নিয়ে একদিন উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত
বাক্য বিনিময় হয়। এরপরই নীলা তার খুচরা মাদক
বিক্রেতা মনা ডাকাত, সোহেল, কালা সোহাগ ও
সোয়েবকে নিয়ে জুয়েলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
জুয়েলকে হত্যার জন্য তাদের ১ লাখ টাকা দেয় নীলা।
নীলার নির্দেশ এবং পরিকল্পনায় ঘাতকরা গত বছরের ২৫
অক্টোবর রাতে জুয়েলকে সিদ্ধিরগঞ্জের আয়ুবনগর
এলাকায় জবাই করে হত্যা করে। হত্যার পর দেহ
থেকে মাথা আলাদা করে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়
ঘাতকরা। কিন্তু নীলার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত
থাকার কথা সিদ্ধিরগঞ্জের কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতো না।
তাছাড়া নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নীলার ব্যাপারে কেউ
নাকও গলাতো না।
নীলার বাসায় যাওয়ায় তদন্ত
কর্মকর্তাকে বদলী করে তৎকালিন এসপি।
জুয়েল হত্যাকান্ডের পর নীলার নাম উঠে আসলেও
সে সময়ে পুলিশ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এমনকি হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন
আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দী দেওয়ার পর তদন্ত করা পুলিশের এস আই
নজরুল ইসলামকে সে সময়ের এসপি ডেকে নিয়ে অকথ্য
ভাষায় গালমন্দ করেন ও বদলী করে দেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানান, সেভেন মার্ডারের ঘটনায়
দায়ের করা দুটি মামলার প্রধান আসামী নূর
হোসেনকে গডফাদার হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে ছিল
নারায়ণগঞ্জের সাবেক এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সাবেক
ডিসি মনোজ কান্তি বড়ালসহ অনেকেই।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জের আইউব নগর
এলাকা থেকে জুয়েল নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার
করা হয়। ঘটনার পরদিন থানার এস আই জিন্নাহ
বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত
করেন থানার ওই সময়কার এস আই নজরুল ইসলাম।
মামলার পরেই কাউন্সিলর নীলার সম্পৃক্ততার
কথা উঠে আসলেও নূর হোসেনের দাপট আর অর্থের
জোরের কারণে পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এর মধ্যে পুলিশ সোহাগ ও মনাসহ ৩ জনকে আটক
করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ৩ জন হত্যাকান্ডের
সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার
করে পৃথকভাবে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দী দেয়।
জবানবন্দীতে মনা স্বীকার করে, ইয়াবা ও হেরোইন
ব্যবসার চালানোর ৭০ লাখ টাকা লেনদেনে ঝামেলার
কারণে কাউন্সিলর নীলার সঙ্গে ১ লাখ
টাকা চুক্তিতে সিদ্ধিরগঞ্জের আইউবনগর আজিবপুর
এলাকায় খুন করা হয় জুয়েলকে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার
শর্তে জানান, মনার স্বীকারোক্তির পর নীলার নাম
উঠে আসায় এস আই ফজলুল হককে ওই সময়ের
এসপি নুরুল ইসলাম ডেকে নিয়ে প্রচুর গালমন্দ করে। এর
পরদনিই ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামকে কিশোরগঞ্জের
ইটনা থানায় বদলী করা হয়।

Posted via Blogaway


Posted via Blogaway

No comments: