রাশাদ–নাবিলা ভাইবোন৷ অনেক
কিছুতে মিল থাকলেও ফুটবলে দুজন দুদলের৷
ছবি: সৈকত ভদ্র
ভাই ব্রাজিল বোন আর্জেন্টিনা৷ আবার
স্ত্রী ব্রাজিল তো স্বামী আর্জেন্টিনার সমর্থক৷
এক ছাদে দুই দেশের পতাকা—বিশ্বকাপ ফুটবল
ঘিরে ঘরে ঘরে এখনই শুরু হয়ে গেছে এমন
খুনসুটি...
বিশ্বকাপ ফুটবলের লড়াই শুরু
হতে এখনো বাকি আট দিন। মাঠের লড়াই শুরু
হওয়ার আগেই শুরু হয়ে গেছে ঘরের লড়াই। ব্রাজিল
ও আর্জেন্টিনা—এ দুই দলে ভাগ হয়ে গেছেন
অনেকে। আবার অন্য দলের সমর্থকও কেউ কেউ৷
বাসার ছাদ থেকে বসার ঘর, সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সব জায়গাতেই প্রিয়
দলকে নিয়ে পক্ষপাতের লড়াই। ঘরে ঘরে ফুটবলের
পাঁড় ভক্তরা জড়িয়ে পড়ছে নিজের
দলকে নিয়ে বাগ্যুদ্ধে। আদরের ছোট
বোনটা মতবিরোধের কারণে ভাইকেই
মনে করছে ঘোর শত্রু! রাজধানীর
ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা রিদওয়ানুর
রহমানের কথাই ধরা যাক। নর্থ সাউথ
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর
শিক্ষার্থী রিদওয়ানের আদরের বোন
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জারিন তাসনিম।
সবকিছুতে মতের মিল থাকলেও খেলায় এসে দুজন দুই
ভুবনের বাসিন্দা।
বোন জারিন আর্জেন্টিনার সমর্থক৷ তাই
তো ব্রাজিল সমর্থক ভাই রিদওয়ান
খুনসুটিতে মেতেছেন
রিদওয়ানের পছন্দের দল ব্রাজিল।
এদিকে আর্জেন্টিনার জাদুতে মুগ্ধ জারিন
তাসনিম। আর এ নিয়েই সারা দিন হচ্ছে খুনসুটি।
মেসি নাকি নেইমার কে বেশি ভালো?
বাগ্যুদ্ধে নিজের খেলোয়াড়কে নিয়ে যুক্তিতর্ক
উপস্থাপন চলছে সমানে। অধুনার এই আয়োজনের
জন্য কথা হচ্ছিল তাদের বাসার বসার ঘরে।
নিজের দলকে নিয়ে তারা এতটাই উত্তেজিত
যে ছবি তোলার জন্য পোজ দিতে গিয়েও
বেধে গেল ঝগড়া! এবারের বিশ্বকাপে ফেভারিট
দলগুলোর নাম খাতায় লিখতে গিয়ে এক
নম্বরে ব্রাজিল, দুই নম্বরে ইংল্যান্ড আর
তিনে আর্জেন্টিনার নাম প্রস্তাব করে রিদওয়ান।
সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ জারিনের। ব্রাজিলের
নাম কেটে সেখানে আর্জেন্টিনার নাম লিখে দেন
তিনি। জারিনের মতে, ‘গত বিশ্বকাপের
চেয়ে আর্জেন্টিনা দল হিসেবে এবার আরও
বেশি শক্তিশালী। তাই বিশ্বকাপ তারাই জিতবে।
সেই সঙ্গে মেসি এবার সবচেয়ে বেশি গোলের
মালিক হবে।’
তবে উল্টো মত রিদওয়ানের, ‘বাইরের
দেশে খেলতে গিয়ে প্রতি বিশ্বকাপেই দাপট
চালায় ব্রাজিল। আর এবার তো ঘরের
মাঠে খেলা। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
ব্রাজিলের এবারের বিশ্বকাপ
তো ছেলের হাতের মোয়া। ব্রাজিল কাপ
পাচ্ছে সেটা আমি নিশ্চিত। এখন প্রস্তুত
হচ্ছি কীভাবে এ বিজয় উদ্যাপন করব তাই নিয়ে।’
একই অবস্থা দেখা গেল রাশাদ রিয়াজ আর
নাবিলা রিয়াজদের বাসায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিংয়ের
শিক্ষার্থী নাবিলা রিয়াজের মুগ্ধতা ব্রাজিলে।
তবে নাবিলার ছোট ভাই রাশাদ
ভালোবাসে মেসিকে।
খেলা দেখা নিয়ে ইতিমধ্যে নানা পরিকল্পনা কর
দুজনেই। কিন্তু সবটা কেউই ফাঁস করতে চান না।
মৌসুমি ফলের এ মৌসুমে পাকা আম একদমই
ছুঁয়ে দেখছে না রাশাদ। কারণ,
বাইরে হালকা সবুজ আর ভেতরে পেকে হলুদ
আমটা যে ব্রাজিলেরই প্রতীক!
আম বাইরে সবুজ ভেতরে হলুদ৷
রং মিলে গেছে ব্রাজিলের পতাকার সঙ্গে৷
তাই আর্জেন্টিনার সমর্থক ভাই এটি খাবেনই
না
শুধু কী ভাইবোন। একই বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর
মধ্যেও খেলা নিয়ে তর্ক তুঙ্গে। মিরপুরের
বাসিন্দা জেরিন জানালেন, ‘অনেক আগে থেকেই
আমি ফ্রান্সের ভক্ত। বিয়ের পর দেখি আমার
স্বামী পছন্দ করে ব্রাজিল। সারাক্ষণই আমাদের
মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে। খেলা দেখতে বসে কী যে হয়
বুঝতে পারছি না। কারণ, এবারই
আমরা দুজনে একসঙ্গে প্রথম বিশ্বকাপ দেখব।
তবে ফ্রান্স যাই করুক না কেন, ব্রাজিল হারলেই
আমি বিশেষ রান্না করব।’
জেরিনের স্বামী আহসান শামীমের মতে,
‘প্রতিদিন বাসায় ব্রাজিলের পতাকা, স্টিকার,
ব্যান্ডেনাসহ নানা ধরনের জিনিস কিনে আনছি।
বাসায় খেলা দেখার সময়
নানাভাবে সেজে খেলা দেখতে বসব। স্ত্রীর
সঙ্গে প্রতিদিন দল নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে।
তবে সেটা মধুর ঝগড়া। বাসায়
সে একা পেরে দিচ্ছে না বলে আম্মাকে দলে ভেড়া
চেষ্টার করছে।’
এই খুনসুটি ফুটবলার আমিনুল হকের পরিবারেও
আছে৷ িতনি নিজে ব্রাজিলের সমর্থক কিন্তু
স্ত্রী ও ছেলে আর্জেন্টিনার৷ আমিনুল বলেন,
সারা দিন একে অন্যকে খোঁচাখুঁচি করি আমরা৷
এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক রেকর্ড পরিসংখ্যান
জানে৷ তাদের সঙ্গে জিততে বেশ বেগ পেতে হয়৷
খেলা শুরু হলে সবাই মিলে উপভোগ করার
ইচ্ছা আছে৷ তবে সমর্থন
দেওয়া বা খেলাকে কেন্দ্র
করে কোনো বিব্রতকর বিতর্কে না জড়ানোই
ভালো৷
এমনই আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল,
বিশ্বকাপের এ সময়ে বাসায় দলের পতাকা রাখা,
জার্সি পরে খেলা দেখা, নানা ধরনের খাবারের
আয়োজন, স্কোরকার্ড বানানো, কোন দল বাদ
পড়ল তার হিসাব কষাসহ অনেক কিছুর জন্যই
প্রস্তুত হচ্ছে ভক্তরা। ঘরে ঘরে মধুর এ মতবিরোধ
নিয়ে খেলার উত্তেজনা ধরে রাখতে চান
পুরো মাস।
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment