মানুষকে ভালবাসলেই
আল্লাহকে পাওয়া যায়
শরিফুল ইসলাম হিরন, সময়ের কণ্ঠস্বর
ঢাকা: প্রত্যেক ধর্ম প্রাণ মুসলমানেরই
স্বপ্ন থাকে একবার হজ করার।
তবে জাফরের উপলব্ধি কিছুটা ভিন্ন।
তিনি বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষদের
ধর্মানুরাগ ছিল অনেক বেশি।
যে কারণে তারা পায়ে হেঁটে প্রদেশের
পর প্রদেশ পেরিয়ে চলে গেছেন হজ
করতে।
ফরাজী বলেন, তাদের মতো আমিও
আল্লাহ’র প্রেমে নিজেকে নিয়োজিত
করতে চাই বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি,
সাইকেল চালিয়ে হজ করতে যাব।
একবার হজে যেতে পারলেই আমার
জীবন ধন্য।
কি বলে এই ষাটোর্দ্ধ লোক! অবাক
হওয়ার সময় দিলেন না। বললেন,
প্রস্তুতি হিসেবে প্রথমে ৬৪
জেলা ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন তিনি।
সাড়ে পাঁচ মাস পর ফিরে এসে,
পরবর্তীতে এভারেস্ট
বিজয়ী মূসা ইব্রাহিমের সঙ্গে আবারও
বেরিয়ে পরি দেশ ভ্রমণে। মুসার
সঙ্গে এ ভ্রমণে সময় লাগে এক মাস।
৬১ বছরের জাফর ফরাজীকে তরুণ
বলতেই হবে। কাঁচা-পাকা চুল-দাড়ির
সঙ্গে শক্ত সামর্থ শরীর আর চোখের
কোনে জয়ের তৃষ্ণা। আলখেল্লা পরিহিত
ফরাজীর ইচ্ছে শুনে ১৮ বছরের তরুণও
হয়তো আতঁকে উঠবেন!
ফরাজি বলেন, এরপর
সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র
তৈরি করতে থাকি। বয়স
হয়ে গেছে দীর্ঘ যাত্রা পথে মারাও
যেতে পারি, তাই সঙ্গে কাফনের কাপড়ও
রেখে দিয়েছি। যেখানে মারা যাব
সেখানেই আমার দাফন হয়ে যাবে।
মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণেই
হয়তোবা সমস্ত কাগজ-পত্র ঠিক
থাকার পরও
আমাকে ভিসা দেওয়া হচ্ছে না বলেও
আক্ষেপ করেন জাফর।
একইসঙ্গে আক্ষেপ করে বলেন, অনেক
প্রতিষ্ঠান বিনামূলে হজ্জ্ব
করতে লোকজন পাঠায়। অথচ
সহযোগিতার জন্য আমার
পাশে কাউকে পাইনি।
ভারত-পাকিস্তান-ইরান-ইরাক
হয়ে সৌদি আরব যেতে চার মাসের কিছু
বেশি সময় লাগবে, বিকল্প পথে ভারত-
চীন-আবগানিস্তান-ইরান-ইরাক
হয়ে সৌদি আরব যেতে পাঁচ মাসের
বেশি সময় লাগবে।
ভারত এবং ইরান ভিসা দিলেও
পাকিস্তান ভিসা দেয়নি। এর
প্রতিবাদে গত বছর
সেপ্টেম্বরে সাইকেল নিয়ে আজমির
শরীফ ঘুরে এসেছি। আবারও
চেষ্টা করছি পাকিস্তানের ভিসার জন্য।
তারপরও একটি দিনের অপেক্ষায়
রয়েছি, যেদিন পাকিস্তান
আমাকে ভিসা দেবে।
১৯৫৩
সালে মাদারীপুর
জেলার
কালকিনি উপজেলার
ডাসার
ইউনিয়নের
পূর্ব
কমলাপুর
গ্রামে জন্ম
তার।
দিন
মজুর
মৃত আলম ফরাজীর ছয় সন্তানের
মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
জাফর ফরাজীর পাঁচ বছর
বয়সে জীবিকার খোঁজে নারায়ণগঞ্জ
চলে আসে তার পরিবার। সেখানেই
গড়ে তোলেন আবাসস্থল।
১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জ বন্দর
কদমরসূল এলাকার একরামপুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করলেও অর্থ
সংকটে আর এগুতে পারেননি পড়া-লেখা।
সংসারের হাল ধরতে কাজ শুরু করেন
স্থানীয় দর্জির দোকানে। এরপর ১৯৭১
সালে ১৮ বছর বয়সে কুমিল্লার ৪ নম্বর
সেক্টর কমান্ডার মোহাম্মদ সেলিমের
অধীনে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ
স্বাধীনের পরে জীবিকার সন্ধানে ১৯৭৮
সালে চলে যান ভারতে,
পরবর্তীতে নিয়ে যান পরিবারও।
দীর্ঘ সময় পরে ২০০৭
সালে স্বপরিবারে দেশে এসে পৈত্রিক
ভিটায় ফিরে যান পাঁচ সন্তানের জনক।
শুরু করেন দর্জি এবং থান কাপড়ের
ব্যবসা। তিন বছরের ব্যবধানে আমূল
বদলে যান জাফর।
পৈত্রিক ভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
বিক্রি করে সমস্ত টাকা নিয়োগ করেন
সমাজ সেবায়। রাস্তা নির্মাণ, ব্রিজ-
কালভার্ট সংস্কার, পুকুর খনন, বাঁধ
নির্মাণ, বৃক্ষ রোপন করান। ২০১০
সালের অক্টোবর
মাসে যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে এলাকার
উন্নয়নমূলক নয়টি প্রকল্প দাখিল
করেন। যার মধ্যে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৭৮
হাজার ৪২৪ টাকার একটি প্রকল্প
অনুমোদন পায়।
সমাজ সেবী হয়ে ওঠার গল্প
বলতে গিয়ে জাফর বলেন,
ভারতে যাওয়ার পরে আজমীর
শরীফে গিয়ে শিখেছি মানুষকে ভালবাসলেই
আল্লাহকে পাওয়া যায়। তাই সব
বিক্রি করে মানুষের কল্যাণে ব্যয়
করে দেই। বাংলাদেশ সরকার যেমন
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে,
আমিও তেমন ডিজিটাল মাদারিপুরের
স্বপ্ন দেখি।
জাফর ফরাজীর পাঁচ সন্তানই
বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত।
সন্তানরা সংসারের হাল ধরার
পরে একটি স্বপ্ন নিয়ে ছুটছেন তিনি।
সমাজ সেবা করতে গিয়ে গ্রামের
লোকজন তাকে ডাকতে শুরু করে ছোট
যোগাযোগ মন্ত্রী নামে। কেবল এটুকুই
নয়। জাফরের মানবিকতার আরো পরিচয়
মেলে মর্মান্তিক
রানা প্লাজা বিধ্বস্তের ঘটনায়।
তিনি বলেন, আমার ৬১ বছরের
জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি।
টিভিতে দেখার
পরে ঘরে বসে থাকতে না পেরে দ্বিতীয়
দিনই এসে পৌঁছি রানা প্লাজায়। উদ্ধার
কর্মীদের সঙ্গে শেষ দিন পর্যন্ত কাজ
করি।
আল্লাহকে পাওয়া যায়
শরিফুল ইসলাম হিরন, সময়ের কণ্ঠস্বর
ঢাকা: প্রত্যেক ধর্ম প্রাণ মুসলমানেরই
স্বপ্ন থাকে একবার হজ করার।
তবে জাফরের উপলব্ধি কিছুটা ভিন্ন।
তিনি বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষদের
ধর্মানুরাগ ছিল অনেক বেশি।
যে কারণে তারা পায়ে হেঁটে প্রদেশের
পর প্রদেশ পেরিয়ে চলে গেছেন হজ
করতে।
ফরাজী বলেন, তাদের মতো আমিও
আল্লাহ’র প্রেমে নিজেকে নিয়োজিত
করতে চাই বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি,
সাইকেল চালিয়ে হজ করতে যাব।
একবার হজে যেতে পারলেই আমার
জীবন ধন্য।
কি বলে এই ষাটোর্দ্ধ লোক! অবাক
হওয়ার সময় দিলেন না। বললেন,
প্রস্তুতি হিসেবে প্রথমে ৬৪
জেলা ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন তিনি।
সাড়ে পাঁচ মাস পর ফিরে এসে,
পরবর্তীতে এভারেস্ট
বিজয়ী মূসা ইব্রাহিমের সঙ্গে আবারও
বেরিয়ে পরি দেশ ভ্রমণে। মুসার
সঙ্গে এ ভ্রমণে সময় লাগে এক মাস।
৬১ বছরের জাফর ফরাজীকে তরুণ
বলতেই হবে। কাঁচা-পাকা চুল-দাড়ির
সঙ্গে শক্ত সামর্থ শরীর আর চোখের
কোনে জয়ের তৃষ্ণা। আলখেল্লা পরিহিত
ফরাজীর ইচ্ছে শুনে ১৮ বছরের তরুণও
হয়তো আতঁকে উঠবেন!
ফরাজি বলেন, এরপর
সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র
তৈরি করতে থাকি। বয়স
হয়ে গেছে দীর্ঘ যাত্রা পথে মারাও
যেতে পারি, তাই সঙ্গে কাফনের কাপড়ও
রেখে দিয়েছি। যেখানে মারা যাব
সেখানেই আমার দাফন হয়ে যাবে।
মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণেই
হয়তোবা সমস্ত কাগজ-পত্র ঠিক
থাকার পরও
আমাকে ভিসা দেওয়া হচ্ছে না বলেও
আক্ষেপ করেন জাফর।
একইসঙ্গে আক্ষেপ করে বলেন, অনেক
প্রতিষ্ঠান বিনামূলে হজ্জ্ব
করতে লোকজন পাঠায়। অথচ
সহযোগিতার জন্য আমার
পাশে কাউকে পাইনি।
ভারত-পাকিস্তান-ইরান-ইরাক
হয়ে সৌদি আরব যেতে চার মাসের কিছু
বেশি সময় লাগবে, বিকল্প পথে ভারত-
চীন-আবগানিস্তান-ইরান-ইরাক
হয়ে সৌদি আরব যেতে পাঁচ মাসের
বেশি সময় লাগবে।
ভারত এবং ইরান ভিসা দিলেও
পাকিস্তান ভিসা দেয়নি। এর
প্রতিবাদে গত বছর
সেপ্টেম্বরে সাইকেল নিয়ে আজমির
শরীফ ঘুরে এসেছি। আবারও
চেষ্টা করছি পাকিস্তানের ভিসার জন্য।
তারপরও একটি দিনের অপেক্ষায়
রয়েছি, যেদিন পাকিস্তান
আমাকে ভিসা দেবে।
১৯৫৩
সালে মাদারীপুর
জেলার
কালকিনি উপজেলার
ডাসার
ইউনিয়নের
পূর্ব
কমলাপুর
গ্রামে জন্ম
তার।
দিন
মজুর
মৃত আলম ফরাজীর ছয় সন্তানের
মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
জাফর ফরাজীর পাঁচ বছর
বয়সে জীবিকার খোঁজে নারায়ণগঞ্জ
চলে আসে তার পরিবার। সেখানেই
গড়ে তোলেন আবাসস্থল।
১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জ বন্দর
কদমরসূল এলাকার একরামপুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করলেও অর্থ
সংকটে আর এগুতে পারেননি পড়া-লেখা।
সংসারের হাল ধরতে কাজ শুরু করেন
স্থানীয় দর্জির দোকানে। এরপর ১৯৭১
সালে ১৮ বছর বয়সে কুমিল্লার ৪ নম্বর
সেক্টর কমান্ডার মোহাম্মদ সেলিমের
অধীনে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ
স্বাধীনের পরে জীবিকার সন্ধানে ১৯৭৮
সালে চলে যান ভারতে,
পরবর্তীতে নিয়ে যান পরিবারও।
দীর্ঘ সময় পরে ২০০৭
সালে স্বপরিবারে দেশে এসে পৈত্রিক
ভিটায় ফিরে যান পাঁচ সন্তানের জনক।
শুরু করেন দর্জি এবং থান কাপড়ের
ব্যবসা। তিন বছরের ব্যবধানে আমূল
বদলে যান জাফর।
পৈত্রিক ভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
বিক্রি করে সমস্ত টাকা নিয়োগ করেন
সমাজ সেবায়। রাস্তা নির্মাণ, ব্রিজ-
কালভার্ট সংস্কার, পুকুর খনন, বাঁধ
নির্মাণ, বৃক্ষ রোপন করান। ২০১০
সালের অক্টোবর
মাসে যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে এলাকার
উন্নয়নমূলক নয়টি প্রকল্প দাখিল
করেন। যার মধ্যে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৭৮
হাজার ৪২৪ টাকার একটি প্রকল্প
অনুমোদন পায়।
সমাজ সেবী হয়ে ওঠার গল্প
বলতে গিয়ে জাফর বলেন,
ভারতে যাওয়ার পরে আজমীর
শরীফে গিয়ে শিখেছি মানুষকে ভালবাসলেই
আল্লাহকে পাওয়া যায়। তাই সব
বিক্রি করে মানুষের কল্যাণে ব্যয়
করে দেই। বাংলাদেশ সরকার যেমন
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে,
আমিও তেমন ডিজিটাল মাদারিপুরের
স্বপ্ন দেখি।
জাফর ফরাজীর পাঁচ সন্তানই
বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত।
সন্তানরা সংসারের হাল ধরার
পরে একটি স্বপ্ন নিয়ে ছুটছেন তিনি।
সমাজ সেবা করতে গিয়ে গ্রামের
লোকজন তাকে ডাকতে শুরু করে ছোট
যোগাযোগ মন্ত্রী নামে। কেবল এটুকুই
নয়। জাফরের মানবিকতার আরো পরিচয়
মেলে মর্মান্তিক
রানা প্লাজা বিধ্বস্তের ঘটনায়।
তিনি বলেন, আমার ৬১ বছরের
জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি।
টিভিতে দেখার
পরে ঘরে বসে থাকতে না পেরে দ্বিতীয়
দিনই এসে পৌঁছি রানা প্লাজায়। উদ্ধার
কর্মীদের সঙ্গে শেষ দিন পর্যন্ত কাজ
করি।
posted from Bloggeroid
No comments:
Post a Comment