Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Sunday, January 25, 2015

হায়রে বিয়ে! হায়রে লজ্জা!

প্রজন্মের ভাবনা : টম
অ্যান্ড জেরির খুব জনপ্রিয় একটি পর্ব
আছে , I am ugly.
কার্টুন টা আমার খুব প্রিয়।
আধা ঘণ্টার একটা কার্টুন। এটায় সেই
পিচ্চি লুতুপুতু হলুদ হাঁসখানা আছে,
যে নিজেকে অসুন্দর ভাবে এবং মনের
দুঃখে বারবার টমের
কাছে নিজেকে সঁপে দেয় যাতে টম
তাকে খেয়ে ফেলে। সে আর
বাঁচতে চায়না, কিন্তু বিপত্তি ঘটায়
জেরি। সে বারবার তাকে বাঁচায়
এবং নানাভাবে তাকেসাজিয়েদেখায়
যে তাকে সুন্দর লাগছে। কিন্তু
এতে তার মন গলেনা , সে তবুও
নিজেকে অসুন্দর মনে করে ।
সে বারবার আত্মহত্যা করতে চায়।
অবশেষে এই হাঁসকুলেরই একজন
রমণী কে দেখে সে নিজে কতোটা সুন্দর
বুঝতে পারে, এবং ২ জন
একসাথে মিলে যায়।
এই কার্টুন টা আসলে শিখায় ,
নিজেকে নিজের কাছে সব সময় ই
অসুন্দর মনে হয় , কিন্তু নিজের প্রকৃত
গুরুত্ব ও মর্যাদা তখনি বুঝা যায় যখন
তার সাথে মানসিকতা আর সব কিছুর
মিল আছে এমন কেউ সঙ্গী হয়। তাই
তো ইসলামে জীবনসঙ্গীকে একে অপরের
লেবাস
হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই
লেবাসের মাপ টা হওয়া চাই
একি রকম , এতে মানসিকতা ,
সামাজিক অবস্থান , আদর্শগত
বিশ্বাসের যদি গড়মিল হয়ে যায়
তাহলে মাপটাও যেমন বড় ছোট
হয়ে যায় , ঠিক তেমনি জীবন চলার
পথে ২ জন ২জনের সহমর্মী ,
সহকর্মী হওয়াটা খুব কঠিন হয়ে যায়।
কখনো কখনো জীবন বিধান ও
আদর্শকে ২ জন মানুষ ২ দৃষ্টিতে দেখে।
কারো কাছে যেটা স্বাভাবিক অপরের
কাছে তাই হয়ে যায় অস্বাভাবিক ।
বিয়ের আগে ও পরে ছেলে মেয়ের
মাঝে যেসব জিনিষ
নিয়ে মনোমালিন্য হয় তার বড়
একটি অধ্যায় জুড়ে আছে বউ
কি চাকরী করবে নাকি করবেনা!
এক্ষেত্রে সমাজে ২ রকম চিত্র
দেখা যায়
১- চাকরী বাধ্যতামূলক করতেই হবে
২- যতো মেধা বা যোগ্যতা বা দরকারই
থাকনা কেন চাকরী করা যাবেনা।
এসব বিষয় নিয়ে তর্কে বিতর্কে বহু
বিয়ে হওয়ার আগেই
ভেঙ্গে যেতে দেখেছি, আবার
অনেকেই বিয়ের পর ও এসব
মনোমালিন্য নিয়ে একই ছাদের
নিচে অসন্তুষ্ট হয়ে জীবন
কাটিয়ে দিচ্ছে।
ঘটনা – ৬
তানিয়া জীবনের
প্রতি কিছুটা ত্যাক্ত হয়ে গেছে। কম
বয়সে ডাক্তারি পড়ুয়া পাত্র
পেয়ে বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিলো।
কিন্তু তানিয়া তখন সবে মাত্র উচ্চ
মাধ্যমিকের ছাত্রী । তার
পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা। আর
মুসা ও তখনো প্রতিষ্ঠিত
হয়নি বলে সংসার
পরে করা হবে বলে তানিয়া বাবার
বাড়ি ই রয়ে গেলো।
তানিয়া ভালো ছাত্রী, তাই
জীবনে কিছু করার খুব আগ্রহ তার।
ভর্তি হোল গণযোগাযোগ ও
সাংবাদিকতায়। ওদিকে মুসা ও বেশ
ভালো ভাবে ডাক্তারি পড়তে লাগলো।
দিন গুলো ভালোই কাটছিল ওদের।
সংসারের তাড়না নেই, কিন্তু ২ জন ২
জনের ভালো বন্ধু হয়ে পথ চলা। কিন্তু
বাঁধ সাধল মুসার হটাত আকস্মিক
পরিবর্তন ।
আচমকা একদিন জীবন সম্পর্কে তার
দৃষ্টি ভঙ্গি বদলে গেলো। তানিয়ার
পড়ালেখা তার অর্থহীন
মনে হতে লাগলো । মেয়ে মানুষ
এতো পড়ে কি করবে? তানিয়ার আবার
নিজেকে নিয়ে খুব
আশা সে ভালো কলামিস্ট হবে, তার
পড়ালেখা ধ্যান ধারনাই যে এসব
নিয়ে! কিন্তু মুসা অন্য জগতের মানুষ।
দেশের পরিস্থিতি , রাজনৈতিক
অবস্থা কিছুই যে তাকে আকৃষ্ট করেনা।
সে শুধু ৫ ওয়াক্ত নামাজ ঠিক
মতো পড়তে পারলেই খুশি। যখন
তানিয়া সমাজের দুঃস্থ অসহায়
মানুষদের জন্য কিছু করার কথা ভাবে,
তখন মুসা ভাবে আল্লাহ ই এদের
অভিভাবক আল্লাহ ই দেখবেন। যখন
রাসুলের অবমাননায়
তানিয়া পত্রিকায় কলাম লেখে ,
মুসা তা দেখার পর
আচ্ছা মতো বকে দেয় ওকে। বলে যে-
তোমাকে কে বলেছে এসবের প্রতিবাদ
করতে? আল্লাহ্র রাসুল
কি কখনো নিজের বিরুদ্ধে কেউ কিছু
বললে তার জবাব দিয়েছেন?
এরকম প্রতি পদে পদে মুসা আর
তানিয়ার মনোমালিন্য হতে থাকে।
মুসা তানিয়াকে হাত
মোজা পা মোজা পড়তে বলে,
বলে বিয়ের পর অপ্রয়োজনে ঘর
থেকে বের হওয়া যাবেনা। কিন্তু,
তানিয়া সেসব মানতে চায়না। এমন
কি , কোনদিন ওর
লিখা ছাপা হলে সেদিন মুসার
চেহারার দিকে তাকানো যায়না।
মুখটা সে প্যাঁচার মতো করে রাখে।
তানিয়া কোন কলিগের সাথে বা কোন
বন্ধুর সাথে কথা বললে মুসার
পিত্তি জ্বলে যায়।
মুসা বলে তার
সংসারে টি ভি থাকবেনা , খবর
দেখা যাবেনা। এসব ঘরে থাকলেই
অশান্তি হবে, তানিয়া দেশ আর
রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাবে।
তানিয়ার কাজ শুধু বাচ্চা জন্ম দেওয়া ,
আর মানুষ করা। এর মধ্যে মুসার
ডাক্তারি পড়া শেষ হয়ে গেলো। শত
রাগারাগির মধ্যেও তারা ছোট
একটা ফ্ল্যাটে তাদের সংসার শুরু
করলো।
এভাবেই দিন যেতে থাকে। মুসা ভীষণ
ঘারতেরা একটা ছেলে।
রাগারাগি হলে সে কোনদিন আগ
বাড়িয়ে রাগ ভাঙ্গায় না। এমন
কি কথায় কথায় তালাক প্রসঙ্গ
টেনে আনে। রাত
বিরাতেতানিয়াকেবাসাথেকেকিংবামুসার
জীবন থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। মোট
কথা তাদের রাগারাগি সব সময় ই
বিপদ সীমা অতিক্রম করে করে দশা ।
বছর ২ পরে তানিয়া পি এইচ ডির
স্কলারশিপ পেলো কানাডায়। কিন্তু
মুসা এতে কিঞ্চিৎ
খুশি কিংবা আগ্রহী না। অনার্স পাশ
করেছে এই তো বেশি আবার পি এইচ
ডি করতে হবে কেন!
এমনি মেয়ে মানুষের এতো অতিরিক্ত
জ্ঞান তার অসহ্য লাগে। তাদের জন্য
রান্না শেখা আর বাচ্চা পালাটাই
জরুরী। মুসার প্রবল আপত্তিতে ওর আর
পি এইচ ডি করা হয়না।
তানিয়ার একটা জাতীয়
দৈনিকে চাকরী হয়ে যায়।
যেখানে পর্দা ঠিক রেখেও কাজ
করা যাবে। কিন্তু মুসা এতে কিছুতেই
রাজি হয়না। সে তানিয়াকে শর্ত দেয়
হয় সে চাকরী করবে না হয়
মুসাকে বেঁছে নিবে।
তানিয়া কিছুটা দিশেহারা হয়ে যায়।
তার জীবনের চাওয়া পাওয়া কিছুই
যে তার জীবন সঙ্গীর সাথে মিলেনা,
মিলেনা কোন আদর্শ ও। তাহলে এই
একসাথে বেঁচে থাকার অর্থ কি!
মুসা তানিয়ার
চাওয়া পাওয়া গুলোকে বুঝতে পারেনা,
তেমনি তানিয়াও অনেক চেষ্টা করেও
মুসার বোঝাসম শর্ত
গুলো মেনে নিতে পারেনা।
ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হয়।
তানিয়া মুসার জীবন
থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
একটি সংসার গড়ার আগেই মিসমার
হয়ে যায় নিজেদের আদর্শগত অমিলের
কারনে।
আমাদের আশেপাশে শিক্ষিত ভদ্র
পরিবার গুলোতেই এই গল্পের
মতো হাজারও গল্প
শুনতে পাওয়া যাবে। যাদের
সংসারে এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে নিত্য
অশান্তি লেগেই থাকে।
অনেকটা বেগম রোকেয়ার সেই
প্রবন্ধটার মতো,
যেখানে বলা হয়েছিলো স্বামী যখন
ঋণ ভারে জর্জরিত তখন
স্ত্রী ভাবছে কীভাবে বালিশের
আরেকটা কুশন বানানো যায়।
সাহিত্তের পাতায় পাতায় জীবন
সঙ্গীর সাথে মানসিকতার
অমিলকে একটা অভিশাপ হিসেবেই
দেখা হয়েছে। রক্তাক্ত
প্রান্তরে ইব্রাহিম কারদির
সাথে জোহরা বানুর মিলের প্রধান
অন্তরায় ছিল আদর্শিক দ্বন্দ্ব।
এবং সেই দ্বন্দ্ব তারা জীবনভর
চেষ্টা করেও শোধরাতে পারেন নি।
তাই আপনি যখন আপনার
জীবনসঙ্গী বেঁছে নিবেন তখন অবশ্যই
আদর্শগত মিল খুঁজে নেওয়ার
চেষ্টা করবেন, তাহলে বিয়ের এই
সম্পর্কটা আপনাকে দিবে আপনার
মনের কথা গুলোকে ভাগ করে নেওয়ার
সুযোগ, আপনার স্বপ্নে আপনার
সঙ্গী কেও সঙ্গিনী করে নেওয়ার
সুযোগ। অন্যথায় জীবন
হয়ে যাবে নরকের মতোই , কারন এসব
ক্ষেত্রে সেক্রিফাইছ
কিংবা কম্প্রমাইজ করাটা খুব কঠিন
হয়ে দাড়ায় ।
শেষ করছি ইউটিউবের একটা ভিডিওর
কথা বলে, ভিডিওটির নাম caring
husband.
ভিডিও টি দেখুন
ভিডিওটি হয়তো অনেকেই
দেখে থাকবেন। ২দম্পত্তির
স্বামী স্ত্রী একসাথে যাচ্ছিলেন।
আচমকা একজনের হাত অপরজনের
স্ত্রীর গায়ে লাগলো। এর পর ২ জন পুরুষ
মিলে একে অপরের বউকে মারা শুরু
করলো। এই হচ্ছে অতি যত্নের ফসল।
পরিশেষে ২ দম্পত্তির ২ জন মহিলাই
গুরতর আহত হোল। এর
থেকে বুঝা যায়,excess of anything is very
bad.আমরা যে কোন কিছুই
তা যদি অতিরিক্ত করি তা কখনোই
ভালো ফল বয়ে আনেনা। হোক
তা দৃষ্টিভঙ্গি সংক্রান্ত , হোক
তা নিজের আদর্শ , হোক তা বিয়ের
আনুষ্ঠানিকতা ,
কিংবা সাদা কালো রং।
আমরা মানুষ, আমাদের কারো পক্ষেই
১০০% পারফেক্ট হওয়া সম্ভব নয়। আপনার
জীবন সঙ্গীর ও কোন না কোন অভাব
থাকবেই ,এটাই স্বাভাবিক। সেসব
মেনে নিয়ে কম্প্রোমাইজ করে, অপরের
মতের প্রতি শ্রদ্ধা বজায়
রেখে পাশাপাশি কল্যাণময় জীবন
কাটিয়ে দিতে পারার মতো ধৈর্য আর
সহনশীল চরিত্রই খুব বেশি দরকার
আমাদের সমাজে।
লেখিকা – সহ-সম্পাদিকা,
নারী বিষয়ক পোর্টাল মহীয়সী ডট কম

posted from Bloggeroid

No comments: