মোবাইল ফোন ব্যবহার
করে দল বেঁধে ইন্টারনেট
ব্রাউজ করছে তরুণ-তরুণীরা।
ছবিটি সংসদ ভবন
এলাকা থেকে তোলা : নাসিম
সিকদার
অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে মোবাইল
ফোনের অপব্যবহার। ‘মোবাইল
ভিডিও’ নামক ভয়ঙ্কর উপসর্গ
ভাইরাসের
মতো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজে।
মোবাইলের মাধ্যমে ব্যক্তিগত
তথ্য, কথোপকথন, ভিডিও চিত্র
মুহূর্তেই চলে যাচ্ছে সর্বত্র। আর
এর প্রধান টার্গেট তরুণী ও
মহিলারা। এর হাত ধরে কলুষিত
হচ্ছে গোটা যুবসমাজ। সহজলভ্য
মোবাইল ভিডিওর হাত
ধরে তরুণেরা প্রবেশ
করছে নিষিদ্ধ জগতে।
নেশা থেকে পেশাদার
অপরাধীতে পরিণত হচ্ছে তারা।
সম্ভ্রম
হারিয়ে নারীরা বেছে নিচ্ছেন
আত্মহননের পথ। ভাঙছে সংসার,
ধ্বংস হচ্ছে পরিবার।
বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য
বিভাগের হিসাব অনুযায়ী বিগত
২০১৩ সালে মোবাইলের
নেতিবাচক ব্যবহারের
ফলে সারা দেশে ৫৫ জন
তরুণী আত্মহননের পথ
বেছে নিয়েছেন। তাদের
মধ্যে স্কুল ও কলেজ ছাত্রী,
গৃহিণী ও
পেশাজীবী নারী রয়েছেন। এ
ছাড়াও দেশের বিভিন্ন থানায়
মোবাইলের
মাধ্যমে হয়রানিসংক্রান্ত
মামলা দায়ের হয়েছে ২০৩টি।
র্যাবের দেয়া তথ্য ও সুনির্দিষ্ট
অভিযোগের
ভিত্তিতেএবংভুয়ারেজিস্ট্রেশনের
দায়ে নভেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত
বিটিআরসি বন্ধ করেছে প্রায় ১৫
লাখ মোবাইল সিম। ইনফরমেশন
অ্যান্ড কমিউনিকেশন
টেকনোলজি (আইসিটি) অ্যাক্ট
২০০৯-এর বলে গোয়েন্দা পুলিশ ও
র্যাব গত বছর আটক করেছে ৬৮৭
জনকে। সিআইডি তদন্ত
করছে ১৯টি স্পর্শকাতর মামলা।
আইসিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী সাইবার
ক্রাইমের দায়ে দণ্ডিত হলে ১০
বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ
এক কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের
বিধান রয়েছে। প্রকারান্তরে এ
ধরনের অপরাধের
কারণে যদি কারো অস্বাভাবিক
মৃত্যু হয় তবে হত্যা অথবা হত্যার
প্ররোচনার
(ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ও
৩০৪ ধারা) অভিযোগেও অভিযুক্ত
হতে পারে, যার
শাস্তি যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ডও
হতে পারে। আইন থাকলেও
তা প্রয়োগে দুর্বলতার
কারণে কোনোভাবেই প্রতিরোধ
করা যাচ্ছে না এ অপরাধ। উপরন্তু
দিন দিন বেড়েই চলছে এর
মাত্রা। এ
প্রসঙ্গে গোয়েন্দারা বলছেন,
প্রতিদিনই আপগ্রেডেড
হচ্ছে মোবাইল টেকনোলজি। আর
সেগুলো ব্যবহার করছে সাইবার
অপরাধীরা। মূলত সে কারণেই
তাদের ধরা দিন দিন দুরূহ
হয়ে পড়ছে।
যেকোনো স্মার্ট ফোনের
(অ্যানড্রয়েড ফোন)
মাধ্যমে ভিডিও চিত্র ধারণ ও
ডাউনলোড সম্ভব। মাত্র তিন
হাজার টাকায় এখন এ ধরনের
একটি মোবাইল সেটের মালিক
হতে পারেন যে কেউ। মোবাইল
ব্যবহারকারীর
কোনো শ্রেণীবিন্যাস না থাকায়
যে কেউই মাত্র ৫০ টাকায়
যেকোনো অপারেটরের একটি সিম
কিনে ইন্টারনেটসহ মোবাইল
ব্যবহার করতে পারেন। ২০০৮
সালের আগে নতুন সিম
নিতে হলে ফরম পূরণ, ছবি ও
ন্যাশনাল আইডি কার্ডের
ফটোকপি জমা দেয়ার বিধান ছিল
না। সাইবার ক্রাইমের ৮০
শতাংশই হচ্ছে মোবাইল ফোন ও
ইন্টারনেটের (ফেসবুক) মাধ্যমে।
অপরাধের এ দু’টি উপকরণই এখন
হাতের নাগালের মধ্যে।
মোবাইলের এ সহজলভ্যতাই এ
ফোনের নেতিবাচক ব্যবহরের
প্রধান কারণ বলে মনে করেন
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রধানত
তিন প্রক্রিয়ায় মোবাইলের
অপব্যবহারের শিকার
হচ্ছে মানুষ।
তন্মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ
সংঘটিত হচ্ছে মোবাইল
ক্যামেরার মাধ্যমে। দ্বিতীয়
স্থানে রয়েছে, স্মার্ট ফোন ও
মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে অশ্লীল
ছবি ডাউনলোড ও তা তরুণদের
মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। একটি চক্র
বিষয়টিকে বাণিজ্যিক
ফায়দা লুটতে ব্যাপক ব্যবহার শুরু
করেছে। তৃতীয়ত,
মোবাইলে আলাপচারিতার
মাধ্যমে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল ও
নারীদের উত্ত্যক্তকরণ।
সাম্প্রতিক
কয়েকটি ঘটনা প্রতিবেদনে উল্লেখ
করা হলো।
টার্গেট টিন-এজেড কিশোরী-
তরুণীরা : মোবাইল ফোনের
অপব্যবহারের প্রধান শিকার স্কুল
ও কলেজের উঠতি বয়সের তরুণীরা।
একশ্রেণীর বখাটে তরুণ
মোবাইলের মাধ্যমে কিশোরী-
তরুণীদের আপত্তিকর
ছবি তুলে সেগুলো ইন্টারনেটের
মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
কোনোকোনোক্ষেত্রেব্ল্যাকমেইলিংকরেতাদের
পরিবারের কাছ
থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়
করছে। বেশির ভাগ
ক্ষেত্রে সামাজিকতা ও নিজ
সন্তানের
কথা চিন্তা করে অপরাধীদের
অন্যায় আবদার
মেনে নিতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকাশ
পেয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা আইনের
আশ্রয় নিচ্ছেন
না বা কাউকে জানতেও দিচ্ছেন
না। অনেক তরুণী আবার লোকলজ্জার
ভয়ে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ।
বিশেষজ্ঞদের মতে কলেজ-
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেছেলেমেয়েদের
অবাধ মেলামেশা এ ধরনের
অপরাধের সুযোগ করে দিচ্ছে।
একটি বাস্তব ঘটনা ও পরিণতি :
ঢাকার স্বনামধন্য গার্লস স্কুলের
ছাত্রী মৌমিতা (ছদ্মনাম)।
বাবা সরকারের অডিটর জেনারেল
অফিসের কর্মকর্তা। বসবাস
ইস্কাটন গার্ডেনে। নবম শ্রেণীর
ছাত্রী মৌমিতার পরিচয় হয়
বেইলী রোডে একটি পেসট্রিশপের
সেলস বয় মুশফিকের সাথে।
মৌমিতার প্রায়ই যাতায়াত
সেখানে। দু-একবার বান্ধীদেরও
নিয়ে গেছে পেসট্রি খাওয়াতে।
যাওয়া আসায় পরিচয় হয় মুশফিকের
সাথে। দেখতে সুদর্শন মুশফিক ভাব
জমাতে শুরু করে মেয়েটির সাথে।
‘আপু ফ্রেন্ডদের
নিয়ে এলে আগে থেকে ফোন
দিয়ে আসবেন’Ñ এ
কথা বলে নিজের মোবাইল
নাম্বারটি আগে দিয়ে দেয়
মৌমিতাকে। মেয়েটি টোপ
গেলে এবং ক’দিন পরই নিজের
মোবাইল থেকে মুশফিককে ফোন
করে জানায়, ‘আমরা পাঁচ ফ্রেন্ড
আসছি, আমার পছন্দের
পেসট্রি আছে তো?’ মৌমিতার
মোবাইল নাম্বার সেভ
করে ফেলে মুশফিক দ্রুত। এর পরের
ঘটনাগুলো ঘটে খুব দ্রুত।
মৌমিতা একা গেলে মুশফিক তার
কাছ থেকে বিল নিতো না। উপরন্তু
দামি পেসট্রি, কেক পার্সেল
করে দিয়ে দিতো। ২০১১ সালের
জন্মদিনে মৌমিতা সবচেয়ে বড়
ভুলটি করে বসে। সে নিজের
বাসার
ঠিকানাদিয়েমুশফিককেবলেএকটিকেক
দিয়ে আসতে।
মুশফিক
নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র বলে পরিচয় দেয়
এবং এটি তার পারটাইম জব
বলে জানায়। কয়েক মাসের মধ্যেই
মৌমিতা ও মুশফিক বন্ধু হয়ে যায়।
তারা এক সাথে ঘুরতে যায়
টিএসসিতে। সেখানে মুশফিক তার
দুই বন্ধুর সাথে পরিচয়
করিয়ে দেয়। এক দিন স্কুল
শেষে মুশফিক
মৌমিতাকে নিয়ে যায় সংসদ ভবন
এলাকায়। সেখানেই মুশফিকের
মোবাইলে কল আসে তার এক বন্ধু,
যার বাসা শ্যামলীতে, সে গুরুতর
অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাৎক্ষণিক
মুশফিক মৌমিতাকে জানায়,
আমাকে যেতে হচ্ছে। অসুস্থ
বন্ধুকে দেখতে যেতে আগ্রহ
দেখায় মৌমিতা। মোক্ষম সুযোগ
পেয়ে মুশফিক
তাকেনিয়েসিএনজিতেকরেচলেযায়
শ্যামলী রিংরোডের
একটি অ্যাপার্টমেন্টে। পৌঁছার
পর তার বন্ধু ভান করে যে,
সারপ্রাইজ দিতে অসুস্থতার
কথা বলে তাদের
এখানে এনেছে সে। তাদের জন্য
প্রচুর খাবারদাবারের আয়োজনও
ছিল। মৌমিতা তাৎক্ষণিক
চলে আসতে চাইলেও মুশফিক
তাকে অনুরোধ করে বন্ধুর
কথা রাখতে। কিছু খাওয়াদাওয়ার
পরই তারা চলে আসবে।
মৌমিতা জানায়, সে শুধু এক গ্লাস
পানি খাবে, অন্য কিছু নয়। তখন
তাকে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা জুস
এনে দেয়া হয়। মেয়েটি সরল
মনে জুস খাওয়ার কিছুক্ষণের
মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এরপর আর তার কিছু মনে নেই।
ঘণ্টাখানেক পর জ্ঞান
ফিরে দেখে তার গায়ের কাপড়
এলোমেলো এবং এক ধরনের
অস্বস্তি তাকে গ্রাস করেছে।
জ্ঞান হারানোর আকস্মিকতায়
সে সময় সে কিছু বুঝতে পারেনি।
মুশফিক তাকে সিএনজিযোগে তার
বাসার
সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়।
বাসায় ফিরে মৌমিতা অসুস্থ
হয়ে পড়ে।
তাকেহলিফ্যামিলিহাসপাতালেভর্তিকরাহলেপ্রাথমিক
টেস্টে শনাক্ত হয়
মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে। ঘটনার
দুই সপ্তাহ পরের কথা। মেয়েটি ও
তার পরিবার যখন বিপর্যস্ত ঠিক
তখনই আসে ফোনটি। মৌমিতার
ফোনটি রিসিভ করেন তার পিতা।
ঘটনার আকস্মিকতায় তার জ্ঞান
হারানোর উপক্রম। ফোনের অপর
প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আপনার
মেয়ে একটা নষ্টা, তার নগ্ন
ভিডিও চিত্র আমাদের
হাতে রয়েছে, ৫০ লাখ
টাকা দিলে সব দিয়ে দেবো,
নইলে ফেসবুকের
মাধ্যমে সারা দুনিয়ার মানুষ
দেখবে।’ পরদিন কুরিয়ার
সার্ভিসযোগে একটি সিডি আসে তার
বাসায়। সিডির দৃশ্য
দেখেনিজেকেধরেরাখতেপারেননিমৌমিতার
মা-বাবা কেউই। অসুস্থ হয়ে পড়েন
তারা। অচেতন
মৌমিতাকে ধর্ষণের পুরো চিত্র
ধারণ করা হয় মোবাইল ফোনের
ক্যামেরায়।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। মেয়ের
সম্ভ্রমহানি ও লোকলজ্জার
ভয়ে বাবা বাধ্য হন অপরাধীদের
সাথে সমঝোতায় যেতে।
তিনি পুলিশকে না জানিয়ে ১০
লাখ টাকার
বিনিময়ে দফারফা করেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ায়
মেয়েকে টরেন্টোতে খালার
কাছে পাঠিয়ে দেন বাবা। তার
পারিবারিক
সূত্রে বিষয়টি ঢাকা মহানগর
গোয়েন্দা পুলিশ পর্যন্ত
জানাজানি হলেও মেয়ের
বাবা কোনো মামলা দায়ের
না করায় এবং তার বিশেষ
অনুরোধে পুলিশ
বিষয়টি নিয়ে এগোতে পারেনি।
অশ্লীল মেমোরি কার্ডের
ছড়াছড়ি : উঠতি বয়সের তরুণদের
হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে অশ্লীল
মেমোরি কার্ড। মাত্র সাড়ে চার
শ’ টাকা ব্যয় করলেই যে কেউ এই
মেমোরি কার্ড নিজের
মোবাইলে ঢুকিয়ে নিতে পারেন।
দুই জিবি এই মেমোরি কার্ডের
বিশেষত্ব হচ্ছে এতে আগে থেকেই
দেশী-বিদেশী দুই শতাধিক ব্লু-
ফিল্ম ও স্থিরচিত্র দেয়া থাকে।
সহজলভ্য হওয়ায় স্কুল-কলেজের
উঠতি বয়সের ছাত্রছাত্রীদের
হাতে হাতে চলে গেছে এ
মেমোরি কার্ড-সমৃদ্ধ মোবাইল
ফোন সেট। বেশ কিছুদিন থেকেই
একটি কমন চিত্র
দেখা যাচ্ছে পাড়া-মহল্লা, স্কুল,
কলেজে। ছেলে ও মেয়েরা চার
পাঁচজনের গ্রুপ করে এক জায়গায়
বসে মাথা গুঁজে মোবাইলে এসব
দেখছে। স্কুল-কলেজের ব্যাক
বেঞ্চে, পার্কে, রাস্তার
পাশে ফুটপাথে এক
সাথে মাথা গুঁজে মোবাইল ভিডিও
দেখার চিত্র অহরহ। এই
মেমোরি কার্ড বাসাবাড়ি পর্যন্ত
ঢুকে গেছে। ছেলেমেয়েরা মা-
বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বইয়ের
আড়ালে লুকিয়ে, রিডিং টেবিলের
ড্রয়ারে রেখে, টয়লেটে,
গ্যারেজে ড্রাইভার-
সিকিউরিটি গার্ডরা একত্র
হয়ে এসব অশ্লীল ভিডিও দেখছে।
যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এসব
মেমোরি কার্ড : প্রধানত চায়না,
ভারত ও মিয়ানমারের বেশ কিছু
সফ্টওয়্যার
কোম্পানি মেমোরি কার্ডে অশ্লীল
চিত্র ঢুকিয়ে বাংলাদেশের
মার্কেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ঢাকায়ও এসব কার্ড কপি হচ্ছে।
মেমোরি কার্ডে এ ধরনের
নেতিবাচক চিত্র
সংযোজনে তাদের
যে দু’টি উদ্দেশ্য কাজ
করছে তা হচ্ছে, প্রধানত
বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান হওয়া।
যে কার্ডটির বাজারমূল্য ৩২০
থেকে ৩৫০ টাকা, ছবি সংযোজনের
কারণে সেটি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০
থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
দ্বিতীয়ত, ছবি সংযোজনের
ফলে মেমোরি কার্ড
বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
বিদেশ থেকে মোবাইল এক্সেসরিজ
আমদানিকারকেরা মেমোরি কার্ড
অবাধেই নিয়ে আসছে,
কেননা আমদানির সময়
সেগুলো পরীক্ষার
কোনো ব্যবস্থা নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার
মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন
প্লাজা ও উত্তরা রাজউক
কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের পঞ্চম
তলায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী এ
অশ্লীল কার্ড আমদানি ও
বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত।
মূলত তাদের মাধ্যমেই
সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এসব
মেমোরি কার্ড। চাহিদা ও লাভ
দু’টিই বেশি হওয়ায় পাড়া-
মহল্লায় মোবাইল সেট বিক্রির
দোকান, রিপেয়ার সেন্টার
এবং লোড বা রিচার্জ সেন্টারেও
পাওয়া যাচ্ছে এসব
মেমোরি কার্ড। ঢাকায় বেশ কিছু
সার্ভিস সেন্টার
রয়েছেযেখানেপুরনোমেমোরিকার্ডেএসব
অশ্লীল ভিডিও লোড
করে দেয়া হচ্ছে মাত্র ২০০
টাকায়।
কয়েকটি ওয়েবসাইটের
মাধ্যমে প্রকাশ্যেই
বিদেশী কয়েকটি সফটওয়্যার
কোম্পানি এসব মেমোরি কার্ড
বিক্রয় করছে। রামপুরার
বনশ্রীতে একটি প্রতিষ্ঠান (এন...
ট্রেডিং)
সম্প্রতি চায়না থেকে সাড়ে তিন
লাখ পিস ‘ট্রিপল এক্স
মেমোরি কার্ড’ আমদানি ও
বাজারজাত করে। এই কোম্পানির
আমদানিকৃত ‘দাবা খাবা’
নামে সিমকার্ড মোবাইল
বাজারে ব্যাপক সমাদৃত।
ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া : অশ্লীল
মেমোরি কার্ড মোবাইল
ফোনে সংযোজনের
ফলে সেগুলো দেখে বিরূপ
প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে তরুণ-
তরুণীদের মধ্যে। অল্প বয়সেই
তাদের নৈতিক স্খলন ঘটছে।
একে একে বেছে নিচ্ছে তারা মাদক
ও অপরাধের পথ। গাড়ির
ড্রাইভার, সিকিউরিটি গার্ড,
কেয়ারটেকাররাএগুলোদেখেনিজেদের
নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নিজের
চাকরিদাতার স্ত্রী-
কন্যা সন্তানের শ্লীলতাহানিসহ
তাদের হত্যা পর্যন্ত করছে। মূলত
এসবের কারণেই ধর্ষণ ও
ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধ
মারাত্মকভাবে বেড়েছে।
অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মিসকল
যন্ত্রণা : মোবাইল ফোন ব্যবহার
করে নানা অপরাধ হচ্ছে।
তন্মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ,
মুক্তিপণ ও চাঁদাবাজি ব্যাপক
আকার ধারণ করেছে।
অপরাধীরা ভুয়া রেজিস্ট্রেশন
নাম্বারের সিম ব্যবহার
করে একের পর এক অঘটন
ঘটিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক
অপহরণগুলিতে দেখা গেছে,
মোবাইলের মাধ্যমে ফাঁদ
তৈরি করে অথবা মিথ্যা তথ্যের
মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা,
ব্যবসায়ী বা সমাজের বিশিষ্ট
ব্যক্তিদের অপহরণ করা হচ্ছে।
অনেক ক্ষেত্রে তরুণীদের
মাধ্যমে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের
ফাঁদে ফেলা হচ্ছে।
মোবাইলে কথোপকথনের মাধ্যমেই
প্রতারণার জাল বিস্তার
করা হচ্ছে। এ ছাড়াও
মোবাইলে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের
নামে চাঁদা আদায়, হুমকিধমকির
ব্যাপকতা পেয়েছে। সাধারণত
ইন্টারনেট কলের মাধ্যমে এসব কল
আসায় অপরাধীদের ধরা সম্ভব
হচ্ছে না। মোবাইল বিকাশের
মাধ্যমেও চাঁদা আদায় হচ্ছে। অপর
যে অপরাধটি সংঘটিত
হচ্ছে নিয়মিত তা হলো, মিসকলের
মাধ্যমে মহিলা ও তরুণীদের
উত্ত্যক্ত করা। বিটিআরসি যত সিম
বন্ধ করেছে তার ৮০ শতাংশই এ
অভিযোগের কারণে। এ অপরাধ
দমনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর
গোয়েন্দাবিভাগেএকটিমনিটরিংসেলও
কাজ করছে।
যে কারণে মোবাইল ক্রাইম
থামানো যাচ্ছে না : মোবাইল
ক্রাইম দিন দিন বাড়ছেই। কঠোর
আইন থাকা সত্ত্বেও শুধু
ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের সিমকার্ড ও
আইএমইআই নাম্বারবিহীন মোবাইল
সেট অবাধে ব্যবহারের ফলে এ
অপরাধ দমন করা যাচ্ছে না।
সরকারের একটি শীর্ষ
গোয়েন্দা সংস্থা টেলিকম
মিনিস্ট্রিতে এ
প্রসঙ্গে প্রতিবেদন দেয়ার পর
২০০৮ সালে বিটিআরসি নতুন
নীতিমালা করে। এতে সিমকার্ড
পেতে হলে ন্যাশনাল আইডি ও
ছবিসহ ফরম পূরণ বাধ্যতামূলক হয়।
কিন্তু বিটিআরসির অভিযোগ
মোবাইল অপারেটরদের
অসহযোগিতা ও ব্যবসায়িক
মনোভাবের
কারণে তারা পুরোপুরি সফল
হতে পারছে না। নতুন কৌশল
হিসেবে একই আইডি কার্ডের
ফটোকপি ও ছবি ব্যবহার
করে একজন গ্রাহকই অসংখ্য সিম
তুলতে পারছেন। একজন গ্রাহক
সর্বোচ্চ কয়টি সিম ব্যবহার
করতে পারবেন
সেব্যাপারেকোনোবাধ্যবাধকতানাথাকায়
সুযোগটি নিচ্ছে অপরাধীরা।
অপারেটররা বিজ্ঞাপন দিয়েই
তাকে উৎসাহিত করছে।
সম্প্রতি ভিওআইপি চক্র
ধরতে গিয়ে এর সদস্যদের কাছ
থেকে শত শত সিম উদ্ধার করা হয়।
সিম ব্যবহারের
বিষয়টিএখনোপুরোপুরিনিয়ন্ত্রণেনাআসায়
এ অপরাধ কমছে না। অপর
দিকে আইএমইআই নাম্বারবিহীন
চাইনিজ ও ভারতীয়
কমদামি মোবাইল সেট ব্যবহার
করায় যেসব মোবাইলের
মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত
হচ্ছে তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
এ ছাড়াও ইদানীং মোবাইল
ফোনে ইন্টারনেট কলের কারণেও
অপরাধীদের ধরা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞ মতামত : এ
প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অপরাধ
বিশেষজ্ঞ ও পুলিশের সাবেক
আইজি ও তথ্যসচিব আব্দুল কাইয়ুম
বলেন, মোবাইল ফোনসেট,
সিমকার্ড ও মেমোরি কার্ডের
সহজলভ্যতার কারণে দিন দিন এ
অপরাধ বাড়ছে। এ
ব্যাপারে তিনি অভিভাবকদের
অধিক সচেতন হওয়ার পরামর্শ
দেন। পুলিশের বর্তমান
আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার
বলেন, সাইবার ক্রাইম
প্রতিরোধে পুলিশ যথেষ্ট সচেষ্ট
রয়েছে। বহুলাংশেই এ অপরাধ
কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এ
লক্ষ্যে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ
ও র্যাব কাজ করছে।
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment