১৬ মে’র পরে দেড়
কোটি ‘অবৈধ’
বাংলাদেশির
নিয়তি কী তবে অনিশ্চিত ?
সময় : । প্রকাশের তারিখ :
14/05/2014
ঢাকা: সুস্পষ্টভাবে সাম্প্রদায়িক
রাজনীতির কৌশল নিলেও শেষ পর্যন্ত
নরেন্দ্র মোদির ভারতীয়
জনতা পার্টিই (বিজেপি) দিল্লির
মসনদে বসতে যাচ্ছে। সেক্যুলার
রাজনীতির ধ্বজাধারী কংগ্রেসের শুধু
পরাজয়ই নয়,
রীতিমতো ভরাডুবি হতে যাচ্ছে তাদের।
গত সোমবার
লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের
শেষ দিন বুথফেরত ভোটারদের মতামত
জরিপে এমনটাই ইঙ্গিত
পাওয়া গেছে।
এখন উদ্বেগের বিষয় হলো,
ভারতে বসবাসকারী প্রায় দেড়
কোটি ‘অবৈধ’ বাংলাদেশির
ভাগ্যে কী পরিণতি অপেক্ষা করছে?
কারণ নির্বাচনী প্রচারণায়
বিজেপি বিশেষ করে দলটির
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র
মোদি প্রচারণার প্রধান ইস্যু
করেছিলেন অবৈধ বাংলাদেশি।
তিনিসহ তার দল ক্ষমতায় গেলে এসব
বাংলাদেশিকে তাড়ানোর
প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছেন।
তাদের এই প্রচারণাকে উসকানিমূলক
বিবেচনায় দেশে বিদেশে ব্যাপক
সমালোচনা এবং খোদ নির্বাচন
কমিশন ব্যবস্থা নেয়ার
প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন শুনা গেলেও
মোদি তাতে মোটেও কর্ণপাত
করেননি।
গত সোমবার বুথ ফেরত সমীক্ষায়
(এক্সিট পোল) দেখা গেছে, বিজেপির
নেতৃত্বে এনডিএ জোট এবারের
নির্বাচনে ২৮১টি আসন পেতে পারে।
যেখানে বিজেপি একাই
পাচ্ছে ২৪৯টি।
সেক্ষেত্রে বিজেপি ক্ষমতায়
গেলে অবৈধ বাংলাদেশিদের
বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ
করা হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাব
দিতে রাজি হননি ঢাকায় ভারতীয়
দূতাবাসের কনস্যুলার (রাজনীতি ও
তথ্য) সুজিত ঘোষ। ১৬ মে
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরই এ
বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে- বলেন
সুজিত।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল
বাংলা মেইলের
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই
আশংকার কথা ।
মঙ্গলবার কনস্যুলার সুজিত ঘোষের
সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ
করা হলে তিনি বলেন, ভারতে চলমান
নির্বাচনে অবৈধ বাংলাদেশিদের
নিয়ে নানামুখি প্রচারণা হচ্ছে।
তবে পুশব্যাক নিয়ে দু’দেশের
মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়
এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া নাও
হতে পারে পারে বলে জানান এই
ভারতীয় কূটনীতিক।
তবে বর্তমানে কতজন
বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে বসবাস
করছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান
দূতাবাসের হাতে নেই বলে স্বীকার
করেন সুজিত। অবশ্য ২০০৯
সালে ভারত সরকারের সর্বশেষ
জরিপে এক কোটি ৫০ লাখ অবৈধ
বাংলাদেশির তথ্য পাওয়া যায়
বলে জানান তিনি।
ভারতের নাগরিক হিসেবে এবারের
নির্বাচনে অনেক
অভিবাসী বাংলাদেশি ভোট
দিয়েছেন, তাহলে কেন তাদের অবৈধ
বলা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের
জবাবে সুজিত বলেন, ‘এটা দূতাবাসের
কথা কথা নয়। ভারত সরকারের
সর্বশেষ জরিপের ভিত্তিতেই এ
কথা বলা হচ্ছে। তাছাড়া জাতিসংঘও
সর্বশেষ ২০১১ সালে এ বিষয়ে জরিপ
পরিচালনা করে। যেখানে অবৈধ
বাংলাদেশির সংখ্যা ৩০ লাখের
বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’
এদিকে, ভারতীয় জনতা পার্টির
(বিজেপি) পক্ষ
থেকে দাবি করা হচ্ছে ভারতে কমপক্ষে এক
কোটি বাংলাদেশি অবৈধভাবে বসবাস
করছে। এদের মধ্যে ৩০ লাখেরও
বেশি বসবাস করে আসামে।
এছাড়া মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম,
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া,
মুর্শিদাবাদসহ
পুরো ভারতে আরো কমপক্ষে ৭০ লাখ
বাংলাদেশি বসবাস করে।
‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের ফেরত
পাঠানোর সম্ভাবনা কতটুকু এমন
প্রশ্নের
জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের
অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ
টেলিফোনে এই সুত্রকে বলেন,
‘১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬৪
সালের সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গা এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের
সময় বাংলাদেশের একটি বৃহৎ
জনগোষ্ঠী ভারতে আশ্রয় নেয়। তাদের
মধ্যে অল্প সংখ্যক ফিরে আসলেও
অনেকেই ফেরেননি, এ কথা সত্য।
তাদের সংখ্যা এক কোটির কম হবে।
চার দশকেরও বেশি সময়
ধরে যারা ভারতে বসবাস করছেন
তাদের কোনভাবেই এখন আর অবৈধ
বলার সুযোগ থাকে না। সেদিক
বিবেচনায় এক
কোটি মানুষকে বাংলাদেশে ফেরত
পাঠানোর সম্ভাবনা নেই বললেই
চলে। মোদির এ বক্তব্য মূলত
একটি রাজনৈতিক বক্তব্য। এ
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন
করতে গেলে বাংলাদেশের
সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যেমন
খারাপ হবে তেমনি নিজ ভূখণ্ডেও
অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হওয়ার
আশঙ্কা থাকে।’
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক
প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই
স্পর্শকাতর। তবে পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের কাছে এ সংশ্লিষ্ট
কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।’
তিনি জানান, ভারতের পক্ষ থেকে গত
দুই বছরে সীমান্ত
দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার
সময় ৯২৩ বাংলাদেশিকে আটক
করে পরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই
সময়ে বাংলাদেশে অবৈধ
অনুপ্রবেশের দায়ে ৫৩৮
ভারতীয়কে আটক করে পরে ফেরত
পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া, দীর্ঘদিন
ধরে ভারতে বসবাসকারী যাদের
অবৈধ
বলা হচ্ছে তারা আসলে প্রত্যেকেই
বর্তমানে ভারতের নাগরিকত্ব লাভ
করেছেন। সেদিক বিবেচনায় আনলে,
বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর
কাজটি খুবই দূরহ হবে বলে মনে করেন
পররাষ্ট্র সচিব।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৯
সালে বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের
সংখ্যা নির্ণয় করে,
যেখানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায়
পাওয়া গেছে ভারতীয়- ৫ লাখেরও
বেশি। এ তথ্যও জানালেন পররাষ্ট্র
সচিব শহিদুল হক।
হিন্দু মৌলবাদী দল বিজেপি সব
সময়ই সাম্প্রদায়িক
রাজনীতি করে এসেছে। ঐতিহাসিক
বাবরি মসজিদ ভাঙায় তৎকালীন
বিজেপি সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল
বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এছাড়া গুজরাট দাঙ্গায় কয়েক হাজার
মুসলিমকে নির্মমভাবে হত্যা ও
ধর্ষণের খলনায়ক বলা হয় নরেন্দ্র
মোদিকেই- যিনি সবচেয়ে বড়
গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের
প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
এই চরিত্রের কারণে মুসলিমদের ভোট
পাবে না এটা বিজেপিও খুব
ভালো করে জানে। তাদের
ভরসা ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা। সেকারণেই
এবারের নির্বাচনী প্রচারণায়
‘অবৈধ’ বাংলাদেশি হটানোর জিগির
তুলে থাকতে পারে বিজেপি। কারণ
আসামের বোরো এলাকাসহ যেসব
বাংলাদেশি ভারতে আছেন তাদের
প্রায় সবাই-ই মোসলমান। ঠিক এ
কারণেই বাংলাদেশি তাড়ানোর
বিষয়টি শুধুই ভোটের রাজনীতির
কৌশল বলে ধরে নেয়া যায়। কারণ
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বেশ
স্থিতিশীল এবং সঙ্গতিপূর্ণ বলেই
বারবার প্রমাণ করেছে তারা।
তারপরও সেই বিজেপি যখন বিপুল
ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার
মসনদে বসে তখন ভারতের সেক্যুলার
ভাবমূর্তি নিঃসন্দেহেই প্রশ্নবিদ্ধ
হয়।
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment