টাটকা সবুজ পতার সাথে টকটকে লাল লিচু।
দেখলে লোভ সামলানো দায়। এরপর আদরের
সন্তান কিংবা পরিবারের সদস্যদের জন্য
চড়া দামে ক্রেতারা এই লিচু কিনে নিয়ে যান। কিন্তু
ক্রেতাদের কজনই বা জানেন টকটকে লাল লিচু
পাকানো হয়েছে কেমিক্যাল দিয়ে। তারপর
মেশানো হয় বিষাক্ত ফরমালিন।
শুধু লিচু নয় নগরীর বাজারে এখন
প্রকাশ্যে কেমিকেল ও ফরমালিন মিশ্রিত
মৌসুমী ফল দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। কেবল
মৌসুমী ফলই নয় নগরীর বিভিন্ন হোটেল ও
রেস্টুরেন্টে বিক্রি হচ্ছে কেমিক্যাল মিশ্রিত
ভেজাল খাবার।
অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই ভেজালের
বিরুদ্ধে দেরিতে হলেও অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত
নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এলক্ষ্যে একটি ট্রাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে।
সরেজমিন নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার,
চৌহাট্টা, আম্বরখানা, শিবগঞ্জ, টিলাগড়,
মদীনা মার্কেট ও
কদমতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- লিচু, আম,
আনারস, জামসহ নানা জাতের মৌসুমী ফলের
সমারোহ। ক্রেতারা মৌসুমী ফলের
দোকানগুলো ভিড় করছেন। দাম চড়া হলেও
মৌসুমী ফল কিনছেন তারা।
সবুজ পাতার সাথে লাল লিচুর আঁটি নজর
কাড়ছে সবার। এই লিচু কেনার ৩দিন পরও লিচুর
কালারের ধরন বদলায় না। এমনকি লিচু ঠিক প্রথম
দিনের মতোই টাটকা রয়ে যায়। তবুও এই লিচু
খাচ্ছে মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশি মুনাফার লোভে অসাধু
ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে নামানোর পর পরই
লিচুতে কেমিকেল মিশিয়ে দেন। এর পর
মেশানো হয় ফরমালিন। কেমিক্যাল ও ফরমালিন
মেশানোর ফলে এক সপ্তাহ পরও লিচুর কালারের
ধরন পাল্টায় না।
রাজশাহী দিনাজপুর থেকে আসা এই লিচু ৭ দিনেও
পচে নষ্ট হয় না। পাইকারি বাজারে আড়তদারদের
পর সিলেটের ফলের পাইকারি আড়তে আবারও
লিচুতে ফরমালিন মেশানো হয় বলে একাধিক সূত্র
জানিয়েছে।
তাছাড়া লিচুর মতো করে আম, আঙ্গুর, আপেল,
মাল্টা, জাম, কলাতেও দেদারছে কেমিক্যাল
মেশানো হচ্ছে। বর্তমান বাজারে পাওয়া আম
পুরোপুরি কেমিক্যাল মিশ্রিত। কারণ বাজার
থেকে কিনে নেয়ার পর ৩দিন বাসায় রাখলেও
আমে পচন ধরে না।
সূত্রমতে, পাহাড়ী কড়মচার বিচিকে গার্মেন্টেসের
কাপড়ে ব্যবহৃত রং মিশিয়ে চিনিসহ আগুন
দিয়ে তৈরি করা হয় ভেজাল চেরিফল। এই ভেজাল
চেরি ফল নগরীতে বিক্রি হয় আবার চড়া দামে।
রমজানকে সামনে রেখে কেমিক্যাল ও ফরমালিনের
কদরও বেড়েছে। নগরীর অভিজাত রেস্তোরাসহ
নিম্নমানের হোটেল-রেস্তোরায় কেমিক্যাল
মিশিয়ে নানা জাতের খাদ্য সামগ্রি তৈরি করা হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে কেমিক্যাল
ফরমালিন মিশ্রিত ফল ও খাবারের মধ্য
দিয়ে ভোক্তারা নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হন।
এর ফলে শরীরের নার্ভগুলো অতিমাত্রায় দুর্বল
হয়ে পড়ে। কিডনি, লিভারসহ শরীরের অঙ্গ
প্রত্যঙ্গ দ্রুত নষ্ট হতে থাকে। ফলে দেখা দেয়
পেটের পীড়া। এক সময় কেউ কেউ
মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রামন্ত হন।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এনিয়ে রহস্যজনক
নীরবতা পালন করে আসছেন।
এমনকি বিএসটিআইকে এ বিষয়ে শক্ত
কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অবশ্য
দেরিতে হলেও এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন
একটি পদক্ষেপ নিয়েছে।
সাম্প্রতি সিলেটে জেলা প্রশাসনের
একটি বৈঠকে কেমিক্যাল ও ফরমালিনের
বিরুদ্ধে একটি ট্রান্সফোর্স গঠন করা হয়।
এজন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এই
ট্রান্সফোর্সের সদস্য হিসেবে বিএসটিআই, সিভিল
সার্জন, সিটি কর্পোরেশন ফল ব্যবসায়ী সমিতির
ও র্যাবের প্রতিনিধি কাজ করবেন। আজ বুধবার
থেকে এই ট্রাস্কফোর্স মাঠে নামার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসটিআই সিলেট আঞ্চলিক অফিসের
সরকারী পরিচালক এস.এস. আবু সাঈদ বলেন,
কেমিক্যাল ও ফরমালিনের বিরুদ্ধে ট্রাস্কফোর্স
গঠন করা হয়েছে। বাজারে মৌসুমী ফল যতোদিন
বিক্রি হবে ততোদিন এই ট্রান্সফোর্সের অভিযান
চলবে। তবে এর বাইরে ভেজালবিরোধী অভিযানও
চলবে বলে জানান তিনি।
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment