Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Monday, December 8, 2014

সাত বছর পর কুয়েতে ফের উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার

সুখবর প্রতিদিন ডেস্ক :
প্রায় সাত বছর পর কুয়েতে ফের উন্মুক্ত
হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার।
কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত
মেজর জেনারেল আসহাব উদ্দীন (এনডিসি,
পিএসসি) জানিয়েছেন,
আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে ফের
কুয়েতে নতুন করে বাংলাদেশি শ্রমিক
নিয়োগ শুরু হতে পারে।
খবর কুয়েত থেকে প্রকাশিত আরব টাইমস ও
কুয়েত টাইমসের। একই খবর নিশ্চিত
করেছে আরবি দৈনিক আল জারিদা-ও।
রবিবার প্রকাশিত কুয়েত টাইমসে বলা হয়,
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফরকালে বাংলাদেশের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এ
বিষয়ে কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী ও
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালিদ
আল সাবাহর সঙ্গে বৈঠক করেন।
আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত উপসাগরীয় দেশগুলোর
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সম্মেলনে অংশ
নিতে সাবাহ তখন আরব আমিরাতে ছিলেন।
বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বরাতে আল
জারিদা জানায়, ওই
বৈঠকে কুয়েতি উপপ্রধানমন্ত্রীর
সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে নতুন করে শ্রমিক
নেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা হয়
বাংলাদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। এসময় শেখ
সাবাহ আল খালিদ ইতিবাচক সাড়া দেন।
আরব টাইমসের খবরে বলা হয়,
বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত কুয়েতি মিডিয়াকে জানান,
বাংলাদেশের মানুষ শুধু কৃষিক্ষেত্রেই দক্ষ
নয়; চিকিৎসা, প্রকৌশল আর কারিগরির বিভিন্ন
ক্ষেত্রেও তাদের দক্ষতা আছে।
তবে এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ
করলে মেজর জেনারেল আসহাব উদ্দীন
(এনডিসি, পিএসসি) , ‘এ বিষয়ে আমি এখনই কিছু
বলতে চাই না। এটা মাননীয়
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়
আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। এখনও এমওইউ
স্বাক্ষর হয়নি। তাই একটু সময় লাগবে।’
কুয়েতি পত্রিকায় প্রকাশিত শনি ও রবিবারের
নিউজ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,
‘সেটা তারা তাদের মন্ত্রণালয়ের
সূত্রে করেছে। আমার
সঙ্গে আগে হওয়া কথার সূত্র
ধরে হয়তো নিউজ করেছে।
যথা সময়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ
বিষয়ে সবাইকে জানাবেন।’
তবে ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতে আমাদের
শ্রমবাজার খুলে যাচ্ছে এটা প্রায় নিশ্চিত
বলে জানান ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
বর্তমানে উপসাগরের তেলসমৃদ্ধ
ধনী দেশ কুয়েতে সরকারি হিসাব মতে ১
লাখ ৯০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক আছেন। গত
সাত বছর ধরে কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিক
নিয়োগ বন্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক
মাসগুলোতে দুই শতাধিক শ্রমিক
কুয়েতে গেছেন বিশেষ ব্যবস্থায়।
তাদেরকে সেখানে কৃষি শ্রমিক ও রাখাল
হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশি মিজান
আল রহমান জানান, এটা বাংলাদেশিদের জন্য
অত্যন্ত খুশির খবর।
কুয়েতের স্পোর্টস গ্রুপ ও চ্যাম্পিয়ন
হেলথ ফিটনেসের কর্মকর্তা মিজান বলেন,
‘অনেকগুলো বছর পর বাংলাদেশিদের জন্য
ফের কুয়েতের দরজা খুলতে যাচ্ছে।
তবে সামনে যাতে এটা আর বন্ধ না হয়
সেজন্য যারা কুয়েতে এখন আছেন
এবং নুতন করে যারা আসবেন
তাদেরকে সচেতন
থাকতে হবে যাতে আমাদের ব্যাপারে কারও
নেতিবাচক ধারণা না হয়। আর
একইসঙ্গে সরকারকেও কার্যকর পদক্ষেপ
নিতেহবেযাতেরাজনীতিনিয়েএখানেদলাদলিবন্ধ
হয়।’
কুয়েতের শিল্প এলাকা সুলাইবিখাতে কর্মরত
সাধারণ শ্রমিক খোকন বলেন,
‘এখানে বাংলাদেশিরা আওয়ামী লীগ-বিএনপির
পক্ষে লড়াই করে না। প্রতিটা দলেই
কমপক্ষে ৩টি গ্রুপ আছে। একই দলের
গ্রুপিংয়ের সূত্রে হাঙ্গামাগুলো হয়। আর
মারামারিগুলো সাধারণত হয় বিভিন্ন
পুনর্মিলনী বা স্বাধীনতা-বিজয় দিবসের
অনুষ্ঠানে। এসব ঘটনা কুয়েতি মিডিয়ায় ছাপা হয়,
পুলিশ আসে, ধরপাকড় করে বাংলাদেশিদের,
যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আমাদের
ভাবমূর্তিতে।’
এ প্রসঙ্গে কুয়েত সিটিতে বসবাসরত মিজান
আল রহমান আরও বলেন, ‘ইউরোপ-
আমেরিকায় বাংলাদেশিরা রাজনীতি করে করুক,
ওখানকার পরিবেশ অন্যরকম আর যেসব
বাংলাদেশি সেখানে থাকেন তাদের সামাজিক
অবস্থানও অন্যরকম। কিন্তু
মধ্যপ্রাচ্যে প্রধানত শ্রমিক শ্রেণির মানুষই
বেশি বাংলাদেশের। এখানকার পরিবেশ, আইন,
মানুষের আচরণও অন্যরকম। তাই অহেতুক
দুদিন পর পর বাঙালিদের
অনুষ্ঠানে রাজনীতি নিয়ে মারামারি-পিটাপিটির
ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ
কারণে এখানে বাংলাদেশিদের
রাজনীতি চর্চাটা বৃহত্তর স্বার্থেই বন্ধ
করা উচিৎ।’
মিজান আর খোকন দুজনই জানান, বাংলাদেশিদের
ভাবমূর্তি নষ্ট করতে একশ্রেণির ভারতীয়
আর পাকিস্তানি সব সময়েই উন্মুখ
হয়ে থাকে। অপরাধ অন্যরা করলেও
দেখা যায় বাংলাদেশিদের জড়িয়ে নিউজ
হচ্ছে, পুলিশে অভিযোগ যাচ্ছে। তারা আরও
অনুরোধ করেন, সরকার যেন এখানে দক্ষ
আর বিভিন্ন ট্রেড জানা লোক পাঠায়।
এতে আমাদের বাজার ভাল
হবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের
জন্য এইসব দক্ষ শ্রমিকরা অভিভাবকের
ভূমিকা রাখতে পারবেন। কারণ, দক্ষ
শ্রমিকদের বেতন ভালো, মর্যাদাও উন্নত।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি শ্রমিকরা ১৯৭৬
সালে প্রথমবারের
মতো কুয়েতে যাওয়া শুরু করেন। এরপর
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ২০০৭ সাল পর্যন্ত
দেশটিতে চার লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক
চাকরি নিয়ে গেছেন। ২০০৬ সালের
অক্টোবরে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি হয়
বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার ওপর। এরপর বিরুদ্ধ
পরিবেশের কারণে অনেকে চলেও
আসেন সেখান থেকে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কিছু
‘অনিয়মের’ অভিযোগে ২০০৭ সাল
থেকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক
নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় কুয়েত
সরকার। অবশ্য ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু
লোক নিয়মিত কুয়েতে গেলেও সংখ্যায়
তা ছিল খুবই কম।
কুয়েতে কর্মরত প্রবাসীরা জানান,
ভিসা উন্মুক্তকরনের
পেছনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক
কুয়েত সফর বড় ভূমিকা রেখেছে।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরলস
প্রচেষ্টাও রয়েছে। বিশেষ
করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর
জেনারেল আসহাব উদ্দীনের
তৎপরতা এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবিদার।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতদেরও
উচিৎ এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা।
প্রসঙ্গত, কুয়েত রাজতন্ত্রের দেশ।
সেখানে মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, অবরোধ
করা সম্পূর্ণ নিষেধ। সব ধরনের অনুষ্ঠানের
জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি নিতে হয়।
বিভিন্ন সময়ে নিজেদের সভা-
সমাবেশে মারামারি, হাঙ্গামা ছাড়াও বিভিন্ন
অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, অবরোধ,
দূতাবাসে হামলা, অবৈধভাবে কুয়েত
প্রবেশসহ নানাবিধ কারণে বিভিন্ন
অভিযোগে ২০০৬ সালের অক্টোবর
থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য
কুয়েতের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়।
তৈলসমৃদ্ধ কুয়েত বিশ্বের অন্যতম
ধনীদেশ। এক কুয়েতি দিনার
বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৮০ টাকা প্রায়, যা পৃথিবীর
সবচেয়ে বেশি মূল্যমানের মুদ্রা।
খবর সুত্র – আরব টাইমস, কুয়েত টাইমসে,
বাংলা ট্রিবিউন ।

No comments: