বাজেট প্রস্তাবের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল
মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, তার সরকার উচ্চাভিলাষী,
তিনি নিজেও উচ্চভিলাষী এবং তার দেয়া প্রতিটি বাজেটই
উচ্চাভিলাষী।
তার উচ্চাভিলাষ সব সময়ই সার্থক হয়েছে বলে দাবি করেন
তিনি।
শুক্রবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর এক
সংবাদ সম্মেলন মন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে তার ‘উচ্চাভিলাষ’
পূরণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “উচ্চাভিলাষ দেশের জন্য ভাল। দেশের
মানুষের জন্য ভাল। প্রথম বছর থেকেই
আমি উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়েছি। আমি উচ্চাভিলাষী; আমার
সরকার উচ্চাভিলাষী। আমার সব বাজেট উচ্চাভিলাষী।
“তবে আমরা শুধু উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়েই বসে থাকিনি।
ব্যয় করার সামর্থ্যও দ্বিগুন করেছি। আমাদের উচ্চাভিলাষ
সব সময় সার্থক হয়। পাঁচ বছরে তা প্রমাণ করেছি। এবারও
করব।”
বাজেট নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা-
সিপিডি এবং অর্থনীতিবিদদের সমালোচনার জবাবে মুহিত
বলেন, “প্রথম থেকেই আমাদের অর্জন অসাধারণ। ব্যয়
করার সামর্থ্য আছে। এটাই আমাদের সরকারের চরিত্র,
এটি বজায় রাখা হবে।”
সকালে সংবাদ সম্মেলন করে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত
বাজেটকে ‘লক্ষ্য বিলাসের বাজেট’
বলে সমালোচনা করে সিপিডি।
এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী মন্তব্য
জানতে চাইলে উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এটা কোন
মন্তব্যই নয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।”
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ
জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সিপিডি’র সংশয়ের জবাব
দিতে গিয়ে মুহিত আরও রেগে গিয়ে বলেন, “সিপিডি’র এই
অভিযোগ অত্যন্ত অন্যায়। আমরা কখনই তথ্যের উপর
খোদগিরি করিনি। এখানে সংশয় বা প্রশ্নের কোন কারণ
নেই।
“পরিসংখ্যান বুরো হিসাব করে যেটা পেয়েছে সেটাই প্রকাশ
করেছে।”
img
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার সরকারের দ্বিতীয়
মেয়াদের প্রথম বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। দুই
মেয়াদে টানা ছয়টি বাজেট দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করলেন তিনি।
এরশাদের সময় দুটিসহ তার দেয়া বাজেটের সংখ্যা দাঁড়াল
আটে।
মুহিতের এবারের বাজেটের আকার ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬
কোটি টাকা। যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য
ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা,
যা জিডিপির ৫ শতাংশ।
এই ঘাটতি মেটানো হবে বিদেশি ঋণ, সঞ্চয়পত্র
বিক্রি এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণ থেকে।
প্রথা অনুযায়ী বাজেটের পরদিন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য,
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকতাদের
নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন অর্থমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর ডান পাশে বসেছিলেন
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
আর বাম পাশে ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম
মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) ও অর্থ প্রতিমিন্ত্রী এ এ
মান্নান।
পেছনের সারিতে বসেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
আতিউর রহমান, অর্থ সচিব ফজলে কবীর, জাতীয় রাজস্ব
বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন,
ভারপ্রাপ্ত পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম।
বিকেল সোয়া ৪টায় শুরু হয়ে আড়াই ঘণ্টার সংবাদ
সম্মেলনে প্রায় ৩০ জন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন
মুহিত।
মূল্যস্ফীতি বাড়লেও করমুক্ত আয়সীমা কেন
বাড়ানো হলো না?— এক সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “একমাত্র বাংলাদেশ
ছাড়া করমুক্ত আয়সীমা কোনো দেশেই ঘন ঘন পরিবর্তন হয়
না। আমি চেয়েছিলাম ১০ বছরের জন্য একটি নির্দিষ্ট
কাঠামো করতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজি না হওয়ায়
সেটি সম্ভব হয়নি।”
আমদানি করা মোবাইল ফোন সেটে ১৫ শতাংশ মূল্য
সংযোজন কর (মূসক) আরোপের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন,
দেশের ১৫-১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মোবাইল ব্যবহার
করে ১০ কোটি। আর যারা মোবাইল ব্যবহার করেন তারা এই
ক্ষুদ্র কর আরোপে আপত্তি করবেন না। এটি খুব সহজেই
আদায় করা সম্ভব।
এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, “স্থানীয়
পর্যায়ে এখন সংযোজিত মোবাইল ফোন সেটে ১৫ শতাংশ
মূসক থাকলেও আমদানি পর্যায়ে ছিল না। এই বৈষম্য দূর
করতেই আমদানি করা সেটে মূসক বসানো হয়েছে।”
কৃষি খাতে বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে কম বেড়েছে কেনো-
জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “আমাদের কৃষি খাত একান্তই
ব্যক্তিমালিকানা খাত। এই খাতে আমরা দেই প্রণোদনা।
শিল্প খাতেও আলাদা করে বরাদ্দ নেই।
কৃষিতে আমরা যা দেই, তা হল ভর্তুকি।
“তবে এখানে আমি একটা কথা বলতে চাই,
কৃষি মন্ত্রণালয়কে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এ
খাতের জন্য যখন যা লাগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তাই
যোগান দেয়া হয়।”
‘জানুয়ারির পর থেকে দেশে যে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ
করছে- আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে’-
প্রত্যাশা করে মুহিত বলেন, “যে করেই হোক রাজনৈতিক
হানাহানি-সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। এটা দুষ্ট কালচার।
এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে।
“তবে আশার কথা হচ্ছে- জনগণ এগিয়ে এসেছে। জানুয়ারির
নির্বাচনের পর দেশে যে শান্তি ফিরে এসেছে তা জনগণের
মতামতের ফল। জনগণ হানাহানি-সহিংসতা থেকে পরিত্রাণ
চায়।”
img
আমার কোন খেদ নেই: মতিয়া
সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দের
বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “আমার কোন খেদ
নেই। কৃষির জন্য আমি যখন যা চেয়েছি- তা-ই পেয়েছি।
“২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখন অনেক
টাকা ভর্তুকি দিয়ে সারের দাম কমানো হয়। সারের দাম এখন
স্বাভাবিক থাকায় আগের চেয়ে বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
আর তাই বরাদ্দ বাড়ছে না।”
তিনি বলেন, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ২৫ শতাংশ
ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, কৃষিঋণের সুদ ১১ থেকে কমিয়ে ৮
শতাংশ এবং বিভিন্ন ধরনের বীজের আমদানি শুল্ক ৮
থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।
“এই হিসাবগুলো যোগ করলে কৃষি খাতে মোট বরাদ্দ আগের
চেয়ে অনেক বড় বলে মনে হবে।
“সে কারণেই আমি জোর দিয়ে বলছি, সব মিলিয়ে কৃষি খাত
ছোট হচ্ছে না, বরং চারদিক থেকে সাহায্য করে একে সমৃদ্ধ
করা হচ্ছে।”
মঞ্চে না থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল
ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান,
গওহর রিজভী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসেন
ভূইঞাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার উর্ধবতন
কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
Posted via BN24Hour