Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Sunday, September 21, 2014

 তেলের সমীকরণ

পল রবার্টস
শুকিয়ে আসছে তেলকূপ। বাড়ছে চাহিদা। কোন
অনিশ্চয়তার অন্ধকারে চলেছি আমরা? ন্যাশনাল
জিওগ্রাফিক পত্রিকা থেকে ভাষান্তর করেছেন
জুলফিকার হায়দার।
ভয় ধরানো আবিষ্কারটা হলো ২০০০ সালে।
আবিষ্কারক তেল বিশেষজ্ঞ সাদাদ আল হুসেইনি।
তিনি তখন সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল
কোম্পানি ‘সৌদি আরামকো’র অনুসন্ধান ও উৎপাদন
বিভাগের প্রধান। তেল কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতের
উৎপাদন নিয়ে সব সময় যে বড় বড় কথা বলে আসছে,
শুরু থেকেই অবশ্য তার বিরোধিতা করে আসছেন
হুসেইনি। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে ২৫০টির
মতো তেলকূপের তথ্য নাড়াচাড়া করেছেন তিনি।

পৃথিবীর তেলের ক্ষুধার বেশিরভাগই মেটায় এই
কূপগুলো। তেলকূপগুলোতে ক’গ্যালন তেল অবশিষ্ট
আছে আর কত দ্রুত সেটুকুও কমছে তা হিসাব
কষে দেখেছেন তিনি। হিসাব কষেছেন নতুন কূপ
নিয়েও সামনের দিনগুলোতে যেগুলো অনেক তেল
উগরাবে বলে বগল বাজাচ্ছে তেল কোম্পানিগুলো।
হিসাব-টিসাব কষে হুসেইনির উপসংহার হলো তেল
বিশেষজ্ঞরা হয় ভুল তথ্য নিয়ে মজে আছেন
নইলে এটা সেটা দিয়ে একটা ধোঁয়াটে ধারণা দিচ্ছেন।
পরিষ্কার করছেন না কিছুই।
অনেক বড় বড় ভবিষ্যৎবেত্তা বলছেন তেলের
উৎপাদন প্রতি বছরই বেশ ভালোই বাড়ছে।
চাহিদার সাথে বেশ মানানসই। কিন্তু হুসেইনির
হিসাব-নিকাশ বলছে ভিন্ন কথা। উৎপাদন
রেখা এখন সমান, ঊর্ধ্বমুখী নয়। এ অবস্থাও
অনাদিকাল থাকবে না। বছর ১৫ পর
ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে এই রেখা। এই পতন
ঠেকানো অসম্ভব।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেলের রিজার্ভ
যেখানে সেই সৌদি আরামকোর কাছে এমন কথা কেউ
আশা করেনি। সোজা হিসাবে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত
যে তেল পাওয়া গেছে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ
জমানো সৌদি আরামকোতে। পরিমাণে প্রায় ২৬০
বিলিয়ন ব্যারেল। বলা হতো আরো বহু বছর
সমানে তেল উঠালেও এই রিজার্ভের তেমন
গায়ে লাগবে না। কিছু বাণিজ্যিক সূত্রে অবশ্য
জানা গেছে সৌদি তেলমন্ত্রী হুসেইনের এই
রিপোর্টকে তেমন গুরুত্ব দেননি।
পরে হুসেইনি আরামকো থেকে অবসরও নিয়েছেন।
এখন তিনি একজন ইন্ডাস্ট্রি কন্সালটেন্ট। কিন্তু
হুসেইনির কথা যদি সত্য হয়,
তাহলে সস্তা তেলে চলমান এই পৃথিবীর জটিল
ব্যবস্থা, প্রতিরা, যোগাযোগ থেকে খাদ্য
উৎপাদনসব কিছুর জন্যই নাটকীয় কিছু অপো করছে।
খুব বেশি সময় সে জন্য হাতে নেই।
তেল নিয়ে এ রকম ভয়াবহ ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্য
হুসেইন একাই করেননি। বহু বছর ধরেই তেল
বিষারদরা বলে আসছেন পৃথিবীর পুরো রিজার্ভের
অর্ধেক খালি হয়ে গেলে মাটির তলা থেকে তেল
উত্তোলন খুবই কঠিন হয়ে যাবে। এক সময়
ব্যাপারটা রীতিমতো অসম্ভবও হয়ে পড়বে বৈকি।
বৈশ্বিক তেলের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন
প্রতিদিনই বাড়ছে। ১৯০০ সালে যেখানে উৎপাদন
হতো এক মিলিয়ন ব্যারেলের সামান্য কিছু বেশি,
সেখানে এখন উৎপাদন হচ্ছে ৮৫ মিলিয়ন ব্যারল।
এই বাড়তি উৎপাদন এক দিন থমকে দাঁড়াতে বাধ্য।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় তেল আমদানিকারক
দেশগুলো যেভাবে সংরতি তেল রিজার্ভগুলোর
দিকে হাত বাড়াচ্ছে তাতে আমরা প্রস্তুত
থাকি বা না থাকি একটা তেলশূন্য ভবিষ্যৎ
আমাদের জন্য অপো করছে।
হতে পারে সেটা বিপর্যস্ত অর্থনীতির সময়,
হতে পারে সেটা ভয়াবহ যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়।
তেল রিজার্ভ নিয়ে আশাবাদীদের কথাবার্তায় খুব
বেশি যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্যাপার এমন
না যে কেউ দাবি করছে তেলের রিজার্ভ কখনোই
শেষ হবে না। সমস্যাটা বরং ভিন্ন।
আসলে কারোরই পরিষ্কার ধারণা নেই মাটির
নিচে কী পরিমাণ তেল আছে আর কবে নাগাদ
সেটা অর্ধেকে নেমে আসবে। যাদের
হতাশাবাদী বলা হচ্ছে তারা বলছেন সেই
সময়টা আসলে চলে এসেছে। প্রমাণ
হিসেবে প্রতিদিনের উৎপাদন ওঠানামার
কথা বলছেন হুসেইনি। হুসেইনির কথা সত্য
বলে মানলে বোঝা যাবে কেন তেলের দাম এমন হু হু
করে বাড়ছে। আর কেনই বা বছরের
শুরুতে প্রতি ব্যারেলের দাম ১০০
ডলারে ঠেকেছিল।আশাবাদীরা অবশ্য হাল ছাড়তে চাইছেন না।
তারা বলছেন, বহু বছর সময় আছে এখনো। অনেক তেল
এখনো তোলা হয়নি। অনেক
তেলখনি এমনকি আবিষ্কারও হয়নি এখনো। একটু
ভিন্ন রকম তেলের রিজার্ভও আছে বেশ। পশ্চিম
কানাডায় যেমন টার-স্যান্ডের (আলকাতরা মিশ্রিত
বালি) বিশাল রিজার্ভ পাওয়া গেছে। অতীতের
কথাও বলছেন আশাবাদীরা। অতীতে যখনই সঙ্কটের
আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে দেখা গেছে হয় নতুন
খনির আবিষ্কার অথবা প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ভেতর
দিয়ে সেটা পুষিয়ে নেয়া গেছে। হুসেইনির
কথাকেও তাই গুরুত্ব দিচ্ছেন না অনেকে। ২০০৪
সালে যখন এই আশঙ্কার কথা শোনালেন তিনি,
বিরোধীরা বললেন এ তো কিছু ‘কৌতূহলি পাদটীকা’
মাত্র।
শিল্প-মালিকদের দাবি তেলের বর্তমান মূল্য
বৃদ্ধিটা সাময়িক। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা,
এশিয়ায় হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়া আর
ডলারের দর পতনের জন্য এটা হয়েছে।
ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের প্রধান অর্থনীতিবিদ এক
সভায় বলেছিলেন তেলের রিজার্ভ শেষ হওয়ার
আগেই মানুষের চাহিদা শেষ হয়ে যাবে। অন্য
আশাবাদীদের অবশ্য এতটা নিশ্চিত মনে হয়নি।
এবারের দাম শুধু যে অতীতের সব রেকর্ড
ভেঙেছে তাই নয়, এবারে নতুন উপায়ে তেল উৎপাদন
বাড়ার কোনো লণও দেখা যাচ্ছে না। সাধারণত
দেখা যায় তেলের দাম বাড়লে তেল
কোম্পানিগুলো নতুন প্রযুক্তি আর অনাবিষ্কৃত তেলকূপ
উদ্ধারে অনেক বেশি বিনিয়োগ শুরু করে। আশির
দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের পর যেমনটা হয়েছিল।
এত বেশি তেল উৎপাদন শুরু
হলো যে বিশ্ববাজারে তখন তেল উদ্বৃত্ত থাকত।
কিন্তু গত কয়েক বছরের হিসাবটা অন্যরকম। রেকর্ড
পরিমাণ দাম বাড়ার পরেও বিশ্বে তেলের উৎপাদন
ঘুরেফিরে ওই ৮৫ মিলিয়ন ব্যারেলের কাছাকাছিই
রয়েছে। হুসেইনির ভবিষ্যদ্বাণীতে ঠিক এই
কথাটিই বলা হয়েছে।
পরিবর্তনটা এমন জটিল যে, তেল শিল্প খেই
হারিয়ে ফেলেছে।
গেল মৌসুমে ইন্টারন্যাশনাল
এনার্জি এজেন্সি জানিয়েছে ২০৩০ সালের
মধ্যে তেলের চাহিদা তিন গুণ বেড়ে ১১৬ মিলিয়ন
ব্যারেলে দাঁড়াবে। অনেক তেল কোম্পানিই
স্বীকার করেছে তেলের উৎপাদন আদৌ সেই পরিমাণ
বাড়বে কি না। লন্ডনের এক বাণিজ্য
সম্মেলনে ফরাসি তেল কোম্পানি টোটালের প্রধান
ক্রিস্টোফার ডি মার্গারি পরিষ্কার বলেছেন,
তেলের উৎপাদন প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০০ ব্যারেল
হতে পারে। এর অর্থ হলো ২০২০ সালের আগেই
উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বাড়তে শুরু করবে। এ
বছরেরই জানুয়ারিতে আরো নির্দিষ্ট
করে কথাটা বলেছেন হল্যান্ডের তেল
কোম্পানি শেল’র প্রধান নির্বাহী জেরোয়েন ডার
ভিয়ার। তার হিসাবে ২০১৫ সালের পর চাহিদার
সাথে উৎপাদন কোনোভাবেই তাল
রাখতে পারবে না।
এই দুই তেল ব্যবসায়ীর ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্য
ভূতাত্ত্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক নয়। রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো মাথায় রেখেই
তারা কথাটা বলেছেন। বলা হয়, ইরাকের মাটির
নিচে প্রচুর তেল রয়েছে। কিন্তু য্দ্ধু-বিধ্বস্ত
দেশে নিরাপত্তা সঙ্কটের কারণে পুরো মাত্রায়
তেল উৎপাদন করতে পারছে না তারা । তাদের
উৎপাদন সৌদি আরবের পাঁচ ভাগের এক ভাগ মাত্র।
আবার ভেনিজুয়েলা বা রাশিয়ার
মতো দেশগুলোতে বিদেশী কোম্পানির প্রবেশের
ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। এই দেশগুলো তাই নতুন
কূপ খনন বা প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে পারছে না।
এই মধ্যস্বত্বভোগীদের ব্যাপারটা আসলে তেল
থাকা বা না থাকা নিয়ে নয় বরং রাজনৈতিক
সমস্যা। সাবেক মার্কিন তেল বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড
মোর্স অন্তত এভাবেই দেখছেন ব্যাপারটাকে।
তবে আশাবাদীরাও স্বীকার করতে শুরু করেছেন যে,
বাহ্যিক সীমাবদ্ধতাগুলোও এখন প্রকট হতে শুরু
করেছে। নতুন তেলকূপ আবিষ্কারের
বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যায়। কোথায় তেল
আছে এটা না জানলে তো উৎপাদনের প্রশ্নই
আসে না। কিন্তু ষাটের দশকের শুরু থেকেই নতুন
তেলকূপ আবিষ্কারের হার কমতে শুরু করেছে। যদিও
প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বাড়তে বাড়তে এখন যোগ
হয়েছে কম্পিউটারাইজড ইমেজিং সিস্টেম। এই
পদ্ধতিতে ভূ-কম্পন পরিমাপ করে মাটির
গভীরে সংরতি তেলের ছবি পর্যন্ত
দেখা যাচ্ছে এখন। উৎপাদন কমে যাওয়ার
একটা কারণ খুব পরিষ্কার : বড় বড় দানবাকৃতির
তেলকূপগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে বহু বছর আগে।
বাকি যেগুলো আছে সেগুলো ছোট ছোট। এগুলো শুধু
যে খুঁজে বের করা কঠিন তাই নয়, এগুলো বড়
কূপগুলোর মতো উৎপাদনও করতে পারবে না। গত
নভেম্বরে যেমন ব্রাজিল উপকূলের কাছে আবিষ্কৃত
হলো টুপি খনিটি। গত সাত বছরের মধ্যে এটাই
সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। কিন্তু এখানকার রিজার্ভ
হলো ৮ বিলিয়ন ব্যারেলের
মতো যেটা সৌদি আরবের কিংবদন্তি গাওয়ার কূপের
১৫ ভাগের এক ভাগ মাত্র। গাওয়ার কূপের তেলের
পরিমাণ প্রায় ১২০ বিলিয়ন ব্যারেল।
কূপটি আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে।
ছোট তেলকূপের উত্তোলন খরচও বেশি।
কথাটা আরো সহজ করে বলেছেন ম্যাট সিমোন্স।
পেশায় ব্যাঙ্কার এই লোকটি দীর্ঘ দিন তেল
অনুসন্ধান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি বলছেন
পৃথিবীতে জিলিয়ন জিলিয়ন ছোট তেলকূপ রয়েছে।
কিন্তু এক সাথে সেই তেল পেতে হলে জিলিয়ন
জিলিয়ন ইনস্ট্রুমেন্ট বসাতে হবে। এ কারণেই তেল
কোম্পানিগুলো বড় বড় তেলকূপগুলোকে প্রাধান্য
দেয়। আর এই কারণেই আমাদের প্রতিদিনের
চাহিদার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসে এই বড় বড়
তেলকূপগুলো থেকে। দুর্ভাগ্যজনক যে, অধিকাংশ বড়
তেলকূপই বহু আগের আবিষ্কার। তেল এখন
যা পাওয়া যাচ্ছে তা মোটামুটি এগুলো থেকেই।
এগুলোর রিজার্ভও তাই কমে আসছে। শুকিয়েও
আসছে কোথাও কোথাও। উত্তর সাগর আর আলাস্কার
উত্তর ঢালের অবস্থা এখন সে রকমই। এক কালের
বিরাট এই রিজার্ভগুলো এখন শুকাতে শুরু করেছে।
বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান তেলকূপগুলোর উৎপাদন এখন
প্রতি বছর ৮ শতাংশ হারে কমছে। তার
মানে বর্তমান উৎপাদন ঠিক রাখতে তেল
কোম্পানিগুলোকে প্রতিদিন বাড়তি ৭ মিলিয়ন
ব্যারেল উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর প্রতি বছর
১.৫ শতাংশ হারে যে চাহিদা বাড়ছে সেটার
সাথে তাল মেলাতে হলে উৎপাদন
বাড়াতে হবে আরো কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল। কিন্তু
এক দিকে তেলকূপগুলোর রিজার্ভ কমছে, অন্য
দিকে রাজনৈতিক বিধিনিষেধ আর দাম বাড়ার
কারণে এই বাড়তি উৎপাদনের পথ দিন দিন
সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শেল বা মেক্সিকোর রাষ্ট্রীয়
প্রতিষ্ঠান পেমেক্সের মতো দানব তেল
কোম্পানিগুলোকে প্রতি বছর যে পরিমাণ তেল
বিক্রি করতে হয়, সে পরিমাণ তেল তারা এখন
খুঁজেই পাচ্ছে না।
বিদ্যমান তেলকূপগুলোর রিজার্ভ যেভাবে কমছে আর
তেলের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে ঘাটতির
পরিমাণ অচিরেই লাগামছাড়া হয়ে যাবে।
কোনোকোফিলিপস কোম্পানির প্রধান
নির্বাহী জেমস মুলভা বলেছেন, ২০১০ সাল নাগাদ
বিশ্বের পুরো উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ সংগ্রহ
করতে হবে নতুন এবং অনাবিষ্কৃত তেলকূপগুলো থেকে।
২০৩০ সাল নাগাদ তেলের প্রায় পুরোটাই
যোগাতে হবে বর্তমানে সচল কূপগুলোর
বাইরে থেকে। বাড়তি তেল উৎপাদনের ব্যাপারেও
খুব আশাবাদী নন মুলভা। নিউইয়র্কের এক
সম্মেলনে তিনি টোটাল কোম্পানির প্রধানের
কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন তেলের সর্বোচ্চ
উৎপাদন ১০০ মিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত
যেতে পারে। কারণটা পরিষ্কার : এত তেল
আসবে কোত্থেকে?
পরিস্থিতি যা-ই হোক একটা ভবিষ্যদ্বাণী প্রায়
অনিবার্য সত্য হয়ে উঠছে : সস্তা তেলের দিন
শেষ। অতীত থেকে যদি শেখার কিছু
থাকে তাহলে বলতেই হবে যে সামনে বিরাট
দুর্দিন আসছে। সত্তর দশকের শুরুতে যখন আরব বিশ্ব
তেল নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তখন তেলের
তৃষ্ণায় মরিয়া হয়ে উঠেছিল মার্কিন
নীতিনির্ধারকরা। তারা এমনকি সামরিক অভিযান
চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের তেলকূপগুলো দখলের
পরিকল্পনা পর্যন্ত করেছিল।
ওয়াশিংটন সে সময় সামরিক অভিযান
থেকে পিছিয়ে গিয়েছিল কিন্তু সেই
পরিস্থিতি আবারো আসতে পারে। যেহেতু বিশ্বের
তেল বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ
করে সৌদি আরবসহ ওপেক সদস্যরা, তাদের রিজার্ভ
কমতে শুরু করবে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য তেলসমৃদ্ধ
অঞ্চলের পরে। এতে করে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির
ওপর তাদের কর্তৃত্ব আরো অনেক বেড়ে যাবে। তেল
উৎপাদন না বাড়ার আরেকটা অর্থ হলো ক্রমবর্ধমান
জনসংখ্যার এই পৃথিবীতে জনপ্রতি এখন যে পরিমাণ
গ্যাস, কেরোসিন বা ডিজেল বরাদ্দ তার পরিমাণও
কমতে থাকবে প্রতিদিন। যুক্তরাষ্ট্রের
মতো জ্বালানিকেন্দ্রিক অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য
এটা যদি অশনিসঙ্কেত হয়, তাহলে তৃতীয় বিশ্বের
জন্য এটা রীতিমতো ভয়াবহ বিপর্যয়ের আভাস।
কারণ এসব দেশে যানবাহন থেকে শুরু করে রান্না,
বিদ্যুৎ, সেচ সব কিছুই চলে তেলের ওপর।
হুসেইনির উদ্বেগ হলো এই সমস্যার
ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের নড়াচড়ার তেমন লণ
দেখা যাচ্ছে না।
জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন বা বায়োফুয়েলের
মতো বিকল্প জ্বালানি দিয়ে হয়তো সামান্য কিছু
অভাব মিটবে কিন্তু তাতে বড় বড় দানব
রাষ্ট্রগুলোর তেলের ক্ষুধা মেটানো যাবে না।
হুসেইনি আক্ষেপ করেছেন, তেলের ব্যবহার
কমিয়ে আনার মতো বিকল্প লাইফস্টাইল
নিয়ে আমরা এখনো ভাবছি না কেন। তেল
উৎপাদনের অঙ্কটা দিন দিন যেভাবে কমছে,
তাতে এই আলোচনা থেকে বেশি দিন
দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

No comments: