কিডনি রোগ, প্রতিকার
ও প্রতিরোধের উপায়
সময় : 6:25 pm । প্রকাশের তারিখ :
02/05/2014
স্বাস্থ্য ডেস্ক : বর্তমানে আমাদের
দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা খুবই
দ্রুতগতিতে বাড়ছে, যা আমাদের
সাধারণ মানুষের মনে বেশ আতঙ্কের
সৃষ্টি করেছে। তাই এ রোগের
ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
এরই অংশ হিসেবে কিডনি রোগ
বিষয়ে জানতে ডা. ফাহমিদা বেগম
এর মুখোমুখি হয় সাপ্তাহিক।
তিনি পপুলার মেডিকেল কলেজ ও
হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের
অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। আলোচনায়
কিডনি রোগ কী,
কিডনি কীভাবে আক্রান্ত হয়,
এক্ষেত্রে প্রতিকার ও প্রতিরোধসহ
অনেক কথাই উঠে আসে। সাক্ষাৎকার
নিয়েছেন আরিফুর রহমান।
সাপ্তাহিক: প্রথমে জানতে চাই…
কিডনি কী? এবং এর কাজ কী?
ডা. ফাহমিদা বেগম: কিডনি আমাদের
শরীরের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
প্রত্যেক মানুষের
শরীরে দুটি করে কিডনি থাকে। এর
আকার খুব বড় নয় কিন্তু এর কাজ অনেক
ব্যাপক। যেমন-
-কিডনি আমাদের শরীর থেকে দূষিত
পদার্থ বের করে দেয়।
কিডনি অকেজো হলে শরীরে দূষিত
পদার্থ জমে যায় ফলে নানান উপসর্গ
দেখা দেয়।
-কিডনি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন
তৈরি করে যা শরীরের অন্যান্য
ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন-
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা,
শরীরে রক্ত তৈরি করা। তাই
কিডনি অকেজো হলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়
এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়।
-কিডনি আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ
খনিজ এবং ইলেক্ট্রোলাইট
(ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম,
পটাশিয়াম)-এর সমতা রক্ষা করে।
কিডনি কাজ না করলে পটাশিয়ামের
মাত্রা বেড়ে যায় যেটা জীবনের
জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সাপ্তাহিক: কিডনি রোগের লক্ষণসমূহ
কী কী?
ডা. ফাহমিদা বেগম: কিডনি রোগ
নানান ধরনের হয়ে থাকে এবং এর
লক্ষণসমূহ নির্ভর করে রোগের ধরনের
ওপর। যেমন- কিডনির ইনফেকশন
হলে সাধারণত জ্বর আসে। কোমরের
পেছনে ব্যথা হয়
এবং প্রস্রাবে জ্বালাও হতে পারে।
তাছাড়া অল্প বা অতিরিক্ত প্রস্রাব
হওয়া, প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া। শরীর
ফুলে যাওয়া, দুর্বল লাগা, উচ্চ
রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, খাবারের অরুচি,
বমি বমি ভাব, ওজন কমে যাওয়া,
শরীরে চুলকানি এর সবই
কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে।
তবে অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে এ
রোগের কোনও লক্ষণ না-ও
থাকতে পারে এবং এটা শুধু
পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমেই
ধরা পড়ে।
সাপ্তাহিক: কিডনি রোগের ধরন ও
তার প্রতিকার
সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
ডা. ফাহমিদা বেগম: কিডনি রোগ
সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে।
১) একিউট কিডনি ইনজুরি (একেআই)
এবং ২) ক্রনিক কিডনি ডিজিস
(সিকেডি)।
যেসব রোগী হঠাৎ
করে কিডনি রোগে আক্রান্ত হন
তাদের আমরা একিউট
কিডনি ইনজুরি বলে থাকি।
সময়মতো যথাযথ চিকিৎসার
মাধ্যমে এ রোগের পুরোপুরি নিরাময়
সম্ভব। যেসব কারণে একিউট
কিডনি ইনজুরি হয়ে থাকে, তাদের
মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো- ১)
ডায়রিয়ার
মাধ্যমে শরীরে পানিশূন্যতা ২)
যে কোনও কারণে শরীর
থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া ৩)
সেপটিক শক ৪) ভলটারিন জাতীয়
ব্যথার ঔষধ
এবং এমাইনোগ্লাইকোসাইড জাতীয়
এন্টিবায়োটিক সেবন ইত্যাদি।
এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের অনেক
সময় সাময়িক ডায়ালাইসিসও
লাগতে পারে কিন্তু
পরবর্তীতে তাদের
কিডনি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায়
ফিরে আসে।
যেসব কিডনি রোগ ধীরে ধীরে (মাস
বা বছরের মধ্যে) কিডনির
ক্ষতি করে তাদের ক্রনিক
কিডনি ডিজিস বলা হয়।
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ
অথবা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস থাকার
কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিস
হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত
রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসার
মাধ্যমে তাদের রোগ
নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন কিন্তু
তাদের কিডনি পুরোপুরি স্বাভাবিক
অবস্থায় ফিরে আসে না।
একপর্যায়ে তাদের নিয়মিত
ডায়ালাইসিস
অথবা কিডনি সংযোজনের
মাধ্যমে ভালো থাকতে হয়। এ
চিকিৎসার
মাধ্যমে রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ জীবন
যাপন করতে পারেন, যদিও
চিকিৎসা একটু ব্যয়বহুল।
সাপ্তাহিক: কিডনি রোগ
কি প্রতিরোধ করা সম্ভব?
ডা. ফাহমিদা বেগম: হ্যাঁ, অনেক
কিডনি রোগই প্রতিরোধ করা যায়।
যেমন- যাদের ডায়াবেটিস এবং উচ্চ
রক্তচাপ আছে তারা যদি নিয়মিত
চিকিৎসার
মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখেন
তাহলে কিন্তু কিডনি রোগ
অনেকাংশে এড়ানো যায়।
আবার কিছু কিছু কিডনি রোগ হয়
অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে,
যেমন আমাদের বেশিরভাগ মানুষেরই
কিছু না কিছু জয়েন্ট পেইন থাকে,
যার বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যায়াম
এবং ফিজিওথেরাপির
মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কিন্তু, আমরা অনেকেই তা করি না।
এমন অনেক লোক আছেন, যারা মাসের
পর মাস ব্যথার ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন।
এটাও কিডনি ফেইলিওরের
একটি অন্যতম কারণ। আজকাল
যেটি বেশি ভয়ের কারণ সেটি হচ্ছে,
কেমিকেলযুক্ত খাবার। আমরা যা-ই
খাই না কেন, তা রক্তের
মাধ্যমে কিডনিতে গিয়ে পৌঁছায়
এবং কিডনি তা ফিল্টার করে। এইসব
দূষিত পদার্থ ফিল্টার
করতে করতে একসময়
বেচারা কিডনি নিজেই দুর্বল
হয়ে যায়।
দুর্ভাগ্যবশত কিছু কিছু কিডনি রোগ
আছে যাতে আমাদের কারও কোনো হাত
নেই। যেমন অটোইমিউন
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস,
হেরিডিটারি কিডনি ডিজিস যেমন,
পলিসিসটিক কিডনি ইত্যাদি। কাজেই
এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায়
নেই।
অতএব আমাদের
মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিস
এবং উচ্চ রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। যখন তখন
ব্যথার ওষুধ এবং এন্টিবায়োটিক
সেবন পরিহার করতে হবে। সুস্থ
খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে কিছু
কিছু কিডনি রোগ
পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment