Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Wednesday, June 4, 2014

অস্তাচলের পথে আমেরিকা?

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কিছু
তোলপাড় করা ঘটনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় নিস্পৃহ
প্রতিক্রিয়ায় জোর গুঞ্জন উঠেছে, সাত দশক
ধরে দোর্দণ্ডে প্রতাপে জ্বলজ্বল করা পশ্চিমের সূর্য
কী তবে ডুবতে বসেছে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব
রাজনীতিতে পরাক্রমশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়
যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউরোপের তত্কালীন
ক্ষমতাধর দেশগুলো বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যখন
হাবুডুবু খাচ্ছে, মার্কিন অর্থনীতির চাকা তখন জোর
গতিতে ঘুরেছে।
চার দশক ধরে চলা স্নায়ুযুদ্ধে সাবেক
প্রতিদ্বন্দ্বী সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাভূত করে নব্বইয়ের
দশক থেকে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয় যুক্তরাষ্ট্র।
এর পর থেকেই পৃথিবীর দেশে দেশে ‘গণতন্ত্র ও
মানবাধিকার রক্ষার’ মহান দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয়
দেশটি। মহত্ এই দায়িত্ব পালনে নিজের প্রতিরক্ষা ব্যয়
বাড়িয়ে হলেও আফগানিস্তান-ইরাকে সৈন্য পাঠিয়ে যুদ্ধ
বাধাতে দ্বিধা করেননি ওয়াশিংটনের জাঁদরেল নেতারা। এ
ছাড়া তৃতীয় ও দ্বিতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ও
পররাষ্ট্রনীতিতে মার্কিন ছড়ি ঘোরানোর রীতি তো চলেই
আসছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডন-এ প্রকাশিত ‘সানসেট
ইন আমেরিকা’ নিবন্ধে সাংবাদিক খুররাম হোসেন উল্লেখ
করেন, মিসরের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল
সিসি দেশটির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন।
মুরসি কারাবন্দী হন, চরম দমন-পীড়নের শিকার হন
ব্রাদারহুডের নেতা ও সমর্থকেরা, এমনকি ব্রাদারহুডের
৬৮৩ জন সমর্থকের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়।
এমনকি সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের খবরও
পাওয়া যাচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে টান টান সামরিক
উত্তেজনা চলছে।
ইউক্রেনে রাশিয়া রীতিমতো আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ
হয়েছে। এত বড় বড় ঘটনা সত্ত্বেও অনেকটা নির্বিকার
যুক্তরাষ্ট্র। তিনি লিখেছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ
কোনো দেশেই সেনা পাঠিয়ে যুদ্ধ করার পথ
থেকে সরে আসছে ওয়াশিংটন। কেননা নিজ দেশে ঋণের
ভারে জর্জরিত অর্থনীতি ও বাজেট ঘাটতির
মুখে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব রাজনীতির নীতি নির্ধারণ
করে দেওয়ার মতো ভার নেওয়ার ক্ষমতা এখন আর নেই।
বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের একচেটিয়া আধিপত্যও
ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে।
গত ২৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট পয়েন্ট
মিলিটারি একাডেমিতে দেওয়া এক ভাষণে অনেকটা নরম
সুরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, বিশ্বের নেতৃত্ব
যুক্তরাষ্ট্রেরই দেওয়া উচিত। তবে অন্ধের মতো দ্রুত
যুদ্ধের মধ্যে না গিয়ে বন্ধুত্বের মাধ্যমে এগোতে হবে।
এর মধ্য দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি প্রণেতাদের মূলত
যুদ্ধ থেকে সরে আসার অবস্থানই প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণ
স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, মার্কিন আধিপত্য খর্ব হলে বিশ্ব
ক্ষমতার শূন্যস্থান পূরণ করবে কে বা কারা। চীনের
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কিছুদিন আগে এশিয়ার আঞ্চলিক
নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। এ
ঘটনার কথা উল্লেখ করে ইউরেশিয়া জার্নালে প্রকাশিত
প্রতিবেদনে মার্কিন সাংবাদিক ডেভ লিনডর্ফ বলেছেন,
এটি ঘটলে এত দিনের এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার
অবসান হয়ে বিশ্ব নতুন করে দ্বি-মেরুকরণের যুগে প্রবেশ
করবে। মার্কিনবিরোধী এ শিবিরে চীন, রাশিয়া, ইরান,
ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশ একত্র
হবে বলেই তাঁর ধারণা।
স্নায়ুযুদ্ধ শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের যখন পতন ঘটেছিল,
তখনই বিশিষ্ট মার্কিন রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ফ্রান্সিস
ফুকুয়ামা তাঁর দ্য এন্ড অব হিস্ট্রি অ্যান্ড দ্য লাস্ট ম্যান
গ্রন্থে দাবি করেছিলেন, পৃথিবীতে আদর্শের ভিত্তিতে সৃষ্ট
(ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক শিবির) মেরুকরণের
পরিসমাপ্তি ঘটেছে। বিশ্ব পরিচালনার
ক্ষেত্রে ‘পশ্চিমা উদারতান্ত্রিক গণতন্ত্রই’ উত্কৃষ্ট
বলে প্রমাণিত—এমনটাই দাবি ছিল তাঁর। মূলত এর মধ্য
দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, মার্কিন আধিপত্যবাদই
পৃথিবীর ইতিহাসের চূড়ান্ত ঘটনা। তবে ইতিহাস বলে,
রোমান সাম্রাজ্যই হোক কিংবা ব্রিটিশ-ইউরোপিয়ান
ঔপনিবেশিক আধিপত্যই হোক—
মহা পরাক্রমশালী কোনো শক্তিই চিরকাল
ক্ষমতা আঁঁকড়ে টিকে থাকতে পারেনি। কখনো না।
কখনো তাদের দম্ভ চূর্ণ হয়েছে।


Posted via BN24Hour

No comments: