Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Tuesday, June 24, 2014

‘বিক্রি হয়েছি ৬ জনের কাছে, হাতবদল হয়েছি অসংখ্য পুরুষের’

বিক্রি হয়েছি ছয়জনের কাছে, হাতবদল হয়েছি অসংখ্য
পুরুষের। মনোরঞ্জন করতে না পারলেই সহ্য
করতে হয়েছে শারীরিক নির্যাতন। পিটিয়ে রক্তাক্ত
করে বেহুঁশ করে ফেলেছে। হুঁশ হলে আবারো সেই
নির্যাতন। খাবার পানি থেকে সব কিছু বন্ধ
থেকেছে যতক্ষণ রাজি হইনি। ওদের
মনে কোনো দয়া নেই। ওরা মানুষ না। কথাগুলো বলছিলেন
দুবাই গিয়ে নির্যাতনের শিকার এক তরুণী। আদম
বেপারীদের খপ্পরে পড়ে পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের
আশায় বিদেশ গিয়েছিলেন ওই তরুণী। ফিরে আসার পরেও
এখন ওই আদম বেপারী তাকে এবং তার
পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করছে।
কল্পনা (ছদ্মনাম)। বাড়ি ফরিদপুর সদরের
কোতোয়ালি থানা এলাকায়।
বাবা একেবারে খেটে খাওয়া একজন মানুষ।
লেখাপড়া তেমন করেননি। অভাবের সংসারে টানাপড়েন
ছিলই। স্বপ্ন দেখতেন সংসারের অভাব ঘুচানোর। সেই
স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা ছিল তার। কিন্তু
কিভাবে তা জানা ছিল না। শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন
বিদেশ গিয়ে টাকা রোজগার করবেন। বাড়ির পাশের এক
আদম বেপারীর সাথে এ নিয়ে কথা বলে ওই পরিবার।
বিদেশে ভালো বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখায়
আদম বেপারী আলমগীর মোল্লা। দুবাই পাঠানোর
কথা বলা হয় তাকে। চাকরির কথা বলেছিলেন,
গৃহপরিচারিকার। রাজি হয়ে যান কল্পনা ও তার পরিবার।
কিন্তু দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে তিনি যে সর্বনাশের শিকার
হবেন কে জানত তা? বিদেশ পাঠানো বাবদ আলমগীরের
হাতে তুলে দেয়া হয় ৮০ হাজার টাকা। সবুজবাগের উত্তর
মাদারটেকের কল্পনার ভাইয়ের বাসা থেকে ওই টাকা নেন
আলমগীর। বাকি ২৫ হাজার টাকার জন্য
সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখা হয় কল্পনার। গত বছরের ৪
নভেম্বর সকালে দুবাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন কল্পনা।
দুবাই এয়ারপোর্টে নামার পরে সেখানে আলমগীরের
প্রতিনিধি কল্পনাকে নিয়ে যান। কল্পনাকে গৃহপরিচারিকার
কাজ দেয়ার কথা থাকলেও তাকে নেয়া হয় একটি অফিসে।
তখনো বুঝতে পারেননি কী সর্বনাশ হতে চলছে।
কল্পনা জানান, ওই অফিসে এক রাত থাকার পরেই শুরু হয়
বিভীষিকাময় অত্যাচার। পরদিন একজনের
কাছে তাকে বিক্রি করা হয় দুই দিনের জন্য। বাধ্য
করা হয় তাকে অসামাজিক কাজ করতে। এভাবেই একের
পর এক বিক্রি হতে থাকেন কল্পনা। হাত বদল
হতে থাকেন একের পর এক পুরুষের। কল্পনা জানান, ছয়
দালালের কাছে তিনি বিক্রি হয়েছেন। অসংখ্য পুরুষের হাত
বদল হয়েছেন। রাজি না হলে তার ওপর চলত নির্মম
নির্যাতন। না খাইয়ে রাখা হতো দিনের পর দিন।
কোনো দিন একবেলা খাবার জুটত আবার না খেয়েও দিন
পার করতে হতো। কখনো কখনো নির্মম নির্যাতনে তার
সারা শরীর রক্তাক্ত হতো। চিকিৎসা হতো না।
এভাবে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন কল্পনা।
তিনি বলেন, এর মধ্যে ওমানেরও দুই দালালের
কাছে তিনি বিক্রি হয়েছেন। কয়েকবার তিনি তার বাবার
সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।
একপর্যায়ে দেখা হয় অপর এক বাংলাদেশী নারীর সাথে।
ওই নারীও সেখানে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য
হয়ে আসছেন। একদিন এক খদ্দেরের মোবাইল
দিয়ে তিনি বাবার সাথে যোগাযোগ করেন।
পুরো ঘটনা বাবাকে জানান এবং তাকে দেশে ফেরত আনার
জন্য অনুরোধ করেন। কল্পনা বলেন, তার বাবা ফোন
পেয়ে যোগাযোগ করেন ওই আদম বেপারীর সাথে। আদম
বেপারী আলমগীর তাকে সাফ জানিয়ে দেন,
‘বিদেশে টাকা রোজগার করতে গেলে অনেক কিছুই
করতে হয়।’ কল্পনার বাবা এ কথা মানতে পারেননি।
মেয়েকে সর্বনাশের হাত
থেকে বাঁচাতে তিনি আবারো যোগাযোগ করেন আলমগীরের
সাথে। আলমগীর তার কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবি করেন।
দরিদ্র বাবা এত টাকা কোথায় পাবেন। একপর্যায়ে ওমান
পুলিশের হাতে ধরা দেন কল্পনা। সেখানে ছিলেন বেশ কিছু
দিন। শেষ পর্যন্ত তার বাবা সর্বস্ব বিক্রি করে ৫০
হাজার টাকা ওমান পাঠালে সেখানকার সরকার
কল্পনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
দেশে ফিরে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নিতে হয় কল্পনাকে।
তিনি বলেন, গত মাসের ১৫ তারিখ তিনি দেশে আসেন।
একটু সুস্থ হয়ে তিনি সবুজবাগ থানায় যান
মামলা দায়েরের জন্য। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। ২৭
মে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করেছে মাত্র।
কিন্তু তা-ও ওভাবে পড়ে আছে। সবুজবাগ থানায়
যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার ওই ডায়েরির
ব্যাপারে কোনো তথ্যই দিতে পারেননি। কল্পনা বলেন,
পুলিশ মামলা না নেয়ায় তিনি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন
দমন ট্রাইব্যুনাল ৫ এ একটি আবেদন করেছেন।
আলমগীর মোল্লার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর
কোতোয়ালি থানার ইসাইল গ্রামে। সাধারণ ডায়েরি করার
পর থেকেই তিনি পলাতক বলে জানা যায়।

posted from Bloggeroid

No comments: