Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Saturday, June 7, 2014

এক চিফ হুইপের এত্ত সরকারি বাসা!

এক চিফ হুইপের এত্ত সরকারি বাসা! জাতীয়
সংসদের চিফ হুইপ ও পটুয়াখালী-২ আসনের
আওয়ামী লীগের সাংসদ আ স ম ফিরোজ৷
সরকারিভাবে তাঁর নামে একটি বাংলো ও
একটি অফিস বরাদ্দ আছে৷ কিন্তু এর বাইরে সংসদ
সদস্য ভবনে তিনি আরও সাতটি বাসা নিজের
নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন৷
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদ ভবন এলাকায়
চিফ হুইপের নামে বরাদ্দ একটি বাংলো বরাদ্দ
আছে৷ তবে তিনি থাকেন বারিধারায় নিজের
বাড়িতে৷ সংসদের দক্ষিণ পাশে মানিক
মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ সদস্য
ভবনে একটি ফ্ল্যাটও চিফ হুইপের নামে সংরক্ষিত
আছে৷ শেরেবাংলা নগরে আগের সংসদ সদস্য
ভবনে (এমপি হোস্টেল) এক কক্ষের একটি ও দুই
কক্ষের একটি বাসাও চিফ হুইপ ব্যবহার করেন৷
পুরোনো সংসদ সদস্য ভবনের একটি বাসায় চিফ
হুইপের স্ত্রীর ছোট ভাই পরিবার নিয়ে থাকেন৷
একটি বাসায় থাকেন তাঁর ব্যক্তিগত
সহকারী (পিএ)৷ আরেকটি বাসায় থাকেন তাঁর
দপ্তরের গাড়ির চালক৷ নাখালপাড়া ন্যাম ভবনের
একটি ফ্ল্যাটে থাকেন চিফ হুইপের এক বন্ধু৷
এত বাসা তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখার
বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ
সহাস্যে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরো সংসদই
তো আমার নিয়ন্ত্রণে৷’ পরে বিস্তারিত
শুনে তিনি বলেন, এ রকম কোনো ঘটনাই নেই৷
এমন কিছু যদি শোনেন বা জানেন,
সেগুলো পুরো ঠিক না৷
চিফ হুইপ হচ্ছেন জাতীয় সংসদের সংসদ কমিটির
সভাপতি৷ তাঁর নেতৃত্বাধীন এ কমিটিই সাংসদদের
আবাসন বরাদ্দ দেওয়াসহ তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার
বিষয়গুলো দেখভাল করে৷
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদ ভবন এলাকায়
১ নম্বর বাংলোটি চিফ হুইপের
নামে সরকারিভাবে বরাদ্দ আছে৷ আর সংসদ
ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম ব্লকের ২২১ থেকে ২২৪
নম্বর পর্যন্ত চারটি কক্ষ তাঁর সরকারি দপ্তর৷
এখানে বসেই চিফ হুইপ তাঁর দাপ্তরিক কাজ করেন৷
সরকারি বাংলোতে থাকেন কি না—
জানতে চাইলে চিফ হুইফ গতকাল শনিবার প্রথম
আলোকে বলেন, তিনি এই বাংলোয় ওঠার
প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ এখন রাজধানীর বারিধারায়
নিজের বাড়িতে থাকেন৷
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর ৪ নম্বর সংসদ সদস্য
ভবনে ১৮০০ বর্গফুট আয়তনের ৮০৪ নম্বর
ফ্ল্যাটটিও চিফ হুইপের নিয়ন্ত্রণে আছে৷ গতকাল
শনিবার গিয়ে ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ দেখা যায়৷
জানতে চাইলে ওই ভবনের ফ্ল্যাট পরিচালক আবদুর
রশীদ হাওলাদার বলেন, ‘এইডা চিফ হুইপ স্যার
রাখছেন৷ কিন্তু এইখানে উঠেন নাই৷’ তবে সংসদ
সদস্য ভবনের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট নাজিম
উদ্দিন দাবি করেন, ওখানে চিফ হুইপের
নামে কোনো বাসা বরাদ্দ নেই৷
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জাতীয়
সংসদসংলগ্ন পুরোনো সংসদ সদস্য ভবনে আরও
দুটি বাসা চিফ হুইপের দখলে আছে৷ এর
একটি হচ্ছে ১ নম্বর ব্লকে দুই কক্ষের ১/৭ নম্বর
বাসা৷ আয়তন ৯৮০ বর্গফুট৷ অপরটি দুই নম্বর
ব্লকে এ কক্ষের ১৭ নম্বর বাসা৷ এর আয়তন ৪১৫
বর্গফুট৷
ন্যাম ভবন নির্মাণের আগে সাংসদেরা এসব
বাসায় থাকতেন৷ বর্তমানে সাংসদেরা বরাদ্দ
নিয়ে কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন৷
গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ১/৭ নম্বর
বাসার দরজায় কাগজে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের
নাম লেখা৷ সংশ্লিষ্টরা জানান,
এখানে বসে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার
লোকজনদের
সাক্ষাৎ দেন৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংসদ সদস্য
ভবনের একজন কর্মচারী জানান, গত
মাসে তিনি ১/৭ নম্বর বাসায় উঠেছেন৷ এর
আগে ২ নম্বর ব্লকের ১৭ নম্বর বাসা ব্যবহার
করেছেন৷ সেটি এখন তালাবদ্ধ আছে৷
এর পাশেই পুরোনো সংসদ সদস্য ভবনের ৩ নম্বর
ব্লকের এলডি হলে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবেও
আ স ম ফিরোজের আরেকটি দপ্তর আছে৷ নবম
সংসদে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের সাধারণ
সম্পাদক হওয়ার পর তিনি এ কক্ষটি পান৷
জানতে চাইলে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের
ব্যবস্থাপক শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন,
এখানে চিফ হুইপ মাঝেমধ্যে বসেন৷ নতুন (দশম)
সংসদ বসার পর দুই-একবার এসেছিলেন৷
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ পার্লামেন্ট মেম্বার্স
ক্লাবের সভাপতি হন৷ এ রেওয়াজ অনুযায়ী, নবম
সংসদের চিফ হুইপ আবদুস শহীদ সভাপতি ছিলেন৷
সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আ স ম ফিরোজ৷ ওই
কমিটিই এখনো বহাল আছে৷ ক্লাবের সভাপতি ও
সাধারণ সম্পাদক দুজনই একই দপ্তর ব্যবহার
করেন৷
নাখালপাড়ার পুরাতন সংসদ সদস্য ভবনের দুই
কক্ষের একটি বাসায় (৮৪-৮৫) চিফ হুইপের শ্যালক
মোহাম্মদ খায়রুল পরিবার নিয়ে থাকছেন৷ এই
ভবনেরই দুই কক্ষের আরেকটি বাসায় (৬৬-৬৭)
থাকেন চিফ হুইপের ব্যক্তিগত সহকারী মো.
আনিসুল হক৷ একই ভবনে এক কক্ষের একটি বাসায়
(১১ নম্বর) থাকেন চিফ হুইপের কার্যালয়ের
গাড়ির চালক মো. ইউনূছ৷ ন্যাম ভবন নির্মাণের
আগে এসব বাসায় সাংসদেরা থাকতেন৷
যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য ভবনের
প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার দেব প্রথম
আলোকে বলেন, ‘চিফ হুইপের শ্যালক বা বন্ধু এসব
বাসায় থাকেন, এটা প্রথম শুনলাম।’
তিনি দাবি করেন, স্পিকার ও চিফ হুইপের
অফিসের স্টাফদের জন্য পাঁচটি কক্ষ বরাদ্দ আছে।
তিনি জানান, এই বাসাগুলো এখন সংসদ
সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়৷
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নাখালপাড়ার পুরাতন সংসদ
সদস্য ভবনে গেলে প্রতিবেশীরা জানান, ৮৪ ও ৮৫
নম্বর বাসায় চিফ হুইপের শ্যালক পরিবার
নিয়ে থাকেন৷ বাসিন্দারা তখন বাসায় ছিলেন
না৷ পরে ফোনে জানতে চাইলে কেয়ারটেকার
রবিউল হোসেনও চিফ হুইপের শ্যালকের ওই
বাসায় থাকার কথা স্বীকার করেন৷
তবে ৬৬-৬৭ নম্বর বাসায় গিয়ে চিফ হুইপের
ব্যক্তিগত সহকারী আনিসুল হককে পাওয়া যায়৷
তিনি জানান, বাসাটি তাঁর নামে বরাদ্দ
নেওয়া হয়েছে৷
নাখালপাড়ার ১ নম্বর সংসদ সদস্য ভবনের ২০১
নম্বর ফ্ল্যাটে (সাড়ে ১২ শ বর্গফুটের) থাকেন
চিফ হুইপের বন্ধু মৃণাল কান্তি ঘোষ৷
তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ
কর্মকর্তা বলে জানা গেছে৷ গত বৃহস্পতিবার ওই
বাসায় গেলে মৃণাল কান্তি ঘোষ প্রথম
আলোকে বলেন, ‘চিফ হুইপ আমার বন্ধু৷ এক মাস
ধরে আমি এখানে আছি৷’
চিফ হুইপ হিসেবে একাধিক
বাসা নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে বক্তব্য
জানতে চাইলে আ স ম ফিরোজ প্রথম
আলোকে বলেন, ‘এগুলো কী নিউজ করার
মতো বিষয়? আমরা রাজনীতিকেরা কিছুটা হলেও
স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করি৷ এসব
ছোটখাটো বিষয়ে লিখলে মানুষ
খারাপভাবে নেয়৷ আমাদের চরিত্র হনন করলে আর
থাকে কী? আসলে আমরা এতটা ছোট না৷’

posted from Bloggeroid

No comments: