ঢাকা: কাজে যোগ দেওয়ার ছয় মাসের
মধ্যে বদলি নিয়ে চলে গেছেন দুই উপ-পরিদর্শক
(এসআই), চার থেকে দুই মাসের মাথায়
‘নিজ গরজে’ অন্য থানায় বদলি নিয়েছেন অন্তত
চার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)।
বাকি যারা আছেন তারাও ‘জোর চেষ্টা’
চালাচ্ছেন ‘ভালো’ থানায়
বদলি হওয়ার। এমনকি অনেকে ছুটি নিয়েও বদলির
জোর ‘লবিং’ চালাচ্ছেন।
রাজধানীর পাশের শিল্পাঞ্চল
হিসেবে খ্যাত সাভার মডেল থানার চিত্র
এটি। কিন্তু কেন এতো ‘ভালো’
থানা থেকে ‘পালাতে’ চাইছেন পুলিশ
কর্মকর্তারা?
এ
ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পুলিশ
সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান
বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ
কর্মকর্তা নামের যারা ‘ত্রাস’,
তাদের ব্যাপারে আমরা সর্তক।
এরা সকালে উঠেই
তালিকা হাতে নিয়ে বের হতেন কার
জমি দখল করে দেবেন, কার অনৈতিক
কাজে সহযোগিতা করবেন- এসব অপকর্মে।
দিনশেষে তারা হিসেব করতেন, আয় কত হলো,
লক্ষ্য পূরণ হয়েছে কিনা ইত্যাদি।
এসব জেনে আমরা কাউন্সিলিং করলাম।
রাতারাতি তো আর সব বদল করা সম্ভব
হয় না। অনেককে বিপথ
থেকে ফেরাতে পারলাম।
এখনো অনেকে আছে যারা অতীতের পথেই
হাঁটছে। আমরা তাদের মনিটরিং করছি।
“এসব কর্মকর্তাই এখন চাপে পড়ে আর
সাভারে কাজ করতে উৎসাহী নয়।
তারাই পালাতে চাইছে।”
যারা স্বেচ্ছায়
বদলি হতে চাইছে তারা চলে যাক,
আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
তবে সাভারে কাজ করতে চাইলে তাদের
মূর্তিমান ত্রাস বা আতঙ্ক হিসেবে নয়,
বরং শিষ্টের পালন ও দুষ্টের দমন
করতে হবে, যোগ করেন (এসপি) হাবিবুর
রহমান।
তবে ‘গণবদলির’ আবেদনের বিষয়টি স্বীকার
করলেও কী কারণে সাভার মডেল
থানা ছেড়ে যেতে চাইছেন
কর্মকর্তারা তার
ব্যাখ্যা দেননি থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকতা (ওসি) মোস্তফা কামাল।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, সকলেই
স্বস্তিতে চাকরি করতে চায়। স্বেচ্ছায়
যারা বদলি হতে চাইছেন সম্ভবত তাদের
কাছে পুলিশ স্টেশন হিসেবে সাভার
ভালো না। অনেকে বদলি নিয়ে অন্যত্র
চলে গেছেন।
‘অবৈধ আয়ের’ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ
অবস্থা তৈরি হয়েছে কীনা জানতে চাইলে তার
সরাসরি জবাব না দিয়ে ওসি বলেন, বদলির
আবেদনে প্রত্যেকে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধার
কথা উল্লেখ করেছেন। তাতে এসব বিষয়
ঠাঁই পায়নি বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, সাভার মডেল থানায়
কর্মরত আছেন ২৬ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই)
ও ১৩ জন সহকারী উপ-পরির্দশক
(এএসআই)।
এর আগে কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র ছয়
মাসের মাথায় বদলি হয়ে যান এসআই
রফিকুল ইসলাম ও মাত্র দেড় মাসের
মাথায় বদলি নেন এসআই সাইদুর রহমান।
আর সাভারে এসে মাত্র দুই মাসের
মাথায় থানা ছেড়েছেন এএসআই
ইসমাঈল হোসেন, চার মাসের মাথায়
এএসআই আব্দুল মান্নান, দেড় মাসের
মাথায় এএসআই আবুল কালাম ও এক
মাসের মাথায় এএসআই আরফান খান।
কিন্তু কিছুদিন আগেও এই থানার
চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন ছিলো বলে জানিয়েছেন
সংশ্লিষ্টরা। এই ‘ভালো’ থানায় আসার
জন্য অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই
নানাভাবে চেষ্টা করতেন। ‘প্রাইজ
পোস্টিং’ হিসেবে এখানে আসার জন্য
অনেকে ‘বিনিয়োগ’ও করতেন।
কিন্তু এখন সেখানে ঠিক তার বিপরীত
অবস্থা বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপ-পরিদর্শক
(এসআই) বাংলানিউজকে বলেন, সিভিল টিম,
জমি দখল বাণিজ্য, অবৈধ গ্রেপ্তার
বাণিজ্য, ফুটপাত, আবাসিক হোটেল, মাদক
স্পট প্রভৃতি খাত থেকে একজন এসআই
মাসে ন্যূনতম দুই থেকে ছয় লাখ
টাকা আয় করতেন।
বর্তমানে এসব খাত থেকে আর কোনো অর্থ
আসছে না। এখন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্ভর
করতে হচ্ছে বেতনের ওপর। কঠোর নজরদারি ও
প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সুপারভিশন থাকায়
পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে হিমশিম
খাচ্ছেন অনেকে, বলেন এসআই।
সম্প্রতি সাভার
থানা থেকে বদলি হয়ে একজন স্বেচ্ছায়
নারায়ণগঞ্জ গিয়েছেন। সেই পুলিশ
কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার
শর্তে বাংলানিউজকে জানান, ভাই
সাভার থানা আর আগের থানা নাই।
মাল নাই, তাই থানায়
পইড়্যা থ্যাইক্যা লাভ নাই।
নারায়ণগঞ্জে সাভারের
চাইতে ভালো আছি।
মডেল থানার একজন উপ-পরিদর্শক
(এসআই) জানান, আমার আগেরজন
আমাকে দায়িত্বে সঙ্গে আয়-ব্যয়ের
তালিকাও বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। ব্যয়ের
তালিকাটি-ও বেশ স্পর্শকাতর। কে নেই সেই
তালিকায়। নেতা, পাতিনেতা,
গণমাধ্যমে থেকে ডিপার্টমেন্টের
কর্তা সবাইকে খুশী করেই
চলতে হতো আমাদের।
সেই তালিকায় এখন ধুলো পড়ে বির্বণ
হয়ে হয়ে গেছে বলে জানান ওই এসআই।
তিনি বলেন, তালিকা ধরে ধরে আর আয়
না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ব্যয়ও নেই।
আরেক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান,
‘বাড়তি টাকা’ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়
এসআই শিব শংকর ও এসআই আবুল গাজীর
পরিবারকে গ্রামে থাকতে হচ্ছে।
সাভার থানার একটি সূত্র জানায়,
গত বছরের ৬ জুন
হেমায়েতপুরে টাকা না পেয়ে নির্যাতন
করে ব্যবসায়ী শামীম
সরকারকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার
করা হয় এসআই এমদাদুল হক, এএসআই
আকিদুল ইসলাম, কনস্টেবল মোফাজ্জল হোসেন,
ইউসুফ আলী ও রমজান আলীকে।
সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় সিভিল
টিমের প্রধান এসআই সাজ্জাদ রোমেলকে।
এরপর বন্ধ করে দেয়া হয় সিভিল টিমের সকল
কাজ।
এ ঘটনার পর পরই শুরু হয় থানায়
শুদ্ধি অভিযান। যার কারণে বন্ধ হয়ে যায়
অবৈধ রোজগারের প্রচলিত অধিকাংশ পথ।
Posted via BN24Hour
No comments:
Post a Comment