Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Saturday, October 25, 2014

কারবালার প্রান্তরে হুসাইন (রা:) নিহত হওয়ার প্রকৃত ঘটনা

ইসলাম ডেস্ক : ৬০ হিজরিতে ইরাক বাসীদের নিকট
সংবাদ পৌঁছল যে, হুসাইন (রা:) ইয়াজিদ বিন
মুয়াবিয়া হাতে বায়আত করেন নি। তারা তাঁর
নিকট চিঠি-পত্র পাঠিয়ে জানিয়ে দিল যে ইরাক
বাসীরা তাঁর হাতে খেলাফতের বায়আত
করতে আগ্রহী। ইয়াজিদকে তারা সমর্থন করেন
না বলেও সাফ জানিয়ে দিল। তারা আরও বলল যে,
ইরাক বাসীরা ইয়াজিদের পিতা মুয়াবিয়া (রা:)এর
প্রতিও মোটেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। চিঠির পর
চিঠি আসতে লাগল। এভাবে পাঁচ শতাধিক
চিঠি হুসাইন (রা:)এর কাছে এসে জমা হল।
প্রকৃত অবস্থা যাচাই করার জন্য হুসাইন (রা:) তাঁর
চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে পাঠালেন।
মুসলিম কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন। গিয়ে দেখলেন,
আসলেই লোকেরা হুসাইনকে চাচ্ছে।
লোকেরা মুসলিমের হাতেই হুসাইনের পক্ষে বয়াত
নেওয়া শুরু করল। হানী বিন উরওয়ার ঘরে বায়আত
সম্পন্ন হল।
সিরিয়াতে ইয়াজিদের নিকট এই খবর পৌঁছা মাত্র
বসরার গভর্ণর উবাইদুল্লাহ বিন
যিয়াদকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য
পাঠালেন। ইয়াজিদ উবাইদুল্লাহ বিন
যিয়াদকে আদেশ দিলেন যে, তিনি যেন
কুফা বাসীকে তার বিরুদ্ধে হুসাইনের সাথে যোগ
দিয়ে বিদ্রোহ করতে নিষেধ করেন।
সে হুসাইনকে হত্যা করার আদেশ দেন নি।
উবাইদুল্লাহ কুফায় গিয়ে পৌঁছলেন।
তিনি বিষয়টি তদন্ত করতে লাগলেন
এবং মানুষকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন।
পরিশেষে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, হানী বিন
উরওয়ার ঘরে হুসাইনের পক্ষে বায়আত
নেওয়া হচ্ছে।
অতঃপর মুসলিম বিন আকীল চার হাজার সমর্থক
নিয়ে অগ্রসর হয়ে দ্বিপ্রহরের সময় উবাইদুল্লাহ
বিন জিয়াদের প্রাসাদ ঘেরাও করলেন। এ সময়
উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ দাঁড়িয়ে এক ভাষণ
দিলেন। তাতে তিনি ইয়াজিদের সেনা বাহিনীর
ভয় দেখালেন। তিনি এমন ভীতি প্রদর্শন করলেন
যে, লোকেরা ইয়াজিদের ধরপাকড় এবং শাস্তির
ভয়ে আস্তে আস্তে পলায়ন করতে শুরু করল।
ইয়াজিদের ভয়ে কুফা বাসীদের পলায়ন ও বিশ্বাস
ঘাতকতার লোমহর্ষক
ঘটনা জানতে চাইলে পাঠকদের প্রতি ইমাম
ইবনে তাইমীয়া (র:) কর্তৃক রচিত মিনহাজুস সুন্নাহ
বইটি পড়ার অনুরোধ রইল। যাই হোক কুফা বাসীদের
চার হাজার লোক পালাতে পালাতে এক
পর্যায়ে মুসলিম বিন আকীলের সাথে মাত্র তিন জন
লোক অবশিষ্ট রইল। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মুসলিম
বিন আকীল দেখলেন, হুসাইন প্রেমিক আল্লাহর
একজন বান্দাও তার সাথে অবশিষ্ট নেই। এবার
তাকে গ্রেপ্তার করা হল। উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ
তাকে হত্যার আদেশ দিলেন। মুসলিম বিন আকীল
উবাইদুল্লাহএর নিকট আবেদন করলেন, তাকে যেন
হুসাইনের নিকট একটি চিঠি পাঠানোর
অনুমতি দেয়া হয়। এতে উবাইদুল্লাহ রাজী হলেন।
চিঠির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ছিল এ রকম:
“হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও।
কুফা বাসীদের ধোঁকায় পড়ো না।
কেননা তারা তোমার সাথে মিথ্যা বলেছে। আমার
সাথেও তারা সত্য বলেনি। আমার দেয়া এই তথ্য
মিথ্যা নয়।” অতঃপর যুল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ
আরাফা দিবসে উবাইদুল্লাহ মুসলিমকে হত্যার
আদেশ প্রদান করেন। এখানে বিশেষভাবে স্মরণ
রাখা দরকার যে, মুসলিম ইতিপূর্বে কুফা বাসীদের
ওয়াদার উপর ভিত্তি করে হুসাইনকে আগমনের জন্য
চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠির উপর
ভিত্তি করে যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখে হুসাইন
(রা:) মক্কা থেকে কুফার
উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন। অনেক
সাহাবী তাঁকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন।
তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ বিন
আমর এবং তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফীয়ার
নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইবনে উমার (রাঃ) হুসাইনকে লক্ষ্য করে বলেন:
হুসাইন! আমি তোমাকে একটি হাদীছ শুনাবো।
জিবরীল (আঃ) আগমন করে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়া এবং আখিরাত- এ
দুটি থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করার
স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি দুনিয়া বাদ
দিয়ে আখিরাতকে বেছে নিয়েছেন। আর তুমি তাঁর
অংশ। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ কখনই দুনিয়ার
সম্পদ লাভে সক্ষম হবেন না। তোমাদের ভালর
জন্যই আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস
থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন। হুসাইন তাঁর প্রস্তাব
প্রত্যাখ্যান করলেন
এবং যাত্রা বিরতি করতে অস্বীকার করলেন।
অতঃপর ইবনে উমর (রাঃ) হুসাইনের সাথে আলিঙ্গন
করে বিদায় দিলেন এবং ক্রন্দন করলেন।
সুফীয়ান ছাওরী ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে সহীহ
সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনে আব্বাস (রা:)
হুসাইনকে বলেছেন: মানুষের দোষারোপের ভয়
না থাকলে আমি তোমার ঘাড়ে ধরে বিরত রাখতাম।
বের হওয়ার সময় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:)
হুসাইনকে বলেছেন: হোসাইন! কোথায় যাও? এমন
লোকদের কাছে, যারা তোমার
পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত
করেছে?
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) বলেছেন: হুসাইন তাঁর
জন্য নির্ধারিত ফয়সালার দিকে দ্রুত অগ্রসর
হচ্ছেন। আল্লাহর শপথ! তাঁর বের হওয়ার সময়
আমি যদি উপস্থিত থাকতাম, তাহলে কখনই
তাকে যেতে দিতাম না। তবে বল প্রয়োগ
করে আমাকে পরাজিত করলে সে কথা ভিন্ন। (ইয়াহ্-
ইয়া ইবনে মাঈন সহীস সূত্রে বর্ণনা করেছেন)
যাত্রা পথে হুসাইনের কাছে মুসলিমের সেই
চিঠি এসে পৌঁছল। চিঠির বিষয় অবগত
হয়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদের
কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর
হতে থাকলেন। পথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর
বিন সাদ, সীমার বিন যুল জাওশান এবং হুসাইন
বিন তামীমের নেতৃত্বে কারবালার
প্রান্তরে হুসাইনের গতিরোধ করল। হুসাইন
সেখানে অবতরণ করে আল্লাহর দোহাই
দিয়ে এবং ইসলামের কথা স্মরণ
করিয়ে দিয়ে তিনটি প্রস্তাবের যে কোন
একটি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহবান জানালেন।
হুসাইন বিন আলী (রা:) এবং রাসূলের
দৌহিত্রকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক।
তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বয়াত
গ্রহণ করবেন। কেননা তিনি জানতেন যে, ইয়াজিদ
তাঁকে হত্যা করতে চান না।
অথবা তাঁকে মদিনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক।
অথবা তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের
দিকে চলে যেতে দেয়া হোক। সেখানে তিনি মৃত্যু
পর্যন্ত বসবাস করবেন এবং রাজ্যের
সীমানা পাহারা দেয়ার কাজে আত্ম নিয়োগ
করবেন। (ইবনে জারীর হাসান
সনদে বর্ণনা করেছেন)
ইয়াজিদের সৈন্যরা কোন প্রস্তাবই
মানতে রাজী হল না। তারা বলল: উবাইদুল্লাহ বিন
যিয়াদ যেই ফয়সালা দিবেন আমরা তা ব্যতীত অন্য
কোন প্রস্তাব মানতে রাজী নই। এই
কথা শুনে উবাইদুল্লাহএর এক সেনাপতি (হুর বিন
ইয়াজিদ) বললেন: এরা তোমাদের কাছে যেই
প্রস্তাব পেশ করছে তা কি তোমরা মানবে না?
আল্লাহর কসম! তুর্কী এবং দায়লামের লোকেরাও
যদি তোমাদের কাছে এই প্রার্থনাটি করত,
তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত না।
এরপরও তারা উবাইদুল্লাহএর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন
করতেই দৃঢ়তা প্রদর্শন করল। সেই
সেনাপতি ঘোড়া নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন
এবং হুসাইন ও তাঁর সাথীদের দিকে গমন করলেন।
হুসাইনের সাথীগণ ভাবলেন: তিনি তাদের
সাথে যুদ্ধ করতে আসছেন।
তিনি কাছে গিয়ে সালাম দিলেন। অতঃপর সেখান
থেকে ফিরে এসে উবাইদুল্লাহএর সৈনিকদের
সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাদের
দুইজনকে হত্যা করলেন। অতঃপর তিনিও নিহত
হলেন। (ইবনে জারীর হাসান
সনদে বর্ণনা করেছেন)
সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে হুসাইনের সাথী ও
ইয়াজিদের সৈনিকদের মধ্যে বিরাট ব্যবধান
ছিল। হুসাইনের সামনেই তাঁর সকল সাথী বীরত্বের
সাথে যুদ্ধ করে নিহত হলেন।
অবশেষে তিনি ছাড়া আর কেউ জীবিত রইলেন না।
তিনি ছিলেন সিংহের মত সাহসী বীর। কিন্তু
সংখ্যাধিক্যের মুকাবিলায় তাঁর
পক্ষে ময়দানে টিকে থাকা সম্ভব হল না।
কুফা বাসী প্রতিটি সৈনিকের কামনা ছিল
সে ছাড়া অন্য কেউ হুসাইনকে হত্যা করে ফেলুক।
যাতে তার হাত রাসূলের দৌহিত্রের রক্তে রঙ্গিন
না হয়। পরিশেষে নিকৃষ্ট এক
ব্যক্তি হুসাইনকে হত্যার জন্য উদ্যত হয়। তার নাম
ছিল সীমার বিন যুল জাওশান।
সে বর্শা দিয়ে হুসাইনের শরীরে আঘাত
করে ধরাশায়ী করে ফেলল। অতঃপর ইয়াজিদ
বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে ৬১ হিজরীর মুহাররাম
মাসের ১০ তারিখে আশুরার পবিত্র দিনে ৫৭ বছর
বয়সে তিনি শাহাদাত অর্জনের সৌভাগ্য লাভ
করেন।
বলা হয় এই সীমারই হুসাইনের মাথা দেহ
থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেউ কেই বলেন: সিনান
বিন আনাস আন্ নাখঈ নামক এক ব্যক্তি তাঁর
মাথা দেহ থেকে আলাদা করে।

No comments: