ঢাকা: হাল ছাড়েননি মন্ত্রিত্ব
থেকে বাদ পড়া আওয়ামী লীগের
সাবেক নেতারা। কেন্দ্রীয়
নেতারা রাজধানীতে সভা-সেমিনার,
দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন
করে নিজেদের উপস্থিতি জানান
দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই
জেলা পর্যায় থেকে মন্ত্রিত্ব
পাওয়া নেতারাও। সংসদীয় এলাকায়
বা জেলার রাজনীতিতে আবার সক্রিয়
হয়ে নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন ও
বিশ্বস্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন।
তারা বিভিন্নভাবে দলীয়
সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর
দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
কথাও বলেছেন নিয়মিত। আসা-
যাওয়া করছেন গণভবনে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার
গঠনে মন্ত্রিসভা থেকে বাদপড়া সাবেক
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের
কর্মকাণ্ডে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে।
তারা এখনো আশাবাদী যেকোনো সময়ে মন্ত্রিসভায়
ডাক পড়বে তাদের। তারা বলছেন,
রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছুই
নেই। রাজনীতির হাওয়া কোন
দিকে কখন বয় কেউ জানে না।
সে হাওয়া কখনো প্রতিকূল হবে,
কখনো অনূকূলে হবে। এর
মধ্যে ঠিকে থাকাই রাজনীতিবিদের
কাজ। কার কখন কপাল খুলে বলা যায়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের
মধ্যে এ
মেয়াদে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত
সেনগুপ্ত, ড. মহীউদ্দীন খান
আলমগীর, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু,
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট
সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট
জাহাঙ্গীর কবির নানক, আন্তর্জাতিক
বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল অব. ফারুক
খান, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ড. আবদুর
রাজ্জাক, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান
মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক
ক্যাপ্টেন অব. এবি তাজুল ইসলাম।
এছাড়া সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল
কালাম আজাদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ
ফ ম রুহুল হক, পানিসম্পদ মন্ত্রী রায়
রমেশ চন্দ্র সেন, প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রী আফসারুল আমিন,
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর
রহমান তালুকদার,
স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু,
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান
ফকির, শিল্পপ্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক
চৌধুরীসহ অনেক জেলা-নেতারাও
এবার মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মন্ত্রিত্ব
হারিয়ে এখন পর্যন্ত
বিভিন্নভাবে বেশি সরব রয়েছেন
আওয়ামী লীগের প্রচার ও
প্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক বন ও
পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এই
আওয়ামী লীগের নেতা নবম জাতীয়
সংসদে মন্ত্রী হয়ে বিভিন্ন জাতীয়
ইস্যু ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮
দলীয় জোটের সমালোচনা করে ব্যাপক
আলোচনায় আসেন। মন্ত্রিত্বের
পুরো মেয়াদে তিনি ছিলেন সরব।
ফলে তিনি নির্বাচনকালীন
সরকারের ছোট মন্ত্রিসভাতেও ঠাঁই
করে নেন।
তবে বর্তমান মন্ত্রিসভায় স্থান
লাভে ব্যর্থ এই নেতা প্রথম দিকের
হতাশা কাটিয়ে ক্রমাগত উপস্থিত
থাকছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও
আলোচনা সভায়। দলের পক্ষে স্ট্যান্ড
নিয়ে কথা বলেছেন নিয়মিত।
গত সরকারের প্রথম দিকে মন্ত্রিত্ব
না পেলেও তখন বিরোধীদের
সঙ্গে নিজ দল ও সরকারেরও
সমালোচনা করে বক্তব্য
দিয়ে আলোচনায় ছিলেন
আওয়ামী লীগের প্রবীণ
পার্লামেন্টারিয়ান,
উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত
সেনগুপ্ত। শেষের
দিকে জায়গা করে নেন মন্ত্রণালয়ে।
প্রবীণ এই রাজনীতিকের রেল
মন্ত্রণালয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারির
দায়ে কিছু দিনের মাথায় দফতর
হারালেও ছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু নতুন
সরকারে আর ঠাঁই হয়নি।
দফতর হারানোর পর থেকেই
আবারো নিয়মিত ‘দোকান’র
অনুষ্ঠানে দেখা মিলে তার। নতুন
মন্ত্রিসভায় জয়গা না পাওয়ার পরেও
ব্যতয় ঘটেনি। এদিকে কিছুদিন
আগে শারীরিক অসুস্থতার জন্য
দেখা না গেলেও
তা কাটিয়ে উঠে বঙ্গবন্ধু একাডেমী,
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ কিছু
সংগঠনের আলোচনা সভায় উপস্থিত
থাকছেন তিনি। এবারো কথা বলছেন
আগের মতোই। বিরোধীদের সঙ্গে নিজ
দলের সরকারের সমালোচনাও করছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর
সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
নবম সংসদের সরকারের মন্ত্রিসভায়
তিনি পেয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
দায়িত্ব। যদিও বিভিন্ন
সমালোচনার
কারণে পরে রদবদলে স্থান পান ডাক
ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্ব। বর্তমান মন্ত্রিসভায় স্থান
হয়নি। তবে বিভিন্ন ‘দোকান’ ছোট
ছোট সংগঠন ও দলীয়
অনুষ্ঠানে দেখা যায় প্রায়ই।
সেখানে বিএনপি-জামায়াত জোটের
বিরুদ্ধে কথা বলছেন নিয়মিত।
অন্যদিকে রাজধানীতে বিভিন্ন
দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত
থেকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছেন
আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও
ডা. দীপু মনি। সাবেক এই স্থানীয়
সরকার
প্রতিমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রিত্ব
হারিয়ে প্রাথমিক
হতাশা কাটিয়ে উঠে দলীয়
ভূমিকা রাখার জন্য সচেষ্ট রয়েছেন
বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত
করেছেন।
এ লক্ষে এই সাবেক এই দুই মন্ত্রী ও
আওয়ামী লীগ নেতা রাজধানীর
ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ
সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক
কার্যালয়ে আয়োজিত দলীয় সংবাদ
সন্মেলনসহ নেতাকর্মীদের
মধ্যে সময় দিচ্ছেন।
এছাড়াও সাবেক
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মহীউদ্দীন
খান আলমগীর ও প্রতিমন্ত্রী শামসুল
হক টুকু। এই দুইজনের মধ্যে মহিউদ্দীন
খান আলমগীর আওয়ামী লীগের
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হলেও
মন্ত্রিত্ব হারানোর পর সাবেক এই
তুখোড় আমলাকে দলীয় কর্মকাণ্ডে এখন
পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। কিন্তু
সাবেক স্বরাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে কোনো দলীয়
পদবিতে না থাকলে তিনি ইদানীং বিভিন্ন
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। ২৩
এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সরকারি বাসভবন
গণভবনে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার
প্রথম
বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর
প্রেস উইংয়ের সংবাদ
সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। পরের
দিন রানা প্লাজা দুর্ঘটনার প্রথম
বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিজিএমইএ
আয়োজিত দোয়া মাহফিলের
অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।
এদিকে ঠাকুরগাঁও-১ আসন
থেকে নির্বাচিত হয়ে গত সরকারের
সময় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্ব পান রমেশ চন্দ্র সেন।
মন্ত্রিত্ব হারিয়ে তিনি এখন
জেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক
কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সময় পার করছেন
বলে জানা যায়।
নবম জাতীয় সংসদের সরকারের
মন্ত্রিসভায় প্রথম দিকে স্থান
না পেলেও বিভিন্ন সামাজিক
স্বাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে সরব
থেকে ও সরকারের
সমালোচনা করে পরবর্তীতে স্থান
করে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত
সেনগুপ্ত ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য
ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল তখন
পেয়েছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্ব। তখন থেকেই বিভিন্ন
মন্তব্য ও কাজের মাধ্যমে সাধারণ
মানুষের কাছে হয়ে ওঠেন বেশ
জনপ্রিয়।এরপর নির্বাচনকালীন ছোট
মন্ত্রিসভা ও বর্তমান নতুন
মন্ত্রিসভায়ও জায়গা করে নেন
তিনি।
পরবর্তী সময়ে এ তালিকায় যোগ হন
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। বিগত
সরকারের মন্ত্রিত্ব পাওয়ার
আগে তিনিও সরব ছিলেন বিভিন্ন
সামাজিক স্বাংস্কৃতিক সংগঠনের
অনুষ্ঠানে। কথা বলেছেন সরকার ও
বিরোধীদের সমালোচনা করে। যদিও
মন্ত্রী হবার পরে আর খুব
বেশি দেখা মেলেনি দোকান’র
অনুষ্ঠানে।
কিছু দিন আগে ঢাকা রিপোর্টার্স
ইউনিটিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট
আয়োজিত এক আলোচনা সভায়
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
আহমদ হোসেন বলেছেন,
“ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির
প্রোগ্রামে এসে অনেকেই
ক্যাবিনেটে গেছেন। তাই আমিও
ঢাকা রিপোর্টার্স
ইউনিটিতে আসা শুরু করেছি।
দেখি কী হয়?”
আহমদ হোসেন বর্তমান ক্যাবিনেটের
কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলেন,
“আমাদের নাসিম ভাই,
ডাকসাইটে মন্ত্রী ওবায়দুল
কাদেরসহ অনেকেই এখানে (ডিআরইউ)
বক্তব্য-বিবৃতির
মাধ্যমে মন্ত্রিসভায় স্থান
পেয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, “মন্ত্রিসভায় অনেক
সময় পরিবর্তন হয়। অনেকেই
সাইডলাইনে আছেন। এ জন্যই আমিও
আসা শুরু করেছি। যদি ভাগ্য খোলে।”
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment