ুর: নিজেকে ‘শেষ নবী’ দাবি করা সেই
ভণ্ড ফিরোজ কবীরকে আটক করা হয়েছে।
ধর্মপ্রাণ মোসলমানদের মধ্যে বিভেদ
সৃষ্টি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানাসহ
নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
শনিবার রংপুর র্যাব-১৩ এর একটি দল
নগরীর
কামালকাছনা এলাকা থেকে তাকে আটক
করে।
বিকেলে নগরীর কলেজ রোড এলাকায়
র্যাব-১৩ কার্যালয়ে সংবাদ
সম্মেলনে ফিরোজ কবীরের নানা অপকর্মের
বিবরণ তুলে ধরেন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক
মেজর মনোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য
বিমানবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন ফিরোজ
কবীর। এরপর তিনি রংপুর নগরের
মাহিগঞ্জ এলাকায়
একটি আস্তানা তৈরি করে সেখানে নিজেকে ‘নবী’
বলে পরিচয় দেন।
তিনি আরো জানান, ফিরোজ এলাকায়
বলে বেড়াতেন ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন
আরব দেশের নবী আর তিনি বাংলার নবী’।
তিনি নবুয়ত পেয়েছেন দাবি করে ধর্মপ্রাণ
মোসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত
হানেন। বিভিন্নভাবে প্রতারণার
মাধ্যমে লাখ-লাখ টাকাও হাতিয়ে নেন।
এছাড়াও ফিরোজ কবীর নিঃসন্তান নারীদের
সন্তান পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তাদের
সঙ্গে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন।
আবার সেই দৃশ্য গোপনে ভিডিও
করে ব্ল্যাকমেইল করেও আসছিলেন।
র্যাব জানায়, তার কাছে ‘একুশে সংবাদ’
নামে একটি পত্রিকার পরিচয়পত্র
পাওয়া গেছে। ভণ্ড ফিরোজ কবীরের
বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার
চতরা ইউনিয়নের ছোটপায়া গ্রামে। বাবার
নাম তৈয়বুর রহমান।
এর আগে ফিরোজকে গ্রেপ্তারের
দাবিতে রংপুরে ঈমান ও আকিদা কমিটির
উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও ডিসির কার্যালয়
ঘেরাও করে ধর্মপ্রাণ মানুষ। আল্টিমেটামও
দেন তারা।
ফিরোজ কবীর প্রথমে লালমনিরহাটের
হারাটি ইউনিয়নের শাহ আহমেদ কবিরের
(রহ.) মাজারের নামে শহরের মিশন
মোড়ে বাসা নিয়ে নিজেকে পীর দাবি করেন।
অগ্নিপূজা, পানি পড়া, দোয়া, তাবিজ,
অলৌকিক চিকিৎসা ও মাজার সংস্কারের
নামে ভক্তদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ
আত্মসাৎ করেন।
এলাকাবাসী বিষয়টি টের পেয়ে ২০১০
সালে ফিরোজ কবীরকে স্থানীয় সাবেক
কাউন্সিলর মোস্তফার নেতৃত্বে আটক
করে গণধোলাইয়ের পর থানায় সোপর্দ
করে। পরে রাঘববোয়ালদের
তদবিরে থানা থেকে বের
হয়ে রাতারাতি লালমনিরহাট ত্যাগ করেন
তিনি।
এভাবে লালমনিরহাট থেকে বিতাড়িত
হয়ে রংপুর নগরীর শালবনে এসে বসবাস শুরু
করেন। সেখান থেকে নগরীর স্টেশন রোডের
শাহী মসজিদের পাশে একটি ৩ তলা ভবনের
তৃতীয় তলায় আস্তানা গেড়ে আবারও
পীরগিরি শুরু করেন ফিরোজ। এসময়
তিনি নাম পরিবর্তন করে হযরত শাহ
ফিরোজ কবীর (রহ.)
ওরফে দয়ালবাবা রাখেন। তার নিজস্ব কিছু
লোকজনের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই
শহরের নামিদামি বিভিন্ন স্তরের লোকজন
ভক্ত হয়ে যায়।
পরে তিনি একটি স্থায়ী দরবার শরিফ
নির্মাণের জন্য ভক্তদের কাছে প্রস্তাব
দেন এবং সেই দরবার শরিফের সভাপতি ও
সেক্রেটারি নির্বাচিত করেন। এরপরই শুরু
হয় দরবার শরিফ নির্মাণের জন্য অর্থ
সংগ্রহ। ভক্তদের কাছ থেকে ঋণ ও অনুদান
সংগ্রহ করে ‘দয়াল বাবা’র
হাতে তুলে দেয়া হয়। মাহিগঞ্জের
বড়হাজরায় স্থায়ী দরবার নির্মাণের জন্য ২৪
শতক জমি কিনে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
ভক্তদের তিনি জানান, এই দরবার শরিফ
নির্মাণের জন্য টাকা দিলে ৩০ বছর আয়ু
বৃদ্ধি পাবে। আর না দিলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ
পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে ভীত
হয়ে অনেকেই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয়।
স্থাপনা নির্মাণের পর ২০১৩ সালের ১১
মার্চ দরবারটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত
করে দেয়া হয়। সেখানে বিপুল সংখ্যক ভক্ত
নিয়মিত আসা-যাওয়া শুরু করে। ফিরোজ
কবীর তখন অগ্নিপূজার মাধ্যমে ভক্তদের
বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধীর
চিকিৎসা দেয়া এবং অর্থ সংগ্রহ
করতে থাকেন। পাশাপাশি দরবার
শরিফে প্রতিদিন ধর্মীয় আলোচনা ও
নিয়মকানুন শেখানোর নামে প্রথমে গুরু
দক্ষিণা হিসেবে মাথা নিচু করে হাতজোড়
করে সম্মান জানাতে হয়। ভক্তরা যতক্ষণ
গুরুর কাছে থাকবেন ততক্ষণই তার মুখের
দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এই নির্দেশ
অমান্য করলে ভক্তদের মারাত্মক
ক্ষতি এমনকি প্রাণনাশের সম্ভাবনার কথাও
বলেন ‘দয়ালবাবা’।
তিনি এও বলতে থাকেন, তার নির্দেশ
মানলে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ছাড়াই
মানুষ বেহেশতে যেতে পারবে। তার
পায়ে সেজদা দিলেই পরকালের আজাব
থেকে মুক্তি মিলবে, আয়ু বাড়বে।
এমনকি যাকে খুশি ওই ‘দয়ালবাবা’ আয়ু
বৃদ্ধি ও হরণ করতে পারেন।
পবিত্র কোরআন শরিফকে আরবি ভাষার
একটি বই হিসেবে দাবি করে তিনি ভক্তদের
বলেন, ‘এই বইয়ে অনেক ভুল তথ্য আছে।
সুতরাং কোরআনকে শ্রদ্ধাভক্তি করার
কোনো যুক্তি নেই।’ তিনি উদাহরণ
দিয়ে বলেন, ‘এই কোরআনে সব
ভাষাভাষিদের জন্য দয়াল (আল্লাহ) একজন
নবী ও রাসুল তৈরি করেছেন।
বাংলা ভাষাভাষিদের জন্যও একজন নবী ও
রাসুল অবশ্যই আছেন। আমিই হচ্ছি সেই
নবী ও রাসুল।’
নিজেকে ১৩০০ বছর আগে লালমনিরহাটের
শাহ আহমেদ কবির
এবং বর্তমানে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় রাহাত
আলী শাহ এবং কুমিল্লার হোমনায় কালুশাহ
এই তিন পীরের রুহানী সন্তান
বলে দাবি করেন ফিরোজ।
তিনি ভক্তদের বলেন, ‘দয়ালবাবা তাদের
ওপরই (ওই তিন পীর) কেতাব নাজিল
করেছেন, তাদের রুহানী সন্তান
হিসেবে আমি এখন বাংলাভাষাভাষিদের
নবী বা রাসুল।’
প্রথম কেউ এলে ফিরোজ কবীরের নিজস্ব
বাহিনী তাকে বিভিন্ন রোগ-
ব্যাধী ভালো হওয়া, প্রেমসহ
মনোষ্কামনা পূর্ণ হওয়া, সম্পদ বৃদ্ধি, আয়ু
বৃদ্ধি এবং পরকালের আজাব
থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের
উদাহরণ দিয়ে প্রলুব্ধ করে। আদেশ
অমান্যকারীদের ওপর থেকে ‘দয়ালবাবা’
দৃষ্টি সরিয়ে নিলে মৃত্যু হয় বলেও ভয়
দেখানো হয়।
এভাবে তরুণী এবং নারীদের প্রেম,
বন্ধ্যাদের সন্তান জন্মানো,
স্বামী বশে আনাসহ মনোষ্কামনা পূরণের
নামে ‘দয়ালবাবা’ ফিরোজ কবীর
প্রক্রিয়া হিসেবে তাদের সঙ্গে শারীরিক
সম্পর্ক করতেন। এই
কথা বাইরে বললে অপমৃত্যু হবে বলেও
তিনি সেসব তরুণীকে হুঁশিয়ার করে দেন।
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment