Headlines



gazitv2

w41j

gazitv

Sunday, May 18, 2014

শাহজাহান আর মমতাজের অমর প্রেম কাহিনী

ডেস্ক: শাহজাহান আর
মমতাজের অমর প্রেম
কাহিনী কে না জানে?
শাহজাহানের তখন বয়স
মোটে পনের। আগ্রার বাজার
দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ-ই তার
চোখে পড়ে এক
পরমাসুন্দরী মেয়েকে । মেয়েটির
নাম আরজুমান্দ বেগম ।
তারও বয়স পনের। এক
দেখাতেই তাকে পছন্দ
হয়ে যায় শাহজাহানের।
পরে তাদের দুজনেরই বিয়ে হয়।
কিন্তু রাজনৈতিক কারণে এই
বিয়ের আগেই পারস্যের
রাজকন্যা কে বিয়ে করেন
শাহজাহান।
আরজুমান্দবানুর পরিচয় হয়
শাহজাহানের দ্বিতীয়
স্ত্রী হিসেবে। এই
আরজুমান্দবানুই হলেন
শাহজাহানের মমতাজ ।
মমতাজই ছিলেন
শাহজাহানের সব চেয়ে প্রিয়
বেগম । উনিশবছরের বিবাহিত
জীবনে মমতাজের মোট
চোদ্দটি সন্তান হয়। চর্তুদশ
সন্তানের জন্মের সময়
মমতাজের মৃত্যু হয়
আগ্রা থেকে বহুদূরে ,
বারহামপুরে । স্ত্রীর মৃত্যুর
পর সাতদিন সাতরাত
শাহজাহান কিছু খান নি ।
ঘর থেকেও বার হন নি।
সাতদিন পর শাহজাহান
বাইরে বেরোলেন। তখন তার
চুলের রং ধুসর হয়ে গেছে ,
মুখ ফ্যাকাসে ।তিনি এমন এক
স্মৃতিসৌধ বানাবার সিদ্ধান্ত
নিলেন, যা বিশ্বের কাছে এক
অনন্য নজির হয়ে থাকবে।
শুরু হলো তাজমহল বানানো।
সেটা ছিল ইংরেজি ১৬৩১
সাল। আজ যেখানে তাজমহল
দাঁড়িয়ে ,সেখানটা ছিল
মহারাজা জয় সিংহের
সম্পত্তি। শাহজাহান মধ্য-
আগ্রার একটি প্রকান্ড
রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে ওই
জমিটি অধিগ্রহণ করেন। তাজমহল
নির্মাণ শুরু হয়। প্রায়
২০০০০
মিস্ত্রিকে কাজে লাগানো হয়
।প্রায় ১০০০
হাতি কাজে লাগানো হয়
মালপত্র বহনের জন্যে ।
তাজমহল নির্মাণের মুখ্য
নকশা তৈরী করেন ওস্তাদ
আহমেদ লাহাউরী। তখনকার
বেশিরভাগ মুঘল ইমারত-ই
তৈরী হত লাল বালু
পাথর দিয়ে। যেমন হুমায়ুনের
স্মৃতিসৌধ, জামা মসজিদ ,
তৈমুরের স্মৃতিসৌধ। এই সৌধ
নির্মাণে শাহজাহান প্রথম
শ্বেতপাথর ব্যবহার করেন।
এই বিষয়টি গোটা ভারতবর্ষের
দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ১৬৪৮
সালে, মানে ১৭ বছর পর
এই স্মৃতি সৌধের প্রাথমিক
নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
তারপর আশপাশের
বাকি কাজ–বাগান , তিন
দিকের তিনটি প্রবেশদ্বার,
ইত্যাদি পুরোপুরি শেষ
হতে আরো পাঁচবছর সময় লাগে ।
এই সৌধ নির্মাণে বিভিন্ন ধর্মের
স্থাপত্যের অনুকরণ
করা হয় ; যেমন তাজের
মাথার ত্রিশূলটি হিন্দুদের
শিবমন্দিরের অনুকরণে,
মুসলমানদের মসজিদের
মতো করা হয় তাজমহলের
চারটি মিনার ও মাথার
গম্বুজ ।তাজমহলের শ্বেত
পাথর আনা হয়েছিল সুদূর
রাজস্থানের
মাকরানা থেকে
।পান্না আসে পাঞ্জাব
থেকে , চিন থেকে স্ফটিক,
তিব্বত , আফগানিস্থান ও
শ্রীলংকা থেকে আসে নানা ধরনের
নীলকান্তমণি ।মোট ২৮ ধরণের
দুষ্প্রাপ্য দামী পাথর
পৃথিবীর
নানা জায়গা থেকে আনানো হয়
শ্বেতপাথরের গায়ে বসানোর
জন্যে । তাজমহলের এই
অসাধারণ কীর্তি শুধু
মাত্র ভারতীয় বিশেষজ্ঞ
দ্বারাই নির্মিত হয় নি—
পৃথিবীর বিভিন্নপ্রান্তের
বিশেষজ্ঞদেরও আনা হয়েছিল
নানা কাজের জন্যে।
ভাস্করাচার্যরা আসেন
বুখারা থেকে, হস্তাক্ষর
শিল্পীরা আসেন
সিরিয়া এবং পারস্য থেকে ,
রত্ন শিল্পীরা আসেন উত্তর
ভারত থেকে ,
মণিকারেরা আসেন
বালুচিস্থান থেকে। এছাড়াও
আরো অনেক শিল্পী নানা দেশ
থেকে আসেন এই স্মৃতিসৌধের
সৌষ্ঠববর্দ্ধনের কাজে।
তাজমহল যে জমির ওপর
দাঁড়িয়ে, সেই জমি ছিল অত্যন্ত
নীচু । প্রচুর মাটি ফেলে সেই
জমি কে যমুনা নদীর তীরের
উচ্চতা থেকে প্রায় ৫০
মিটার [১৬০ ফুট] উচু
করা হয়। ঠিক এখনকার
earthquake proof বহুতলের
column নির্মাণের মতো্ই
সেখানে অনেকগুলি পাতকুয়া খোঁড়া হয়
ও তারপর
সেগুলি পাথর,বালি ও
মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়।
তাজমহলের এই ভিতটি ভূমিকম্প
বা প্রবল প্রাকৃতিক
বিপর্যয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না ।
ওই ভরাট-
করা পাতকুয়াগুলির ওপর
এক বিশাল মঞ্চ
তৈরী করে তার ওপর সৌধের
র্নিমাণকাজ সম্পন্ন
করা হয়। এখনকার
বাড়ি তৈরী করতে হলে বাঁশের
তৈরী ভারা লাগে ।
তাজমহল নির্মাণের
জন্যে যে ভারা তৈরী করা হয়
তাও এক আশ্চর্য নজির ।
প্রকান্ড এক ইঁটের
তৈরী ভারা বানানো হয়েছিল
তাজমহলের ওপরের কাজের
জন্যে । সেই ভারা এতটাই
বড় ছিল
যে রাজমিস্ত্রিরা জানায়
ভারা ভাঙতে তাদের কযেক
বছর সময় লেগে যাবে । তখন
শাহজাহান র্নিদেশ দেন এই
ভারার ইঁট যে কেউ
নিয়ে যেতে পারে একেবারে বিনামূল্যে ।
রাতারাতি সেই প্রকান্ড
ভারা অদৃশ্য হয়ে যায়।
রাজ্যের হাজার হাজার
গরিব কৃষক সেই ভারার ইঁট
খুলে নিয়ে যায় তাদের নিজেদের
গৃহ নির্মানের জন্যে।
তাজমহলের মূল
আকৃতি অষ্টকোণী। যা আজকাল
আমরা হামেশাই দেখি সেই
লোহার কাঠামো তাজমহল
নির্মাণে ব্যবহার করা হয়
নি। পাথরের ওপর পাথর
সাজিয়ে নির্মিত হয় এই সৌধ ।
আশ্চর্য করে এর মাথার
ওপরকার গম্বুজের কারুকাজ।
এতেও কোনো লোহার
কাঠামো নেই। ছোট
একটি বৃত্তের মত পাথর
সাজিয়ে তার ওপর-ওপর
পাথর
সাজিয়ে চলা এবং তার
পরিধি প্রথমে ক্রমাগত
বাড়িয়ে তারপর
কমিয়ে গম্বুজটি নির্মিত। ঠিক spiral
formation বলা চলে। Spire
টা প্রথমে ছোট থেকে বড়
তারপর বড় থেকে ছোট।
তাজমহলের মূল সৌধের চার
ধারে প্রায় ৪০ মিটার
(১৩০ ফুট)উঁচু
চারখানি মিনার রযেছে।
মিনারগুলি একেবারে সমান
মাপের ।দেখলে মনে হয়
মিনারগুলি তিন ভাগে বিভক্ত
এবং প্রতি ভাগে এক
খানি করে বারান্দা রযেছে।
এরপর আসে ভাস্কর্যের কথা।
অসাধারণ ভাস্কর্যের
নিদর্শন তো সারা তাজমহল
জুড়ে ছড়িয়ে আছে। আশ্চর্যের
কথা এই যে প্রতিটি ভাস্কর্য
এবং তার
নকশা একেবারে সমান
মাপের। তখনকার দিনে সব
কাজ ই হাতের কাজ। মেসিন
বা ছাঁচ এর চল ছিল না ।
তাও সব নকশাই সমান ।
তাজমহলের চারদিকে অনেক
গুলি আর্চিং এর কাজ
করা খিলেন রযেছে।
যাকে বলা হয় ইয়ান। এই
ইয়ানের চার ধারে পবিত্র
কোরান ও ধর্ম প্রচারের
নানা বাণী খোদাই
করা আছে ।
ভাস্করাচার্যদের এ এক
অসাধারণ কীর্তি !!
আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে,
সাধারণ ভাবে কাছের
জিনিস আমরা বড় দেখি আর দুরের
জিনিস ছোট । কিন্তু তাজমহলের
ইয়ানের একেবারে মাথার
ওপরের শিলালেখ যা ছোট
হওয়া স্বাভাবিক ছিল
তাও কিন্তু সমান
আকারে নজরে পড়ে । এর
কারণ তলার হরফের
তুলনায় ওপরের হরফ বেশ বড় ।
সেগুলি এমন ভাবেই ক্রমাগত
নীচ থেকে ওপরে বড়
করা হযেছে যে তলায়
দাঁড়িয়েও সব কটি হরফ এক
মাপের বলে মনে হয়
।তাজমহল সৌন্দর্যায়নের
জন্যে এই
শিলালেখতে ব্যবহারিত হয়
পবিত্র কোরাণ থেকে উদ্ধৃত
বাণী । এই শিলালেখ কিন্তু
রং দিয়ে লেখা নয় ! এর
লেখাতেও আরেক আশ্চর্য ।
প্রথমে শ্বেতপাথরের ওপর
হরফাকৃতি খোদাই
করা ,তারপর সেই
খোদাইকরা জায়গায়
সমান মাপের কালো পাথর
কেটে বসিয়ে সেই বাণী লেখা।
দেখলে বোঝার উপায় নেই
যে এই লেখা পাথরের তৈরী ।
কোনো উঁচু-নীচু নেই ।
একেবারে মসৃণ সমান
করা লেখা ! তাজমহলের
অন্তর্সজ্জাও নজিরবিহীন ।
ভেতরে পাথরের ভাস্কর্য
অসাধারণ । পাথরের
পালিশ এতই উচ্চ মানের
যে তার থেকে আলো প্রতি্ফলিত
হয় ।
যে স্থানে মমতাজকে কবরস্থ
করা হযেছিল সেই জায়গায়
যাওয়া বর্তমানে নিষিদ্ধ ।
সেটা একদম নীচে তলায় ।
সমাধির ঠিক ওপরের তলায়
একটি কৃত্রিম সমাধি আছে ।
লোকে সেই সমাধিই দেখে । সেই
সমাধির চারধার এক
অসাধারণ পাথরের
বেড়া দিয়ে মোড়া। সেই পাথরের
বেড়াটাও এক অসাধারণ
কাজ । পাথর কেটে কেটে নিখুঁত
জালির নির্মান করা হযেছিল ।
আর সেই জালিতে অসাধারণ
নকশা । যার নিখুঁত কাজ
পর্যটকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট
করে ।


Posted via Blogaway

No comments: