বিজয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বির্তক শুরু হয়। এই
নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কম যুক্তি ওঠেনি। তবে আদতে তার
এভারেষ্ট বিজয় যে ‘মিথ্যাগল্প’ তা চূড়ান্তভাবে প্রমাণ
করা যায়নি।
সেই বির্তকের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি বির্তক
এসে হাজির। এবার মুসা ইব্রাহীম বির্তক পাহাড় নিয়ে নয়,
বিতর্ক সাগর নিয়ে। তার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেয়া নিয়ে শুরু
হয়েছে নতুন বির্তক। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল '৭১' এ
সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রচারের পরপ এই বির্তক শুরু হয়।
এই অবস্থায় আমরা কথা বলেছি মুসা ইব্রাহীমের সাথে।
মঙ্গলবার বিকালে তিনি নেপাল থেকে দেশে ফেরেন।
বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফেরার পথেই তিনি কথা বলেন
পরিবর্তন-এর সাথে। কথা হয় বাংলা চ্যানেল
থেকে এভারেষ্ট বিতর্ক নিয়ে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন
আবদুল্লাহ মাহফুজ।
পরিবর্তন : কেমন আছেন ?
মুসা ইব্রাহীম : এইতো ভালোই। কিছুক্ষণ আগে নেপাল
থেকে ফিরলাম।
পরিবর্তন : নেপাল গিয়েছিলেন...
মুসা ইব্রাহীম : হ্যা, ‘এভারেষ্ট বিজয়’ নিয়ে কম বিতর্ক
তো হলো না। নেপাল গিয়ে সেই বির্তকের পেছনে কিছু
বিস্ময়কর তথ্য জেনে ফিরলাম...।
পরিবর্তন : কী রকম..
মুসা ইব্রাহীম : সময় হলে সবই জানাবো।
পরিবর্তন : তাহলে সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া নতুন
বির্তকের বিষয়েই আসি। আপনার বাংলা চ্যানেল
পাড়ি দেয়া নিয়ে যে বির্তক শুরু হয়েছে..
মুসা ইব্রাহীম : ২০১১ সালের ৯ মার্চ আমরা যখন
বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেয়ার জন্য নামলাম বদর মোকামে,
সেদিন জাপানে সুনামি ছিলো। সুনামির কিছুটা প্রভাব আমাদের
এখানেও এসে পড়েছিলো। আমার মনে হয় এই
বিষয়ে এক্সপার্ট মতামত যারা বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছে,
লিপটন সরকারের মতামত নিলেই ৭১ টিভির রিপোর্টের
পুরো বিষয়টি ক্লিয়ার হবেন।
পরিবর্তন : আমরা আপনার বক্তব্য জানতে চাচ্ছি...
মুসা ইব্রাহীম : আমার দিক থেকে বলছি, ৯ মার্চ
সাতারে নামলাম যখন তখন টিংকু চৌধুরী নামের একজন
ছিলেন যিনি আমাদের টিমের বাহিরে ছিলেন।
তিনি নৌকা নিয়ে আমাদের সাতারে খুবই ডিস্টার্ব করছিলেন
অতিউৎসাহী হয়ে। সেই ডিস্টার্বের ফলে এবং সুনামির
ঢেউয়ের প্রভাবে এমন
একটা অবস্থা হয়েছিলো যে আমি সাতারের সময় ট্রলারের
নিচে চলে গিয়েছিলাম। ট্রলারের লোকজনের কাজই
ছিলো যদি আমাদের কোন প্রাণ
সংশয়ী ঘটনা ঘটে তাহলে তারা যেন আমাদেরকে উদ্ধার করে।
তো তারা আসলে নেই কাজটিই করছিলো, যদিও আমি বারবার
তাদের মানা করছিলাম যে আমাকে তোলার দরকার নেই,
আমি পার হয়ে যেতে পারবো। কিন্তু তাদের কাজ যেহেতু
রেসকিউ করা, তো ওরা আমাকে ট্রলারে টেনে তোলে।
পরিবর্তন: এরপর?
মুসা ইব্রাহীম : টেনে তোলার পর আমি বুঝতে পারলাম,
আমার যেটুকু শক্তি ও সাহস
রয়েছে তা দিয়ে আমি বাকি পথটুকুও পার হয়ে যেতে পারবো।
মাঝখানে ধরেন সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে দশ মিনিট পার হলো।
এখন ৭১ টিভি যা বলতে চাচ্ছে যে,
আমি ট্রলারে করে বাকি পথ গিয়ে সেন্টমার্টিনের
কাছাকাছি গিয়ে নেমে সাতরে উঠে বলেছি, আমি বাংলা চ্যানেল
পাড় হয়েছি।
এই ঘটনা তো আমি 'মিশন বঙ্গোপ সাগর ও কিলিমানজারো'
নামে আমার একটি বই আছে সেখানেও উল্লেখ করেছি।
বলেছি যে এই এই
কারণে আমাকে ট্রলারে উঠতে হয়েছে এবং সেটা সর্বোচ্চ
দশ মিনিট হবে। ৭১ টিভিতে রিপোর্ট হয়েছে বলে আমি এ
কথা বলছি তা কিন্তু নয়, আমি এটা আগেই বলেছি বই লিখে।
পরিবর্তন : বইটি কবে প্রকাশ হয়েছিলো?
মুসা ইব্রাহীম : এটা ২০১২’র বইমেলায় প্রকাশ হয়েছিলো।
সঠিক তারিখটি বাসায় পৌছে জানাতে পারবো।
পরিবর্তন : আপনি যে সময়টুকু ট্রলারে ছিলেন তখন
কি ট্রলার চলেছে?
মুসা ইব্রাহীম : আমার যতটুকু মনে পড়ে, ওই
সময়টুকুতে ট্রলার চলেনি। আমিও দেখেছি রিপোর্টটা।
আমরা যখন সেন্টমার্টিন থেকে বদর মোকামে যাচ্ছিলাম ১৪
কিলোমিটার ট্রলারে করে গিয়েছি। সেগুলোর ফুটেজও
ওটা হতে পারে।
পরিবর্তন : তাহলে আপনি বলছেন কোনো ধরনের
জালিয়াতি হয়নি?
মুসা ইব্রাহীম : এখন বিষয় হলো,
ওরা যে বলেছে আমি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছি,
আসলে এটা খুবই দুঃখজনক একটি শব্দ আমার জন্য।
এবং এর সাথে এটাও বলতে চাই, আমি মাত্রই ফিরলাম
নেপাল থেকে। ওরা কিছু কথা বলেছে এভারেস্ট
নিয়ে যা ডাহা মিথ্যা কথা। পরে আপনাদের
কাছে আমি বিস্তারিত জানাবো।
আমি আরো একটি কথা বলতে চাই, ২০১২ সালেও কিন্তু
আমি আবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে নেমেছিলাম।
আগে বদর মোকাম থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ১৪
কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো। পরের বার থেকে আমাদের
সাথে যোগ দিয়েছিলেন ডাচ সাতারু ভ্যান গোর মিলকো।
উনি যখন আমাদের সাথে যোগ দিলেন। তখন কিন্তু
আমরা টেকনাফের ফিসারিজ জেটি থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
জেটি পর্যন্ত ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার বা ১০ মাইল সাঁতার
দিলাম। একটা আর্ন্তজাতিক সংগঠন আছে, নাম
হচ্ছে ফিনা (এফ আই এন এ), তো ওরা দশ মাইল
সাঁতারকে পানির ম্যারাথন বলে। এই আয়োজনের
ফলে বাংলাদেশের নাম এবং ইন্টারন্যাশনাল ওপেন ওয়াটার
লং ডিসটেন্স সুইমিং লিস্ট-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই
সাঁতারের ফলে বাংলাদেশের নাম ওই তালিকায় আছে।
পরিবর্তন : তো এই বির্তক তৈরি কেন হচ্ছে?
মুসা ইব্রাহীম : আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এসব কর্মকাণ্ডের
মাধ্যমে তরুণ প্রাণকে আরো উৎসাহিত করা, তাদের সবল
করে তোলা, বাংলাদেশের নাম
আরো ভালোভাবে কিভাবে অর্ন্তভুক্ত করা যায়,
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, বাংলাদেশের
পতাকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা তুলে ধরা।
তো ২০১১ সেই ঘটনা বা ৭১ টিভির নিউজগুলোর পর আমাদের
এই কাজগুলো কতখানি সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব
হবে, তা কতখানি তরুণদের উৎসাহিত করবে, সেটাই এখন
প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। এগুলো দিয়ে আসলে কে লাভবান হচ্ছে?
কতটুকু লাভবান হচ্ছে? সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায়।
পরিবর্তন : তাহলে যে বারবার বিভিন্ন বিষয়
তুলে ধরে ‘মুসা ইব্রাহীম বির্তক’ সামনে চলে আসছে?
মুসা ইব্রাহীম : যদি জালিয়াতির প্রমাণ
তারা দেখাতে পারে দেখাক না! কই প্রমাণ
তো তারা দেখাতে পারছে না। দেখুন,
আমি যদি জালিয়াতি করতাম, তাহলে তো আর এই
ঘটনা কোথাও উল্লেখ করতাম না। আমি তো বলেছিই
আমি নৌকায় উঠেছিলাম (ট্রলার), কেন কিভাবে কতক্ষণ
ছিলাম সবই বলেছি। আবার ২০১২ সালে যে পাড়ি দিলাম, কই
সেটা নিয়ে তো তারা কথা বলছে না। তারা কথা বলবে না, এ
কারণেই যে মুসা ইব্রাহীম বিতর্কের
মাধ্যমে দেশকে কতখানি নিচে নামানো যায়, তারা সেটাই
করছে।
পরিবর্তন : নেপালে কেন গিয়েছিলেন?
মুসা ইব্রাহীম : এভারেস্ট বিজয় নিয়ে যেসব কথা উঠেছিলো,
সেই বিষয়ে কিছু খোঁজ খবর নেয়া।
সেখানে যে কথাগুলো শুনে এসেছি তা খুবই খারাপ লাগলো।
আপাতত এই বিষয় নিয়ে কোন কথা বলছিনা। আমি সময়
মতো জবাব দিয়ে দিবো। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
পরিবর্তন : এভারেস্ট বির্তক নিয়ে এবার গিয়ে কি জানলেন,
যদি কিছুটা জানাতেন...
মুসা ইব্রাহীম : তারা ( যাদের সম্প্রচারিত রিপোর্ট
ঘিরে বির্তক শুরু হয়) নেপালে গিয়ে যে কাজগুলো করেছে...
নেপালে বিভিন্ন মানুষের সাথে আমার কথা হলো। নেপাল
মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের এখন
যিনি সভাপতি আং শেরিং শেরপা, তার সাথে কথা বলে এলাম।
আমি আজকেই তার সাথে দেখা করেছি। আমার কিছু বন্ধুও
ছিলো। তিনি সেই টিভির ওই রিপোর্টারের কথা উল্লেখ
করলেন। তিনি বললেন, ‘আমি তাকে বলেছি ছবিগুলো আসল
(জেনুইন)। তার এভারেস্ট জয় নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ
নেই’।
এভারেস্ট জয়ের পর আমি যে বইটা বের করেছিলাম, সেই
বইটা আমি রিপোর্টার মাহবুব স্মারককে দিয়েছিলাম।
তিনি আমার বইয়ে এভারেস্ট চূড়ায় বাংলাদেশের
পতাকা হাতে তোলা ছবিটা দেখিয়ে নাকি বলেছিলেন,
এটি ফটোশপে কাজ করা। কিন্তু আং শেরিং তাকে বলেছে,
‘না, এটা ফটোশপে করা না ,এটা জেনুইন ছবি’। এ
বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই।
এইযে আং শেরিং বললেন তার কোনো সন্দেহ নেই,
এটা তারা দেখাবেন না। কারণ এটা তাদের স্বার্থের
সাথে যায় না। এইযে বিভিন্ন যায়গায়
মুসা ইব্রাহীমকে নিয়ে যে কথা বলতে গেছে এতে দেশের
লাভটা কী হলো? এর মাধ্যমে তারা এই দেশটাকেই ছোট
করেছে।
আল্লাহ আমার সহায় ছিলেন।
আমি যেতে পেরেছি এভারেস্টের চূড়ায়। অন্য যে কেউই
যেতে পারতো। অন্য যে কারো মাধ্যমেই এই
অর্জনটা হতে পারতো। মুসা ইব্রাহীম কিন্তু
কোনো ফ্যাক্টর না। ফ্যাক্টর হচ্ছে দেশ। দেশের সম্মান ।
কাজেই যারা এই অপকর্ম করে, এই অপপ্রচার চালায়,
তাদের বোঝা উচিত তারা কী করছে।
পরিবর্তন : ধন্যবাদ আপনাকে
মুসা ইব্রাহীম : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
আমা/রর
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment