হয়ে উঠছে রফতানি আয়ে ৮১ শতাংশ অবদান
রক্ষাকারী তৈরী পোশাক শিল্পখাত। সংশ্লিষ্টদের
অনুমান, মাসের শেষ দিকে ঈদ হওয়ায় তৈরী পোশাক
শিল্পখাতে অন্তত ৭০ শতাংশ শ্রমিকই এবারের ঈদ
উপলক্ষে বেতন পাবেন না। শ্রম আইনের অস্পষ্টতার
সুযোগে শ্রমিকদের ঈদ বোনাস পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণই
নির্ভর করছে মালিকপক্ষের দয়ার ওপর। ঈদের
আগে বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ হতে পারে,
হিটলিস্টে থাকা এমন এক হাজার কারখানার
একটি তালিকা তৈরি করেছে মালিকদের সংগঠন
বিজিএমইএ। আর গোয়েন্দাদের মাধ্যমে এমন ৫০০
কারখানার সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিভিন্ন পর্যায়ে শিল্পোদ্যোক্তা ও শ্রমিক নেতার
সাথে কথা বলে জানা যায়, এবারের ঈদ
হচ্ছে ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী মাসের শেষ দিকে।
চলতি মাসের ২৯ অথবা ৩০ তারিখে পবিত্র ঈদুল ফিতর
উদযাপিত হওয়ার কথা। কিন্তু বেতন দেয়ার জন্য
এটি কোনো উপযুক্ত সময় নয়। শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও
চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই বেতন চাওয়ার
মতো নৈতিক শক্ত অবস্থান নেই। মালিকদের অবস্থাও
এমন নয় যে, মাস শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগেই বেতন
পরিশোধ করে দেবেন। আর বোনাসের বিষয়টি তো আরও
দুর্বল অবস্থানে। কিন্তু তাতে কী? ষড়যন্ত্র করার
এবং উসকানি দেয়ার মতো লোকের অভাব হবে না বলেই
আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।
শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি ইংরেজি মাসের ৭ তারিখের
মধ্যে পূর্ববর্তী মাসের বেতন পরিশোধ করার কথা।
কিন্তু দেশের অধিকাংশ কারখানায়ই বেতন পরিশোধ
করা হয় ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে। ২০ শতাংশ
শ্রমিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে বেতন পাওয়া মাত্রই
শ্রমিকরা যাতে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে না যায়
সে জন্য মালিকরা এ কৌশল অবলম্বন করেন
বলে জানা গেছে। সে অনুযায়ী, যেসব কারখানায় নিয়মিত
বেতনভাতা দেয়া হয়, সেগুলোর শ্রমিকরা এবার বেতন
পেয়েছেন রোজার মাঝামাঝিতে। কাজেই নিয়মিত বেতন
পান এমন শ্রমিকদের বেতন নিয়ে এবার তেমন
সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু
সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনিয়মিত কারখানাগুলো নিয়েই।
বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে অন্তত এক
হাজার তৈরী পোশাক কারখানা রয়েছে যেগুলোয় কাজের
অর্ডার নেই বললেই চলে। এসব কারখানার অনেকটিতেই
নিয়মিত বেতন হয় না। দুই থেকে চার মাসের বেতন
বকেয়া রয়েছে এমন কারখানার সংখ্যাও নেহায়েত কম
নয়। তা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ঋণছাড়ের বিষয়টিও
অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় ঈদের আগে অন্তত ৭০ শতাংশ
শ্রমিক বেতন পাবেন না। যেসব কারখানার
অবস্থা ভালো সেখানকার শ্রমিকরা থোক বরাদ্দ
হিসেবে কিছু বোনাস পেলেও অন্তত পাঁচ লাখ
শ্রমিককে ঈদ করতে হবে একেবারেই শূন্য হাতে।
ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস
পরিশোধে মালিকপক্ষের উদ্যোগহীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ
করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের
সভাপতি মোশারেফা মিশু বলেন, এমন অনেক
কারখানা রয়েছে যেগুলোতে দু-তিন মাসের বেতন বাকি।
আবার অনেক কারখানার মালিক কৌশল হিসেবে জুন
মাসের বেতন পরিশোধে বিলম্ব করছেন, যাতে জুলাই
মাসের বেতনের জন্য শ্রমিকরা চাপ দিতে না পারেন।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে প্রত্যেক
শ্রমিককে এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ বোনাস
আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে পরিশোধের
দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় শ্রমিক সমাজ
দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিস্থিতির
বর্ণনা দিতে গিয়ে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ
আজিম বলেন, অনেক শ্রমিকই ইতোমধ্যে জুন মাসের
বেতন পেয়েছেন। আর জুলাই মাস যেহেতু শেষ
হয়নি সেহেতু এ জন্য কাউকে চাপ দেয়া যাচ্ছে না। সম্ভব
হলে কোনো মালিক জুলাই মাসের আংশিক বেতন দিতেও
পারেন। আর শ্রমআইনে যেহেতু বোনাস দেয়ার
বাধ্যবাধকতা নেই সেহেতু অতীতের রেওয়াজ
অনুযায়ী যারা পারেন তারা পুরো দেবেন। যারা না পারেন
তারা আংশিক বা থোক বরাদ্দ হিসেবে সাধ্যমতো কিছু
দেবেন। তবে যেসব কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম
কিংবা কয়েক মাসের বেতন বাকি সেগুলোকে বিজিএমইএ-
বিকেএমইএর পক্ষ থেকে যেকোনো মূল্যে শ্রমিকদের
মানিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এ জাতীয় হাজারখানেক কারখানার ওপর
আমরা সরাসরি নজর রাখছি।
এ দিকে শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঈদ
উপলক্ষে ভেতনভাতা নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এমন
প্রায় ৫০০ কারখানার তালিকা করেছে সংস্থাটি। এসব
কারখানার শ্রমিকরা যাতে মিছিল-সমাবেশ
করতে না পারে সে ব্যাপারেও সজাগ রয়েছেন সংস্থার
সদস্যরা। পুলিশের কড়া পাহারা উপেক্ষা করেই
রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের
কোনো না কোনো এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।
এ নিয়ে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ এবং সড়ক
অবরোধের ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতি দিনই। আগামী কয়েক
দিনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ
করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
posted from Bloggeroid