ঢাকা: নতুন অর্থবছরের (২০১৪-১৫) প্রস্তাবিত
বাজেটে মোবাইল ফোন আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ
ভ্যাট বৃদ্ধির ঘোষণায় মোবাইল ফোন
হ্যান্ডসেটের বাজারে শুরু হয়ে গেছে অরাজকতা।
ব্রান্ডগুলোর বিক্রয়
প্রদর্শনী কেন্দ্রগুলোতে বর্ধিত
দামে বিক্রি না হলেও
খুচরা কিংবা পাইকারী বিক্রেতারা সব ধরণের
মোবাইল হ্যান্ডসেটই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
রোববার রাজধানীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মোবাইল
ফোনের বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
তবে ব্র্যান্ড হ্যান্ডসেটগুলোর
মধ্যে নকিয়া থেকে খুব শিগগিরই প্রতিটি মডেলের
হ্যান্ডসেটের জন্য বর্ধিত মূল্যের
ঘোষণা আসতে পারে। চলতি সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিক এ
ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রয়
প্রদর্শনীগুলোর বিক্রয়কর্মীরা।
তবে কোনো ব্র্যান্ডেই আনুষ্ঠানিকভাবে দাম
বৃদ্ধির ঘোষণা না দিলেও বাজেট ঘোষণার পর
রাতারাতি পাল্টে গেছে মোবাইল বাজারের চিত্র।
বিশেষ করে ব্যক্তি মালিকানাধীন
হ্যান্ডসেটগুলোর দোকানে দাম
নিয়ে চলছে অরাজকতা। বাজেটে ভ্যাট বাড়ানোর
ঘোষণার অযুহাতে ক্রেতা বুঝে ইচ্ছেমতো দাম
হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।
অথচ বাজেটে যেখানে আমদানিকৃত সকল ব্র্যান্ডের
মোবাইল হ্যান্ডসেটের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট
আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে মাত্র। নিয়ম
অনুযায়ী আগামী ২৯ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পাস
হলেই কেবল ১৫ শতাংশ ভ্যাট সংযোজন করে বর্ধিত
দামে মোবাইল ফোন হ্যন্ডসেট বিক্রি করার কথা।
এদিকে দেশীয় পণ্য বলে দাবি করলেও
বাজারে থাকা ‘ওয়ালটন’র হ্যান্ডসেটগুলোর
মধ্যে এরই মধ্যে দুটি মডেলের হ্যান্ডসেটের দাম
আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। ওয়ালটনের
বিক্রয় প্রদর্শনীকেন্দ্র ছাড়াও
খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েই মোবাইল
সেটগুলো বিক্রি করছেন।
ওলাটনের মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটগুলোর
মধ্যে ‘প্রিমো জিএইচ২’ মডেলের হ্যান্ডসেটটির
বর্ধিত মূল নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৪৯০
টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের আগে মূল্য ছিল ৯
হাজার ২৯০ টাকা। এছাড়া ‘প্রিমো এইচ৩’ মডেলের
হ্যান্ডসেটটির দাম তিনশ টাকা বাড়িয়ে বর্ধিত
মূল্য করা হয়েছে ১১ হাজার ৭৯০ টাকা।
ওয়ালটনের আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা রাজিব
মাহমুদ সৌরভ বাংলানিউজকে দুটি মডেলের
মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের দাম বাড়ানোর
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা, মোতালেব প্লাজা,
পুরানা পল্টনের বায়তুল ভিউ, বায়তুল মোকাররম
মোবাইল ফোন মার্কেটের
খুচরা এবং পাইকারি বিক্রেতাদের অভিযোগ,
নামিদামি ব্র্যান্ডসহ বাজারের চাইনিজ
ব্র্যান্ডগুলো হ্যান্ডসেট সরবরাহ বন্ধ
করে দিয়েছে। আর এ সুযোগে গায়ের দামের
চেয়ে এক-দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন
খুচরা বিক্রেতারা।
সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে বিক্রেতাদের
বেশি অভিযোগ ‘সিম্ফোনি’ ব্র্যান্ডের উপর। বাজেট
ঘোষণার পরপরই সব ধরনের হ্যান্ডসেট সরবরাহ
বন্ধ রেখেছে জনপ্রিয় এই মোবাইল হ্যান্ডসেট
কোম্পানি। ক্রেতারা তাই
বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন এদের
হ্যান্ডসেট।
পুরানা পল্টনের বায়তুল ভিউ মোবাইল
মার্কেটে অল্প সময়ের মধ্যে আরিফ, সজল নামে দুজন
ক্রেতাকে নির্ধারিত মূল্যের
চেয়ে বেশি দামে সিম্ফোনির মোবাইল ফোনসেট
কিনতে দেখা গেছে।
‘গ্লোবাল ভিউ টেলিকম’ নামের দোকান থেকে আরিফ
সিম্ফোনির ‘এক্সপ্লোরার ডব্লিউ২’ মডেলের
হ্যান্ডসেটটি কিনেছেন চারশ টাকারও
বেশি দিয়ে। এই হ্যান্ডসেটটির নির্ধারিত মূল্য ৩
হাজার ৮৯০ টাকা।
‘এক্সপ্লোরাল ডব্লিউ১২৮’ মডেলের
হ্যান্ডসেটটি কিনতে এসে বাড়তি পাঁচশ দশ
টাকা বেশি গুনতে হয়েছে সজলকে। নির্ধারিত মূল্য
১০ হাজার ৯৯০ টাকা হলেও জেএম মোবাইল হাউজ
থেকে তিনি কিনেছেন ১১ হাজার ৫০০
টাকা দিয়ে।
এদিকে রোববার বিকেলে স্যামসাং-এর কাস্টমার
রিলেশন্স অফিসার এমডি হাফিজুর রহমানের
সাথে ফোনে যোগাযোগ
করা হলে বাংলানিউজকে তিনি জানান, দাম
বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
বরং বাজারে থাকা স্যামসাংয়ের প্রায় সব
হ্যান্ডসেটের মূল্য সম্প্রতি কমানো হয়েছে।
তবে প্রস্তাবিত বাজেট পাস হওয়ার পর দাম
বাড়ানো হতে পারে।
দামি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সনি ব্র্যান্ডের
মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটগুলোর
চাহিদা রয়েছে উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত
ক্রেতাদের মাঝে। বাংলাদেশে সনি ব্র্যান্ডের
মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট পরিবেশক র্যাংগস
ইলেক্ট্রনিকস-এর সেলস মার্কেটিং অফিসার ওমর
ফারুখ জানিয়েছেন, “ফুটবল বিশ্বকাপ পর্যন্ত
বাজারে থাকা তাদের হ্যান্ডসেটগুলোর দাম
বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।”
বাংলাদেশে নকিয়ার সব ধরনের মোবাইল ফোন
হ্যান্ডসেট পরিবেশক প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল
ডিস্ট্রিবিউটর অব নকিয়া ইন বাংলাদেশ-
সিএমপিএল’ এবং ‘এ্যাক্সেল টেলিকম।’
এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের
সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও
মন্তব্যের জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম
প্রকাশ না করার শর্তে উভয় প্রতিষ্ঠান
থেকে জানানো হয়েছে চলতি সপ্তাহেই
নকিয়া মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের দাম
বাড়ানো হতে পারে। ইস্টার্ন প্লাজা, মোতালিব
প্লাজা, তোপখানা রোডের নকিয়ার বিক্রয়
প্রদর্শনীকেন্দ্রের বিক্রয়কর্মীরাও এমনটাই
জানিয়েছেন।
নতুন অর্থবছরের (২০১৪-১৫) প্রস্তাবিত
বাজেটে মোবাইল ফোন আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ
ভ্যাট বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল
মাল আবদুল মুহিত। পাশাপাশি মোবাইল সিমকার্ড
হারিয়ে গেলে তা প্রতিস্থাপনের উপর ১০০
টাকা করের প্রস্তাব দিয়েছেন মন্ত্রী। আগামী ২৯
জুন থেকে এ বাজেট কার্যকর করা হবে।
দেশীয় কোম্পানিগুলোর বিকাশের পথে অসম
প্রতিযোগিতা দূর করতেই আমদানিকৃত মোবাইল
ফোনের উপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের
প্রস্তাব করা হয়েছে বলে বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন
অর্থমন্ত্রী।
বক্তৃতায় তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বেশ কিছু
কোম্পানি উন্নত মানের মোবাইল ফোন উৎপাদন
পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূসক দিচ্ছে। আর
আমদানি পর্যায়ে মোবাইল ফোনের উপর শুধু ১০
শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য ছিল এতদিন।
অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাব ডিজিটাল বাংলাদেশ
গড়ার ক্ষেত্রে ‘অন্তরায়’ বলে মনে করছে মোবাইল
অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল
টেলিকম অপারেটরস ইন বাংলাদেশ (অ্যামটব)।
মোবাইল ফোন আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট
কার্যকরের বিরোধিতা করে এই প্রতিষ্ঠানের
মহাসচিব টি আই নুরুল কবির বলেন, “মোবাইল ফোন
এখন শুধুমাত্র একটি কথা বলার যন্ত্র নয়।
যোগাযোগ থেকে শুরু বিভিন্ন সেবা তৃনমূল
পর্যায়ে পৌছেঁ দেয়া হচ্ছে মোবাইল ফোনের
মাধ্যমে।
কিন্তু কর আরোপ করায় স্বল্প ও নিম্ন আয়ের
মানুষকে মোবাইল ফোন
ব্যবহারে অনাগ্রহী করে তুলবে। যা সরকারের
ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং টেলিডেনসিটি বৃদ্ধির
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে অন্তরায়।”
নুরুল কবির ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার এ
খাতে কোনো প্রণোদনা এখন পর্যন্ত দেয়নি।
সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার
বিষয়টি বিবেচনা না করে উল্টো ভ্যাট আরোপ
করেছে।”
মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটে আমদানি পর্যায়ে ১৫
শতাংশ কর থ্রিজি বিকাশের সময়ে বড় বাধার
সৃষ্টি করবে বলেও মনে করেন তিনি: “উপযুক্ত
হ্যান্ডসেট ব্যবহার ছাড়া থ্রিজি সুবিধা গ্রাহক
পাবেন না। এ কারণে থ্রিজি উপযুক্ত হ্যান্ডসেটের
মূল্য যেন আররো কমে তার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।
অথচ কর বাড়িয়ে এর বিপরীতে অবস্থান
নেওয়া হয়েছে।”
নুরুল কবির সিমকার্ড প্রতিস্থাপনের জন্য ধার্য
১০০ টাকা কর প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।
বিটিআরসির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত এপ্রিল
মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের
সংখ্যা ছিল ১১কোটির বেশি।
posted from Bloggeroid