ডেস্ক: ঋদ্ধিমান সাহার
ব্যাটিং দেখে অনেকেই নিশ্চয়ই
আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন। বুধবার
সানরাইজার্স
হায়দরাবাদেরটা ধরলে আইপিএল
সেভেনে ঋদ্ধির
দু’টো হাফসেঞ্চুরি হয়ে গেল।
টিমে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল-
মিলাররা থাকা সত্ত্বেও ঋদ্ধিমান
এমন খেলল যে, ওকে ছাড়া ম্যান অব
দ্য ম্যাচ কাউকে ভাবা গেল না।
কিন্তু ঋদ্ধির এমন
ব্যাটিং দেখে আমি অন্তত আশ্চর্য
নই।
গত এক-দেড় বছর ধরে ঋদ্ধিমান এ
রকম দুর্দান্ত খেলে চলছে। বাংলার
হয়ে বাদ দিচ্ছি, জাতীয়
পর্যায়ে যেখানে যখন ওকে সুযোগ
দেওয়া হয়েছে নিজেকে প্রমাণ
করে ছেড়েছে। কিন্তু তার পরেও
ওকে দেখতে হয় যে মহেন্দ্র সিংহ
ধোনি চোট পেলে দীনেশ কার্তিক
ইন্ডিয়া টিমের ফ্লাইট ধরছে!
টেস্টে দ্বিতীয় উইকেটকিপার
হিসেবে ও বরাবরের অটোমেটিক
চয়েস। কিন্তু ওয়ান ডে বা টি-
টোয়েন্টিতে ওকে দ্বিতীয়
উইকেটকিপার
হিসেবে ভাবা যাচ্ছে না।
বুধবার ঋদ্ধির ২৬ বলে ৫৪ দেখার পর
আশা করছি জাতীয় নির্বাচকদের
ধারণাটা বদলাবে।
ধোনি না খেললেই কার্তিকদের
ভারতীয় দলের ফ্লাইট ধরাটাও এর
পর বন্ধ হওয়া উচিত। বোধহয় হবেও।
এশিয়া কাপের পরে আমরা দু’জন
জাতীয় নির্বাচকের
সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন
দেখেছিলাম, ওদের মাথাতেও
ঋদ্ধিকে সুযোগ দেওয়ার
কথাটা ঘুরছে।
উইকেটকিপিংয়ে দেশে ওর কোনও
প্রতিদ্বন্দ্বী নেই এই মুহূর্তে। নমন
ওঝা, কার্তিক, পার্থিব পটেল কোনও
তুলনাতেই আসবে না।
সত্যি বলতে বাংলায় গত পঁচিশ-
তিরিশ বছরে ওর পর্যায়ের কোনও
কিপার আসতে আমি দেখিনি। সবাই
জানে, ধোনি টেস্ট থেকে অবসর
নিলে ঋদ্ধি ঢুকবে ওর জায়গায়।
লোকের সন্দেহ ছিল, শুধু ঋদ্ধির
ব্যাটিং নিয়ে। আইপিএল সেভেন ওর
কাছে সে দিক থেকে নিজেকে ভাল
ব্যাটসম্যান-উইকেটকিপার
হিসেবে প্রমাণ করার মঞ্চ ছিল।
পরীক্ষা ছিল। ঋদ্ধি ব্যর্থ, এর পর
কিন্তু কেউ বলতে পারবে না।
একবার ভেবে দেখুন, দুশো রান
তাড়া করতে নেমে যে ও রকম ইনিংস
খেলতে পারে, প্রথম
ছ’ওভারে স্টেইন-ভুবনেশ্বরকুমারদের
ছিঁড়ে ফেলে ম্যাচ শেষ
করে দিতে পারে, তার
মানসিকতাটা কোন জাতের। মানসিক
ভাবে ছেলেটা কতটা কঠিন। ঋদ্ধির
খেলা দেখে কেউ কোনও দিন
বলবে না যে, ওর টেকনিক দুর্দান্ত
দেখাচ্ছে। বা বলবে না, কী সুন্দর
ব্যাট করল ছেলেটা। আমার
মাঝে মাঝে মনে হয়, ও
অনেকটা ধোনি স্টাইলের
ব্যাটসম্যান।
দেখলে ভরসা জাগবে না, কিন্তু
কাজের কাজটা ঠিক
করে দিয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা,
যে কোনও সিচুয়েশনে মাথাটা ও
ঠান্ডা রাখতে পারে। নার্ভ হারায়
না চট করে। তার পর যখন যেমন
দরকার, খেলতে শুরু দেয়।
আপনি ওভারে দশ-পনেরো ওর
কাছে যদি চান, পাবেন। আবার
উইকেটে পড়ে থাকতে বললে, সেটাও
পাবেন। আজ যেমন চালানোর দরকার,
চালিয়েছে। সব ক্লিন হিট মেরেছে।
দু’শো স্ট্রাইকরেট
রেখে আটটা বাউন্ডারি আর
দু’টো ওভার বাউন্ডারি মারাটা খুব
সহজ ব্যাপার নয়।
আমি জানি যে, ঋদ্ধিমান
বাদে বাংলার বাকি ক্রিকেটারদের
পারফরম্যান্স দেখে কেউ কেউ হতাশ
হয়েছেন। লক্ষ্মী, মনোজরা যে রকম
ক্রিকেটার, সেই তুলনায় কিছুই
করতে পারেনি। সব সময় সুযোগও
পায়নি। ঋদ্ধির যেটা প্লাস পয়েন্ট।
নিলামের পরপরই বোঝা গিয়েছিল
যে, পঞ্জাব টিমে একটাই
উইকেটকিপার। সেটা ঋদ্ধি। তাই
ওকে বাদ দিয়ে নামার কোনও
রাস্তা নেই। কিন্তু সবচেয়ে ভাল
ব্যাপারটা হল যে, কিংস ইলেভেন
ম্যানেজমেন্ট ঋদ্ধিকে প্রায়
অর্ধেকের বেশি ম্যাচে তিন
নম্বরে নামিয়েছে। লোয়ার
অর্ডারে ঠেলে দেয়নি। নিলামের
পরপরই আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল
কিংস ইলেভেন কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারের
সঙ্গে। ও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
ঋদ্ধিকে কোথায় খেলানো যায়।
বলেছিলাম, টপ
অর্ডারে নিশ্চিন্তে খেলাতে পারো।
বাঙ্গারকে ধনব্যাদ, ও সেটা করেছে।
ফলও পাচ্ছে। সানরাইজার্স আজ ব্যাট
করে প্রথমে ২০৫ তুলে দিয়েছিল।
ঋদ্ধি-মনন ভোরা (২০ বলে ৪৭) ও রকম
ব্যাট না করলে, ম্যাক্সওয়েলের
পঞ্জাব যে শেষ পর্যন্ত জিততই কেউ
বলতে পারে না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সানরাইজার্স ২০৫-৫ (নমন ৭৯,
ওয়ার্নার ৪৪)
কিংস ইলেভেন ২১১-৪ (ঋদ্ধিমান ৫৪,
ভোরা ৪৭, ভোরা ম্যাক্সওয়েল ৪৩)।
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment