ঢাকা: জঙ্গি ও
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ফের অর্থায়নের
অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ব্যাংকের
বিরুদ্ধে। সামাজিক উন্নয়নমূলক
কাজের আড়ালে সন্ত্রাসী ও
জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন
করছে ব্যাংকটি।
ইসলামি শিক্ষা ও গবেষণা, গরিব ও
মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের
বৃত্তি প্রদান, ইসলামী ব্যাংক
ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্ট
খুলে জাকাত সংগ্রহ করে বিতরণ
এবং শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও
ক্রীড়ায় উদ্বুদ্ধ করার
নামে আড়ালে চলছে এ অর্থায়ন।
২০০১ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এ
খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়
করেছে জামায়াতে ইসলামীর
প্রভাবপুষ্ট বলে পরিচিত
বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটি।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
লিমিটেডের সন্ত্রাসী ও
জঙ্গি কার্যক্রমে অর্থায়ন
বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ
ব্যাংকের তৈরি একটি গোপন
প্রতিবদন থেকে এসব তথ্য
জানা গেছে।
গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক
সূত্র জানিয়েছে,
প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সেন্টার
ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড
পলিসি স্টাডিজ (সিএসপিএস)’ নামক
একটি তথাকথিত
গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ২৩
লাখ ৬০ হাজার টাকা আর্থিক
সহায়তা প্রদান
করেছে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন।
প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ, উদ্দেশ্য
ইত্যাদি বিষয়ে ফাউন্ডেশন
বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় কিছু
কাগজপত্র সরবরাহ করলেও
অর্থগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান এসব
বিষয়ে কোনো তথ্য প্রদান করেনি।
ফলে বরাদ্দকৃত অর্থ
সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান যথার্থ
ব্যবহার
করেছে কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত
হওয়া যায়নি।
এছাড়া দীর্ঘ ১০ বছরে তাদের
গবেষণার ফলাফল বিষয়ে বা তাদের
গবেষণালব্ধ জ্ঞান সমাজে কী অবদান
রেখেছে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য
ফাউন্ডেশন প্রদান করেনি। এ
বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের
পরিদর্শন দল প্রতিষ্ঠানটির
কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য সরবরাহের
জন্য লিখিত অনুরোধ করে।
কিন্তু কোন আইনে বাংলাদেশ ব্যাংক
তাদের কাছে তথ্য চায়
তা জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির
চেয়ারম্যান শাহ আবদুল হান্নান
বাংলাদেশ
ব্যাংকে একটি চিঠি দেন।
চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইট
www.cspsbd.com উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু বর্তামনে এ ওয়েব সাইট
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পরিদর্শন দল বলছে, অন্যান্য
প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন দলকে তথ্য
দিয়ে সহায়তা করলেও ওই প্রতিষ্ঠান
কোনো ধরণের তথ্য
দিয়ে সহায়তা করেনি।
তারা মনে করে, শাহ আবদুল হান্নান
ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনেরও
চেয়ারম্যান হওয়ায়
এক্ষেত্রে তিনি নিজের
প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া ও
তার ব্যবহার পরিদর্শন
দলকে সরজমিনে পরিদর্শন
করতে না দেয়ায় প্রতিষ্ঠানটির
কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র সন্দেহের
সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ
করা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক গুলশান
শাখায় ওই প্রতিষ্ঠানের আল-
ওয়াদিয়াহ্ চলতি হিসাব ০১০০৬৭৫৮
এর হিসাব খোলার ফরম ও
নমুনা স্বাক্ষর কার্ড
থেকে দেখা যায়, মেজর জেনারেল
(অব.) গোলাম কাদের, মোহাম্মদ
ইব্রাহিম, শাহ আবদুল মান্নান, মীর
কাসেম আলী, মেজর জেনারেল (অব.)
আজীজুর রহমান (বীর উত্তম), মেজর
জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম
(বীর প্রতীক) ব্যক্তিগণ বিভিন্ন
সময়ে হিসাব
পরিচালনাকারী হিসেবে ছিলেন।
নমুনা ভিত্তিতে সেন্টার ফর
স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড স্টাডিজের আল-
ওয়াদিয়াহ চলতি হিসাব ০১০০৬৭৫৮
এর কতিপয় চেক পর্যালোচনায়
দেখা গেছে, তারা ওই শাখায়
পরিচালিত সিএসপিএস পেটি ক্যাশ
খাতে অধিকাংশ অর্থ স্থানান্তর
করে সেখান থেকে লেনদেন করেছেন।
এ
বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ
আব্দুল মান্নান বাংলামেইলকে বলেন,
‘এসব বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য
করতে চাই না। তবে বাংলাদেশ
ব্যাংক যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়ার
নির্দেশ দেয় তাহলে ইসলামী ব্যাংক
নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ
করবে।’
জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ ওঠার পর
কয়েকবছর ধরেই আন্তর্জাতিক
চাপে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। একই
অভিযোগে এইচএসবিসি যুক্তরাজ্য,
সিটি ব্যাংক এনএ, ব্যাংক অব
আমেরিকা ইসলামী ব্যাংকের
সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেয়।
ব্যাংকটির মালিকানা কাঠামোয়
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তদন্তাধীন
জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের
নিয়ন্ত্রণ
রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
উল্লেখ্য, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান
চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ
আব্দুজ জাহের মুক্তিযুদ্ধের সময়
চট্টগ্রাম এলাকায় আল বদর বাহিনীর
নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের জন্য বিচারাধীন
জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর
কাশেম আলী ইসলামী ব্যাংকের
সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান।
জামায়াতের কেন্দ্রীয়
নির্বাহী কমিটির এই সদস্য
ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সদস্য
(প্রশাসন)।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক
চেয়ারম্যান শাহ আব্দুল হান্নানও
জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ
হিসেবে পরিচিত।
ব্যাংকটির সাবেক উপ-
ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ
আবদুল্লাহ মো. সালেহ কুমিল্লার
চৌদ্দগ্রামে জামায়াতের সাবেক
সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মো.
তাহেরের ভাই।
ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইটের
তথ্য অনুযায়ী, এর ১৯ জন দেশীয়
‘স্পন্সরের’ মধ্যে আট জন মৃত। তাদের
উত্তরসূরি কারা বা তারা কী করেন-
সে বিষয়ে কোনো তথ্য ব্যাংক
কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি।
Posted via Blogaway
No comments:
Post a Comment